কালের সাক্ষী নাটোরের দীঘাপতিয়া রাজবাড়ী যা উত্তরা গণভবন পর্যটন কেন্দ্রটি এখন ভ্রমণপিপাসুদের আকর্ষণের শীর্ষে। বছরে অন্তত তিন লাখ পর্যটক আসেন ঐতিহাসিক এই রাজবাড়ী ভ্রমণে। গত ৪ বছরে অন্তত চারগুণের বেশি পর্যটক বেড়েছে। তবে তারা অভাব বোধ করেন সহায়কের। গাইড বা সহায়কের ব্যবস্থা না থাকায়, ঐতিহাসিক এ স্থান ঘুরে সঠিক তথ্য জানার সুযোগ পাচ্ছে না আগতরা।
দর্শনের বিনিময়ে প্রবেশের সুযোগ তৈরির পর থেকে, পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে, নাটোরের উত্তরা গণভবনের সুনাম ছড়িয়ে আছে সর্বত্র। দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যশৈলী, পর্যটকদের আকর্ষণের শীর্ষে, ঐতিহাসিক পুরোকৃত্তির স্থাপনা সংবলিত স্থানটি। প্রায় তিন শ’ বছর আগের প্রতিষ্ঠিত হলেও, সময়ের সঙ্গে এখনো এর নির্মাণশৈলী দ্যুতি ছড়ায় সগৌরবে। সময়ের সঙ্গে পর্যটকদের কাছে নির্মল ভ্রমানন্দের জন্য গুরুত্ব বেড়েছে। এতে করে টিকিট বিক্রি থেকে আয়ও বেড়েছে অনেকগুণ। গত চার বছরে আয় বেড়েছে, অন্তত চারগুণের বেশি। জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, টিকিট বিক্রি থেকে ২০-২১ অর্থবছরে ২৪ লাখ ৪৮ হাজার ৭৩০ টাকা, ২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে ৬১ লাখ ৩০ হাজার ৫৪ টাকা, ২২-২৩ অর্থবছরে ৭৭ লাখ ৩৮ হাজার ৭৭৪ টাকা, ২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব খাতে জমার পরিমাণ দাঁড়ায় ৯৭ লাখ ৫১ হাজার ১৬২ টাকা।
চলতি অর্থবছরে জুলাই বিপ্লবের প্রভাব সত্ত্বেও প্রথম তিন মাসের আয় ১৫ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। সে হিসাবে ২৩-২৪ অর্থবছরে উত্তরা গণভবনে পর্যটক প্রবেশ করে তিন লাখের বেশি। চলতি বছর আরও বেশিসংখ্যক পর্যটকের পদচারণা হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই পর্যটন কেন্দ্রে বর্তমানে ১৯ জন কর্মী নিয়োজিত। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে এখানে সহকারী ব্যবস্থাপক, সহকারী হিসাবরক্ষক, টিকিট বিক্রেতা, টিকিট চেকার, মালীসহ ১৯ জন কর্মরত আছেন। অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি মিলে বছরে তিন লাখের বেশি পর্যটকের আগমন ঘটলেও, তাদের জন্য নেই পর্যাপ্ত সুবিধা।
অন্তত ঐতিহাসিক এই নিদর্শন সম্পর্কে জানার সুযোগ একেবারেই সীমিত। এখানে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। নওগাঁ থেকে আসা একদল ভ্রমণপিপাসুর একজন সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘুরে দেখলাম, চমৎকার। তবে জানতে পারলাম না তেমন কিছু! চট্টগ্রাম থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক সুস্মিতা বলেন, ‘অনন্য, অসাধারণ এই গণভবন। তবে জানার সুযোগ কম। গাইড নেই এখানে, গাইডের ব্যবস্থা হলে ভালো হয়।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যাল থেকে পড়াশোনা শেষ করা ওয়ালিউর রহমান তূর্য বলেন, ‘জীবনে প্রথমবার আসা এখানে। ইতিহাস থেকে আমরা যে শিক্ষাগুলো পাই, তার সূতিকাগার হচ্ছে এসব বিভিন্ন হেরিটেজ সাইট। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য, যে বিভিন্ন হেরিটেজ স্থাপনার ইতিহাস গাইডের মাধ্যমে জানানোর ব্যবস্থা করা বা অন্তত তা লিখে জানান হয়। কিন্তু এখানে তা দেখতে পাইনি। ফলে জানা হলো না তেমন কিছু।’
ঘুরতে আসা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী শামসুন নাহার খান তৃষারের কাছে উত্তরা গণভবন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খুবই চমৎকার স্থান এটি, পরিচ্ছন্ন। মন ভালো হয়ে যাওয়ার মতো এলাকা। তবে এখানকার অতীত ইতিহাস সম্পর্কে জানার সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্টরা যেন গাইড বা অন্য কোনোভাবে ইতিহাস তুলে ধরার ব্যবস্থা করেন। এতে করে নাটোর তথা উত্তরা গণভবনে ভ্রমণ অর্থবহ হবে।’ নাটোরের সাংস্কৃতিক কর্মী আব্দুস সালাম বলেন, ‘যে হারে পর্যটক বাড়ছে, তাতে পর্যটকদের এই ঢল ধরে রাখতে, নতুন নতুন সেবা চালু করা প্রয়োজন। বর্তমানে সময়ের দাবি, গাইড বা সহায়কের সংখ্যা বাড়ানো।’ উত্তরা গণভবনের সহকারী ব্যবস্থাপক আবুল বাসার বলেন, ‘সপ্তাহের সাত দিনই খোলা থাকে উত্তরা গণভবন। ছুটির দিনগুলোতে ব্যাপক দর্শনার্থী আসেন। এখানে সীমিত জনবল থাকলেও, পর্যটকদের সাধ্যমতো সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’
উত্তরা গণভবন ব্যবস্থাপনা কমিটি সভাপতি ও জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মাছুদুর রহমান বলেন, ‘উত্তরা গণভবন পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করতে আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ চলমান আছে। প্রশিক্ষিত গাইড নিয়োগে প্রয়োজনী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।’ পর্যটকদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে, পর্যাপ্ত গাইড সুবিধার ব্যবস্থা করা হলে, শিক্ষার্থী, পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসুদের আরও বেশি পদচারণা বাড়বে উত্তরা গণভবনে এবং বাড়বে রাজস্ব আয়।
আপনার মতামত লিখুন :