ঢাকা শনিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৪

যেখানে পানির রং গোলাপি

আরফান হোসাইন রাফি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৪, ১১:৪৫ এএম

যেখানে পানির রং গোলাপি

ছবি: সংগৃহীত

পানির রং গোলাপি শুনে নিশ্চয়ই কিছুটা অবাক হয়েছেন? হওয়ারই কথা। পানির রং তো সাদা। তাইতো? না! আসলে পানির রং সাদাও না। বিজ্ঞান বলে, পানি বা জল বর্ণহীন মনে হতে পারে কিন্তু পুরুত্ব বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পানির গাঢ় নীল বর্ণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। পানির নীল রং একটি স্বকীয় বৈশিষ্ট্য যা সাদা আলোর নির্দিষ্ট শোষণ এবং বিক্ষেপণের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। পানিতে দ্রবীভূত নানারকম অবিশুদ্ধ উপাদানের কারণে পানির রঙের ভিন্নতাও  দেখা যেতে পারে। সবই পরিষ্কার; তবে পানির রং গোলাপি  হয় কীভাবে? এমন প্রশ্নেরই হয়তো উত্তর খুঁজছে আপনার মন। কারণ, রহস্যময় এই জগতকে নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই মানুষের। ক্ষণিকের জীবনে তাইতো আফসোস রাখতে চান না ভ্রমণপ্রেমীরা। আপনারও রাখতে হবে না; চলুন জেনে নেই গোলাপি পানির রহস্য।

অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূলে মধ্যদ্বীপের প্রান্তে অবস্থিত একটি লবণাক্ত হ্রদ যার নাম লেক হিলিয়ার। প্রায় ৬০০ মিটার ২ হাজার ফুট দৈর্ঘ্যরে এবং ২৫০ মিটার ৮২০ ফুট প্রস্থের এই হ্রদটি বালির রিম, পেপারবার্ক এবং ইউক্যালিপটাস গাছের ঘন বনভূমি দ্বারা বেষ্টিত। মধ্য দ্বীপের উত্তর উপকূল থেকে এর উত্তর প্রান্তকে আলাদা করে গাছপালা দ্বারা আচ্ছাদিত বালির টিলাগুলোর একটি সরু ফালা। হ্রদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এর গোলাপি, প্রাণবন্ত,স্পন্দনশীল স্থায়ী রং। ধারণা করা হয়, এই জলাশয়ের গোলাপী রঙের কারণ ‘Dunaliella salina’ নামক এক জীবের উপস্থিতি। এই হ্রদের আকর্ষণীয় আরেকটি বিষয় হচ্ছে একপাশে বয়ে চলা অস্ট্রেলিয়ান উপসাগরের কাচের মতো স্বচ্ছ সবুজ-নীল পানি, অন্যপাশে শান্ত গোলাপি রঙের এই অদ্ভুত হ্রদ! হিলার হ্রদের পানি অনেকটা সাধারণ যে কোনো হ্রদের পানির মতোই। পার্থক্য হলো, এখানকার পানিতে বিশেষ ধরনের মাইক্রোব বা অণুজীব বেঁচে থাকতে পারে। বিজ্ঞানীরা এ ধরনের হ্রদের পানিতে পেয়েছেন হ্যালোফিল মাইক্রো-অ্যালজি ধরনের অণুজীব কিংবা হ্যালোব্যাকটেরিয়া। যা সমুদ্রের পানির চেয়েও অতিরিক্ত লবণাক্ত। ১৮০২ সালের ১৫ জানুয়ারি ম্যাথিউ ফ্লিন্ডার্স অভিযানের দ্বারা লেক হিলিয়ার পরিদর্শনের পর থেকে অদ্ভুত এই হ্রদটি হয়ে উঠছে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে একটি আকর্ষণীয় জায়গা। তবে একটি দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, এখানে সাঁতারের কোনো সুযোগ নেই। আশ্চর্যজনক সুন্দর গোলাপি  জলের এই হ্রদটি দেখতে হয় হেলিকপ্টারে চড়ে বা উড়োজাহাজ থেকেই। পাখির চোখে তাই লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত নিয়ম করে হেলিকপ্টার রাইডের ব্যবস্থা রয়েছে পর্যটকদের জন্য।

যেভাবে যাবেন: লেক হিলিয়ারে পৌঁছানোর উপায় খুব কম। এয়ারপ্লেন সিনিক ফ্লাইটগুলো হলো সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি, দিনে ৬টি ফ্লাইট এস্পেরেন্স বিমানবন্দর থেকে প্রস্থান করে, কাছের কেপ লে গ্যার্ন্ড ন্যাশনাল পার্ক হয়ে হিলিয়ার লেকের ওপর দিয়ে উড়ে যায়। বিচ্ছিন্ন হ্রদ এবং আশপাশের বনাঞ্চল পরিদর্শন করতে ইচ্ছুক যাত্রীদের জন্য একটি বিকল্প পদ্ধতি। অথবা এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন হেলিকপ্টার ভাড়া নিয়ে।
 

আরবি/ আরএফ

Link copied!