আজকে আমি (জহির) বের হলাম ঢাকার আশপাশে ঘুরতে। চলে আসলাম ঢাকার খুব কাছে মায়াদ্বীপে। নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলার বারদী ইউনিয়নের নুনেরটেক গ্রামে এর অবস্থান। নামের মতোই এই গ্রাম মায়া ছড়ানো সুন্দর। এই দ্বীপে যখন পৌঁছালাম তখন কেমন যেন একটা মায়া ধরা শুরু করে দিল। আশপাশে কথা বলে জানতে পারি আজ থেকে প্রায় শত বছর আগে মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠে এই মায়াদ্বীপ। তখন ছিল বারোভুঁইয়াদের শাসনকাল। বিভিন্ন সময়ের প্রভাবশালীরা এই এলাকার নাম পরিবর্তন করেছিলেন। স্থানীয়দের কাছে এ দ্বীপ নুনেরটেক নামেই বেশি পরিচিত। সোনারগাঁ উপজেলার বারদী ইউনিয়নের অন্তর্গত একটি ছোট্ট ত্রিভুজাকার দ্বীপের নাম হলো মায়াদ্বীপ। ঢাকা থেকে এই দ্বীপের দূরত্ব মাত্র ৩৯.২ কিলোমিটার। বারদী ইউনিয়নের মূল ভূখণ্ড থেকে দ্বীপটি ৪-৫ কিলোমিটার দূরত্ব নিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। মেঘনা নদীর বুকে আনুমানিক এক শতাধিক বছর আগে এই দ্বীপটি জোগে ওঠে।
জহির মায়াদ্বীপের দৃশ্য উপভোগ করার চেষ্টা করল। সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও বেশ মনোরম। আর এ কারণেই প্রকৃতির টানে দূর-দূরান্ত থেকে বহু পর্যটক ছুটে আসেন এই দ্বীপে। কেমন জানি একটা শীতলতা এখানে। আবার একটা গ্রাম গ্রাম পরিবেশ। অনেক খোলামেলাও বটে। বর্ষাকালে হারিয়ে যায় এই মায়াদ্বীপ অর্থাৎ দ্বীপটি পানিতে তলিয়ে যায়, ব্যাপরটা খুব মজার। তবে বর্ষা শেষে পানি শুকাতেই আবারও ভেসে ওঠে মায়াদ্বীপ। মেঘনার বুকে ভেসে থাকা এই দ্বীপ ভ্রমণের সেরা সময় এখনই অর্থাৎ শীতকাল।
জহির ফকির কিছুক্ষণ মায়াদ্বীপে বিচরণ করল। সবুজ প্রকৃতি, সবজি খেত, বিশাল মেঘনা নদী আর নদীর পাড়ের জীবন এটায় মায়াদ্বীপের সৌন্দর্য। সাধারণ গ্রাম্য জীবনের মায়া দেখে বেড়ালাম এই মায়াদ্বীপে। মায়াদ্বীপের বালুচরে অনেক্ষণ ধরে হাঁটছিলাম মনে হলো, কোনো এক শান্ত সমুদ্রসৈকতের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। নেই কোনো জনকোলাহল, গাড়ির হর্ন, মেশিনের ঘটঘট শব্দ। শুধু একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে ছিলাম খোলা প্রকৃতির দিকে। মাঝে মাঝে ছোট বাচ্চারা কই থেকে যেন আবার আসে আবার চলে যায়। কেমন জানি একটা লুকোচুরি খেলার মতো। আমি অনেক্ষণ তাদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কোনো চিন্তা নেই কাজ নেই ছুটে বেড়াচ্ছে বাধাহীনভাবে, এই স্বাধীনতা অনেকেই হারিয়ে ফেলেছে। মায়াদ্বীপে তেমন কোনো স্থাপনা গড়ে ওঠেনি, হয়তো যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে।
নৌকা নিয়ে মেঘনার বুকে ভেসে বেড়ালাম কিছুক্ষণ, মায়াদ্বীপের পুরো সৌন্দর্য উপভোগ করার চেষ্টা করলাম। নদীর সুবিশাল ঢেউগুলো আমাদের ছোট নৌকাটিকে দোলা দিল তখন এক অন্যরকম রোমাঞ্চকর অনুভূতি পেলাম। পাশেয় দেখা গেল গাঙচিল আর সাদা বকের সারি। একটু পর পর নদীর পাড়ে জেলে দেখা যাচ্ছে। অনেকেই দেখলাম আবার ফুটবল খেলছে। বালুচর ধরে নদীর তীরে সাঁতার কাটতে দেখলাম অনেকজনকে, আমি সাঁতার পারি না বলে শুধু দেখলাম। পুরা দ্বীপটা খুব বেশি বড় না হওয়ায় একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ঘুরলাম খুব বেশি সময় লাগেনি। এক পাশে ছোট ছোট কয়েকটি বাড়িঘর মিলে একটি গ্রাম আর অন্যপ্রান্তে খোলা চর। আর চারদিকে শুধু অথৈ পানির সমারোহ। জহিরের মনে হলো অজানা কোনো এক সাগরের বুকে ভেসে চলেছে সে।
আপনার মতামত লিখুন :