ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

স্বৈরাচারের দোসর চিকিৎসকদের বিএমডিসি নিবন্ধন বাতিলসহ ১০ দাবি উত্থাপন

মঈন মাহমুদ

প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২৪, ০৫:৫২ পিএম

স্বৈরাচারের দোসর চিকিৎসকদের বিএমডিসি নিবন্ধন বাতিলসহ ১০ দাবি উত্থাপন

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত ছাত্র-জনতাকে চিকিৎসাসেবা দিতে অস্বীকার ও বাধা প্রদানকারী স্বৈরাচারের দোসর চিকিৎসকদের বিএমডিসি নিবন্ধন বাতিলসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষক-চিকিৎসক, কর্মকর্তা-নার্স ও কর্মচারী ঐক্য পরিষদের নেতারা।

তাদের দাবি, গণ-অভ্যুত্থানের তৎকালীন প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে সাবেক উপাচার্যের একান্ত সচিব ও সাবেক প্রক্টরের নেতৃত্বে একদল আওয়ামী সন্ত্রাসী শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মচারী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করে। দ্রুততম সময়ে তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) ২০২৪ইং তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শহীদ ডা. মিলন হলে বৈষম্য বিরোধী শিক্ষক-চিকিৎসক, কর্মকর্তা-নার্স ও কর্মচারী ঐক্য পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বৈষম্য বিরোধী শিক্ষক-চিকিৎসক, কর্মকর্তা-নার্স ও কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও বিএসএমএমইউ‍‍`র অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার-১ ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন টিটো। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঐক্য পরিষদের সধারণ সম্পাদক ডা. মো. রুহুল কুদ্দুস (বিপ্লব)।

সংবাদ সম্মেলনে বিএসএমএমইউ‍‍`র প্রক্টর ও ঐক্য পরিষদের উপদেষ্টা ডা. শেখ ফরহাদ, উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মওদুদুল হক, উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোঃ আতিয়ার রহমান, উপদেষ্টা ডা. এরফানুল হক সিদ্দিকী, উপদেষ্টা ডা. আতিয়ার রহমান, উপদেষ্টা ডা. শহিদুল ইসলাম, উপদেষ্টা ডা. মো. শাহিদুল হাসান বাবুল, সহ-সভাপতি ডা. একে আল মিরাজ, যুগ্ম-সম্পাদক ডা.একেএম কবির আহমেদ রিয়াজ, যুগ্ম-সম্পাদক ও অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ রেজিস্ট্রার সাবিনা ইয়াসমিন, উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. ইয়াহিয়া খাঁন, উপ পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মোঃ মশিউর রহমান কাজল, ডা. আকবর হোসাইন, দপ্তর সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল প্রমুখসহ ঐক্য পরিষদ ও ড্যাাব, বিএসএমএমইউ শাখার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সাংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে যে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজন প্রীতি ও শিক্ষক, কর্মকর্তা, নার্স এবং কর্মচারীদের সাথে যে ধরনের অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্য হয়েছে, তা নজিরবিহীন। তবে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফ্যাসিষ্ট হাসিনা সরকারের পলায়নের পর আমরা নতুন এক স্বাধীনতা অর্জন করেছি। বক্তারা বলেন, বিগত ১৬ বছর ফ্যাসিষ্ট হাসিনা সরকার এদেশে একটি মাফিয়া শাসন কায়েম করেছিল। মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিল। মানুষের গণতান্ত্রিক অধীকার, ব্যক্তি ও বাক স্বাধীনতা এবং সাংবাদিকদের প্রকৃত সংবাদ প্রকাশের স্বাধীনতা হরণের মধ্য দিয়ে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছিল। তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মচারীবৃন্দ।

সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ডা. শেখ ফরহাদ বলেন, জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনের সময় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থানরত প্রশাসনের আওয়ামী দোসররা আহত ছাত্র-জনতার চিকিৎসা প্রদানে বাধা প্রদানসহ পুলিশি হয়রানি করা হয়েছে।

গত ৩ আগস্টে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সি-ব্লকের সামনে চিকিৎসকের অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে ২ জনকে রক্তাক্ত করা হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ঠা আগস্টে জ্বালাও পোড়াও এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে কোটি কোটি টাকার সরকারী সম্পদ নষ্ট করা হয়েছে।

এসব ঘটনায় বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। শিগগিরই সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আমরা প্রকাশ করবো এবং দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যাবস্থা আমরা নিবো।

তিনি বলেন, বিগত ১৬ বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। সুপার স্পেশালাইজড হাসাপতাল প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা কনভেনশন সেন্টার নির্মানে ভয়াবহ দুর্নীতির করা হয়েছে ফলে আজ তা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

২০০৬ সালের পূর্বে নিয়োগকৃত শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্স ও কর্মচারীদের যে হয়রানী, চাকুরী চ্যুতি, পদাবনতি ও উচ্চ শিক্ষা অর্জনের বাধা প্রদান এবং বৈষম্যের মাধ্যমে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। এসবের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহত এই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, চিকিৎসা ও গবেষণাকে ধ্বংস করা হয়েছে।

২ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মিটিং রয়েছে, সেই মিটিং থেকে আশা করছি ভালো কিছু সিদ্ধান্ত আসবে, যার মাধ্যমে একদিকে স্বৈরাচারের দোসরদের বিচারের মুখোমুখি করা প্রক্রিয়া শুরু হবে, অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আবারও শিক্ষা-চিকিৎসায় হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!