প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে গেল জমিদার বাড়িটিকে। এখানে তিনটি জমিদার বাড়ি। আমি এখন গাজীপুরের কালিয়াকৈরের শ্রীফলতলীতে। আমি গাজীপুর থেকে চন্দ্রা হয়ে কালিয়াকৈর নামি এরপর রিকশা নিয়ে শ্রীফলতলীতে যাই। সেখানে একজনকে জিজ্ঞসা করলাম। দেখিয়ে দিল শ্রীফলতলী জমিদার বাড়ি। ধীরে ধীরে এগুতে থাকলাম। সুনসান নীরবতা!!
এখানে জমিদারের উত্তরসূরি আপেল সাহেব পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন নাটক-সিনেমার শুটিং কাজে ব্যবহার করতে দিচ্ছেন। ভেতরে প্রবেশ করলাম আশপাশে দেখলাম। উত্তরসূরিদের একজন বললেন, এই জমিদারির ইতিহাস প্রায় দুইশ’ বছরের। মুঘল বাংলার বিখ্যাত ভূঁইয়াদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ভাওয়াল গাজী। ভাওয়াল গাজীরা চার ভাই ছিলেন; ফজল গাজী, কাশেম গাজী, সেলিম গাজী ও তালেব গাজী। ভাওয়াল গড়ে মূল রাজবাড়ী থাকলেও তালেব গাজী তার বসবাসের জন্য গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার শ্রীফলতলীতে জমিদার বাড়ি নির্মাণ করেন। এটি সেই তালেব গাজীর জমিদার বাড়ি।
বাড়িগুলো দেখে বোঝা যায়, সেকালে জমিদারদের মাঝে এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতা হতো তাদের শানশওকত, বাড়িঘর, পুকুর, স্কুল কলেজ, চিকিৎসালয় নিয়ে। কার বাড়ি কত বড় আর কী তাদের কারুকাজ। ইচ্ছে হচ্ছিল টাইম ট্রাভেল করে ১৮শ’ শতকে চলে যাই। জানতে পেলাম, অন্য বেশিরভাগ জমিদার বাড়ির মতোই এখানেও বলা হয় জমিদারির দুই তরফ। ছোট আর বড় তরফ। বড় তরফের এই বাড়িতে কাঠামোগত কিছু সামান্য সংস্কার চোখে পড়ে। তবে ছোট তরফের বাড়ির গেটে আর বংশ লতিকায় বা এই বাড়ির ইতিহাসে তালেব গাজীর উল্লেখ নেই। এখানে বলা আছে, বিখ্যাত তালিবাবাদ পরগণার নয় আনা অংশের মালিকানা নিয়ে গঠিত হয় শ্রীফলতলী জমিদার এস্টেট। এই এস্টেটের প্রধান কর্ণধার খোদা নেওয়াজ খানের ছোট ছেলে রহিম নেওয়াজ খান চৌধুরীর হাত ধরে এই শ্রীফলতলী জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন ঘটে। জমিদারি পরিচালনায় তিনি তার নিজের কাছারি বাড়ির পাশাপাশি আধারিয়া বাড়ির বাগান বাড়িকে অফিস হিসেবে ব্যবহার করতেন। তার জমিদারির পরিসীমা ময়মনসিংহ, নরসিংদী ও সাটুরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
আশপাশে কথা বলে জানতে পারি, জমিদার যখন এই বাড়ি ছেড়ে চলে যান তখন যে সমস্ত অলংকার এবং মূল্যবান জিনিসপত্র সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারেননি। বাড়ির বিভিন্ন দেয়ালে, মেঝেতে পুঁতে প্লাস্টার করে দেন এবং ঘরের আসবাবসহ বিভিন্ন জিনিস ঘরে রেখেই তালা লাগিয়ে চলে যান। পরবর্তীতে অনেকেই সেগুলো খোঁজার চেষ্টা করে সফল হতে পারেনি। অনেকেই বলে, সেসব সোনা জহরত নাকি বড় বড় সাপ পাহারা দেয়!! রাতে শোনা যায় বিভিন্ন ভৌতিক শব্দ!! পূর্বপুরুষদের আত্মা তাদের হীরা-জহরত পাহারা দেয়। আমি অবশ্য বিশ্বাস করি, এসব কথার ভিত্তি নেই। তবে অতি প্রাকৃতিক ঘটনা অনেক জায়গায় ঘটে।
প্রতিটি জমিদার বাড়িতে অনেক ধরনের গল্প থাকে। আবার প্রাসাদ ষড়যন্ত্র বলে একটা শব্দ আছে সেটাও থাকে। এই শ্রীফলতলী জমিদার বাড়িও তা থেকে কম নয় এরও অনেক ইতিহাস চাপা পরে বলে জানান দেয় এই ইমারতগুলো। কল্পকথা আর লোকমুখের প্রচলিত গল্পের বাইরে এই জমিদার বাড়ির অলঙ্করণ আর শৈল্পিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে যে কাউকেই। অনেকে হয়ত খোঁজে হীরা-জহরত। আমি খুঁজতে থাকি ইতিহাসের ভেতর লুকিয়ে থাকা গল্প; যেখানে রয়েছে রহস্য।
আপনার মতামত লিখুন :