ঢাকা বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ঘুরে আসুন শায়েস্তা খাঁর বাসভবনে

আরফান হোসাইন রাফি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪, ০২:০৬ পিএম

ঘুরে আসুন শায়েস্তা খাঁর বাসভবনে

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

মুঘল আমলের একজন বিখ্যাত সুবেদার। যার হাত ধরে ঢাকা পরিণত হয় সমৃদ্ধির নগরীতে। চালের দাম নেমে আসে প্রতি টাকায় আট মণ। সেই বিখ্যাত সুবেদার বা প্রাদেশিক শাসক শায়েস্তা খান; নামটা নতুন করে বলার কিছু নেই! তার খ্যাতি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বাংলার আনাচে-কানাচে। মুঘল শাসনের শ্রেষ্ঠ সময় অতিবাহিত করা এই কিংবদন্তি মুঘল সুবেদারের বাসভবন দেখতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত একটি অসমাপ্ত মুঘল দুর্গনগরীতে। যা জনসাধারণের কাছে লালবাগ কেল্লা হিসাবেই পরিচিত।

তৎকালীন মুঘল সম্রাট আজম শাহের হাত ধরে এই কেল্লার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। যদিও আজম শাহ খুব কম সময়ের জন্যেই মুঘল সম্রাট হিসেবে ছিলেন। তবুও অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি তার এই অসাধারণ কাজটি শুরু করেন। আজম শাহ ছিলেন মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব এর পুত্র আর সম্রাট শাহ জাহানের নাতি; যিনি তাজমহল তৈরির জন্যে বিশ্ব মহলে ব্যাপক সমাদৃত। এ দুর্গ নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার প্রায় এক বছরের মাথায় মারাঠা বিদ্রোহ দমন করার জন্য তাকে দিল্লিতে চলে যেতে হয়। সাময়িকভাবে দুর্গের কাজ বন্ধ হয়ে সৃষ্টি হয় সংশয়ের। কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে তৎকালীন নবাব শায়েস্তা খাঁ পুনরায় লালবাগ কেল্লার নির্মাণ কাজ শুরু করে দেন। পুরো উদ্যমে আবার চলতে থাকে দুর্গ নির্মাণ। তবে শায়েস্তা খাঁ পুনরায় কাজ শুরু করার প্রায় চার বছরের মাথায় দুর্গের নির্মাণ কাজ আবার বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দুর্গটি নির্মাণের কাজ আর শুরু করা হয়নি। যার ফলে অসমাপ্ত মুঘল দুর্গ হিসাবেও এই কেল্লাটি পরিচিত।

এটি মুঘল আমলের বাংলাদেশের একমাত্র ঐতিহাসিক নিদর্শন যেখানে একই সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে কষ্টিপাথর, মার্বেল পাথর আর রঙ-বেরঙের টালি। লালবাগ কেল্লা ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো ঐতিহাসিক নিদর্শনে এমন কিছুর সংমিশ্রণ পাওয়া যায়নি। এই কেল্লার চত্বরে রয়েছে তিনটি স্থাপনা। কেন্দ্রস্থলের দরবার হল ও হাম্মাম খানা, পরীবিবির সমাধি, উত্তর পশ্চিমাংশের শাহী মসজিদ। এ ছাড়াও কেল্লাতে রয়েছে বেশ কয়েকটি ফোয়ারা যা শুধু কোনো বিশেষ দিনে চালু থাকে। লালবাগ কেল্লায় একটি জাদুঘরও রয়েছে যেখানে দেখার মতো মুঘল আমলের বিভিন্ন হাতে আঁকা ছবি; শায়েস্তা খাঁয়ের ব্যবহার্য নানান জিনিসপত্র, তৎকালীন বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র, পোশাক, সেসময়কার প্রচলিত মুদ্রা ইত্যাদি। যা দেখতে প্রায় হাজারো দেশি-বিদেশি দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখরিত হয় ঢাকার লালবাগ এলাকার এই দুর্গটি।  

যেভাবে যাবেন

ঢাকা অথবা বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ঢাকার গুলিস্তান গোলাপ শাহের মাজার আসতে হবে। সেখান থেকে রিকশা অথবা লেগুনাতে করে কেল্লায় যেতে পারবেন। বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে ঢাকার নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, শাহবাগ, টিএসসি অথবা আজিমপুর এসে রিকশায় করে যেতে পারবেন লালবাগ কেল্লায়।

টিকিট প্রাপ্তিস্থান

লালবাগ কেল্লার দরজার ঠিক ডান পাশেই রয়েছে টিকিট কাউন্টার, বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য জনপ্রতি ২০ টাকা, সার্কভুক্ত দেশের জন্য ১০০ এবং বিদেশি পর্যটকদের জন্য ২০০ টাকা । তবে ৫ বছরের নিচে বাচ্চাদের কোনো প্রবেশ মূল্য নেই।

বন্ধ-খোলার সময়সূচি

গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কেল্লা খোলা থাকে। মাঝখানে দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত আধ ঘণ্টার জন্যে বন্ধ থাকে। আর শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শীতকালেও দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত বন্ধ থাকে। আর সবসময়ের জন্যেই শুক্রবারে জুম্মার নামাজের জন্যে সাড়ে বারোটা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিন।
 

আরবি/জেআই

Link copied!