ঢাকা সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৪

ঘুরে আসুন আর্মেনিয়ান চার্চ

মিনহাজুর রহমান নয়ন

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৪, ০৪:১৭ পিএম

ঘুরে আসুন আর্মেনিয়ান চার্চ

ছবি: ইন্টারনেট

আর্মেনিয়ান চার্চ পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় অবস্থিত। ১৭৮১ সালে নির্মিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী এই গীর্জাটি। আর্মেনীয় বণিক ও ধর্মযাজকদের মাধ্যমে তৈরি হয় এই গির্জা। ১৭৮১ সালে এটি নির্মিত হলেও অনেক বছর আগে জায়গাটিতে ছিল একটি ছোট ঘর যেখানে খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীরা প্রার্থনা করতেন। ব্যবসায়িক প্রয়োজনে অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতকে ঢাকায় আর্মেনীয়রা প্রথম আসতে শুরু করে। আরমানিটোলার এই চার্চে সংরক্ষিত একটি লিফলেটে বলা হয়েছে, আর্মেনীয়দের নিজস্ব চার্চ ও সিমেট্রি তৈরি হওয়ার আগে তারা ঢাকার তেজগাঁওয়ে ১৬৭৭ সালে নির্মিত চার্চ অফ দ্য হোলি রোজারিওতে প্রার্থনা করতেন এবং সেখানে তাদের সমাধিস্থ করা হতো। এখানে একজন আর্মেনিয়ানের প্রাচীনতম কবর রয়েছে। ১৭১৪ সালে লেজার অফ এরিভানের ছেলে খোজাহ এভিয়েটেস লেজার মারা গেলে তাকে তেজগাঁয়ের এই কবরস্থানে সমাধিস্থ করা হয়। এর সমাধিস্থ স্তম্ভে আর্মেনীয় ভাষায় লেখা রয়েছে বিস্তারিত। এই কবর থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে আর্মেনীয়রা প্রায় ৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ঢাকায় বসবাস করছে।

ইতিহাস
১৭৮১ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে গির্জার স্থানটিতে একটি কবরস্থান ছিল। আগা ক্যাটচিক মিনাস (Aga Catchick Minas) গির্জার জন্য এই জমিটি দান করেন। এখন যে জায়গায় গীর্জাটি দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে এক সময় আর্মেনীদের কবরস্থান ছিলো। অনুমান করা যায়, মোগল আমলেই তারা এ দেশে আসতে শুরু করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে ভাগ্যান্বেষণ করা। সেসময় সেটা তারা বেশ ভালোভাবেই করতে পেরেছিলো। বাণিজ্য শেষে অনেকেই ফিরে গেছেন। যারা থেকে গেছেন তাদের মধ্যে আর্মেনীয়রা বেশ উল্লেখযোগ্য।

আর্মেনীয়রা প্রথমে লবণ ব্যবসায়ী হিসেবে এদেশে এসেছিল, কিন্তু পরে তারা পাট, বস্ত্র ও পানের ব্যবসাও করে। আর্মেনীয়রা বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে বসতি স্থাপন করেছিল কারণ এটি দিয়ে সারাদেশে পণ্য পরিবহন করা সুবিধাজনক ছিল। আর্মেনীয়রা যেখানে বসতি স্থাপন করেছিল সেই জায়গাটিকে পূর্বে “আল আবু সাইদ” বলা হত। আর্মেনীয় বসতি গড়ে ওঠার পর তা আরমানিটোলা নামেই পরিচিতি পায়।

ইউরোপীয় স্থাপত্য শৈলীতে তৈরি এই চার্চের মূল দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা যায় হাতের বাঁদিকে একটি কাঠের পেঁচানো সিঁড়ি উঠে গেছে চার্চের ছাদে। চার্চের ডানে নারী ও শিশুদের এবং বাঁ-পাশে পুরুষদের বসার স্থান রেখে পথটি সোজা গিয়ে চার্চের মূল বেদিতে শেষ হয়েছে। সেখানে উঁচু বেদিতে যিশুখ্রিষ্টের কিছু চিত্রকর্ম ও ক্রুশ চিহ্ন আঁকা। কবরস্থানে প্রায় তিন শতাধিক কবর রয়েছে। সবগুলো কবর খুবই বৈচিত্র্যময়। দু-একটি কবর ছাড়া প্রায় প্রতিটি কবরেই শোভা পেয়েছে মার্বেল পাথর। চার্চের সমাধি ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করে, ১৮৭৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হওয়া ক্যাটচিক এভিটিক থমাসের সমাধি। কারণ এর পাশেই শ্বেতপাথরের একটি নারীমূর্তি দাঁড়িয়ে আছে। এটি থমাসের স্ত্রী কলকাতা থেকে এনে এখানে স্থাপন করেছিলেন তার মৃত স্বামীকে উৎসর্গ করে।

আর্মেনিয়ান চার্চে শেষ যাকে সমাধিস্থ করা হয় তার নাম ‘ভেরোনিকা মার্টিন’। ২০০৫ সালের ৭ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ভেরোনিকার স্বামী মাইকেল জোসেফ মার্টিন ১৯৮৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত চার্চের দেখাশোনা করতেন। ২০১৪ সালে যখন তিনি ঢাকা ছেড়েছিলেন, তখন তিনি ঢাকায় একমাত্র আর্মেনিয়ান বংশোদ্ভূত ছিলেন। অবশেষে কানাডায় ১০ এপ্রিল, ২০২০ তারিখে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

যেভাবে যাবেন
রাজধানী ঢাকার যে কোন যায়গা থেকেই বাস, সিএনজি অথবা ব্যক্তিগত গাড়িতে করে পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় অবস্থিত আর্মেনীয় গির্জা তে যাওয়া যায়। গুলিস্থান আসা সুবিধাজনক হলে সেখান থেকে রিক্সায় এই চার্চে যেতে পারবেন।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
আর্মেনিয়ান চার্চ এর কাছেই রয়েছে বেশকিছু দর্শনীয় স্থান হাতে সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন সদরঘাট, আহসান মঞ্জিল, বিউটি বোর্ডিং, বাহাদুর শাহ পার্ক লালবাগ দুর্গ, তারা মসজিদ, শোয়ারী ঘাট সহ আরও অনেক স্থাপনা।
 

আরবি/ আরএফ

Link copied!