ঢাকা শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫

শিশুর যত্নে মায়েদের শীতকাল

হিমালয়

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২৫, ০৫:৪২ পিএম

শিশুর যত্নে মায়েদের শীতকাল

ছবি: সংগৃহীত

শীতকাল নতুন মায়েদের জন্য একটি অনন্য চ্যালেঞ্জের সময়। ঠান্ডা আবহাওয়া, শুষ্ক বাতাস, এবং নবজাতকের অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজনÍসব মিলিয়ে এই সময়ে মায়েদের জীবনযাত্রায় আসে নানা পরিবর্তন। সঠিক পরিকল্পনা এবং কিছু কার্যকর অভ্যাস এই সময়ে নতুন মায়েদের জীবনকে অনেক সহজ করে তুলতে পারে।

 

শিশুর যত্ন:

নবজাতকের ত্বক খুবই কোমল এবং শীতে তা আরও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। ঠাণ্ডা থেকে রক্ষা করতে শিশুকে আরামদায়ক ও সুতির মোটা কাপড় পরানো উচিত। উষ্ণতা বজায় রাখতে মাথা ও পা ঢেকে রাখা উচিত। ভেষজ তেল দিয়ে প্রতিদিন ত্বকের মালিশ করা শরীর গরম রাখার পাশাপাশি রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। এছাড়া, শিশুদের ঘরোয়া পরিবেশে রাখতে হলেও পর্যাপ্ত সূর্যের আলোয় নিয়ে যাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 

মায়ের পুষ্টি ও সুস্থতা:

শীতে মায়ের শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা জরুরি। নতুন মায়েদের পুষ্টিকর খাবার যেমন, স্যুপ, গরম দুধ, বাদাম, মৌসুমি ফল এবং শাকসবজি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এছাড়া পুষ্টিকর খাবারের তালিকায় রাখা উচিত মৌসুমি শাক-সবজি, ফল, এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার। আদা-গোলমরিচের চা, মধু, কিংবা ঘি দিয়ে তৈরি খাবার ঠান্ডা প্রতিরোধে সহায়ক।

শীতকালে পানির তৃষ্ণা কমে গেলেও, পর্যাপ্ত পানি পান করার মাধ্যমে শরীর হাইড্রেটেড রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

 

আরামের পোশাক ও ঘরের উষ্ণতা:

শীতে মা ও শিশু উভয়ের জন্য আরামদায়ক এবং স্তরযুক্ত পোশাক নির্বাচন করা উচিত। ভারী পোশাকের বদলে হালকা স্তরযুক্ত কাপড় ব্যবহার করলে তা সহজে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ঘরের তাপমাত্রা স্থিতিশীল রাখা জরুরি, বিশেষ করে রাতে।

 

মানসিক চাপ কমানো ও বিশ্রাম:

নতুন মায়েদের জীবন মানেই ঘুমের অভাব এবং অতিরিক্ত চাপ। শীতে এই মানসিক চাপ আরও বাড়তে পারে। এই সময় পরিবারের সহযোগিতা এবং নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করা জরুরি। অল্প সময়ের মেডিটেশন, বই পড়া বা প্রিয় কাজগুলোর মধ্যে সময় কাটানো মানসিক শান্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে।

 

সংক্রমণ থেকে সতর্কতা:

শীতে নবজাতক এবং মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা দুর্বল থাকে। ফ্লু, সর্দি-কাশি, এবং ভাইরাল ইনফেকশনের প্রকোপ বেড়ে যায়। এ সময় সংক্রমণ বেশি হয় বলে নবজাতককে বাইরে নিয়ে যাওয়ার আগে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। তাই পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের স্বাস্থ্যগত সচেতনতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। ঘর নিয়মিত পরিষ্কার রাখা, শিশুর চারপাশ জীবাণুমুক্ত রাখা এবং প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

শরীরচর্চার গুরুত্ব:

শীতকালীন অলসতা কাটাতে হালকা শরীরচর্চা করা অত্যন্ত উপকারী। তবে কঠোর ব্যায়াম এড়িয়ে চলা উচিত, বিশেষত সদ্য মা হওয়া নারীদের জন্য। এছাড়া শীতকালে রোদে বসা ভিটামিন ডি গ্রহণের জন্য উপযুক্ত।

 

নতুন মায়েদের জন্য পরামর্শ:

১. ঘর গরম রাখার জন্য হিটার ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে শুষ্ক আবহাওয়ার জন্য হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করা ভালো।

২. শিশুকে প্রয়োজনীয় টিকা দিতে অবহেলা করা উচিত নয়।

৩. নিজের প্রতি যত্নশীল হলে শিশুর প্রতি মনোযোগ দেওয়া সহজ হয়।

 

নতুন মা হওয়ার অভিজ্ঞতা একদিকে যেমন আনন্দময়, তেমনি শীতের এই ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় সময়টি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। সঠিক যত্ন এবং জীবনযাত্রার পদ্ধতিতে সামান্য পরিবর্তন এনে শীতকালীন চ্যালেঞ্জ সহজেই মোকাবিলা করা সম্ভব। পরিবারের সহায়তা এবং সচেতন জীবনযাত্রার মাধ্যমে এই মৌসুমকে সুন্দর এবং আনন্দময় করে তুলতে পারেন।

আরবি/ এম এইচ এম

Link copied!