পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীদের সবসময়ই মূল্যহীন ভাবা হতো। তারপর যখন তারা ঘর-সংসার সামলানোর পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করেছে উপার্জনের পথে তখন আবার সৃষ্টি হয় ভিন্ন এক সমস্যার। কর্মজীবী নারীদের শিকার হতে হয় নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির। তাই অনেক পুরুষরা মনে করেন, নারীকে শুধু ঘর-সংসার ও পরিবার দেখাশোনার দায়িত্বেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। তারা বাইরে কাজ করতে গেলে সংসারের প্রতি তাদের মনোযোগ কমে যায়। এমনকি কাজের চাপে সঙ্গী এবং সন্তানদের প্রতি যথাযথ মনোযোগ দিতে পারেন না। আবার কিছু পুরুষেরা মনে করেন, কর্মজীবী নারী নিজেদের কাজ এবং পরিবারের মাঝে সঠিক ভারসাম্য তৈরি করতে সক্ষম। যারা কর্মজীবী নারীদের দিকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে তাকায় তারা নারীদের প্রথাগত নারীত্বের সঙ্গে মিলিয়ে দেখে না এবং তাদের কাজকে অনেক সময় অবমূল্যায়ন করেন।
এ প্রসঙ্গে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলেছেন সংবাদকর্মী শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ঘর-সংসার ঠিক রেখে নারীদের কর্মসংস্থানে বিচরণ করাকে আমি ইতিবাচকভাবেই দেখছি। কেননা বর্তমানে নারীরা পুরুষদের মতো একই পরিশ্রম এবং দক্ষতায় কাজ করতে পারেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের সফলতা যেমন ব্যবসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি, ইত্যাদি খাতে পুরুষদের মধ্যে অনেক সময় প্রশংসা ও শ্রদ্ধার জন্ম নেয়। একদল পুরুষ তাদের পরিবার ও ব্যক্তিগত জীবনে কর্মজীবী নারীর ভূমিকা নিয়ে সমস্যা অনুভব করেন। কিন্ত আমি মনে করি পেশাদার জীবনেও সমানভাবে নারীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করা উচিত। যেসব নারীরা ঘর-সংসার ছেড়ে কর্মসংস্থানে এসেছে তারা নিশ্চয়ই কোনো না কোনো প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছে কিংবা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর দৃঢ় আকাক্সক্ষা থেকে এসেছে। তাই আমাদের নারী অধিকার থেকে হোক কিংবা স্বেচ্ছায় সমর্থন; কর্মজীবী নারীদের ইতিবাচক সমর্থন দেওয়া উচিত। নারী অধিকার নিশ্চিত করতে সবার মধ্যেই পেশাদার জীবনে সমানভাবে নারীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার মনোভাব গড়ে তুলতে হবে।’
ব্যাংকার আফজাল রহমান বলেন, ‘আমি যদি কাজ করি, তাহলে সংসার সামলানোর জন্য আমার স্ত্রীকে ঘরে রাখতে হবে। সন্তানের কথাও ভেবে আমি তাকে বাইরে কাজ করতে দিতে চাই না। আমি তো অর্থের যোগান দিচ্ছিই।’
উন্নয়নকর্মী আহমেদ শাকের বলেন, ‘সময় বদলেছে। এখন অনেক নারী কর্মক্ষেত্রে ভালো করছেন। আমি মনে করি, নারী ও পুরুষ একসঙ্গে কাজ করলে যেমন জেন্ডার ব্যালেন্স হয়; তেমনি কাজে সফলতা আসে। আমাদের উন্নয়ন সংস্থাগুলোতে অনেক নারীই কাজ করছে। যেমন গ্রামে-গঞ্জে কাজ করতে গেলে দেখা যায়, নারীরা আমাদের কাছে অনেক গোপন সমস্যা তুলে ধরতে পারে না। এতে করে সঠিক সমাধান দেওয়া সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে আমাদের একজন নারীকর্মী যখন এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করেন। তখন তারা আসল তথ্য খুঁজে বের করতে পারেন। পাশাপাশি সঠিকভাবে সমাধানের পথও খুঁজে
বের করা যায়।’
মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও সমাজ উন্নয়ন এবং সংসারের দায়িত্ব দুজন মিলে নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বর্তমান সময়ের অনেক পুরুষ। কর্মজীবী নারীরা কেন সমাজে বা কর্মক্ষেত্রে অবহেলিত হবে, কটু কথা শুনবে? এর জন্য দরকার দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো। কথায় আছে ‘দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, জীবন বদলে যাবে’।
আপনার মতামত লিখুন :