ঢাকা বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০২৫

রমজানে কীভাবে খাবার খাবেন

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ১৯, ২০২৫, ১০:৫০ এএম

ইফতারের পর অল্প সময়ের মধ্যে অনেকেই যথেষ্ট পরিমাণে খাবার খেয়ে ফেলেন, যার বেশিরভাগ হয়ে থাকে মাত্রাতিরিক্ত ক্যালরি সম্পূর্ণ ও তৈলাক্ত। অধিকন্তু রমজান মাসে আসুন জেনে নেই রমজানে আমাদের কীভাবে খাবার খেতে হবে সে সম্পর্কে জরুরি কিছু প্রশ্নের উত্তর। জানাচ্ছেন সানজানা হাসান শামা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগ।

রমজান একটি মাহাত্ম্যপূর্ণ মাসের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। এ মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা রোজা, নামাজ, সদকা, ফিতরা, জাকাত, দান খয়রাতের মাধ্যমে আরও বেশি ইবাদত বন্দেগিতে মনোনিবেশ করে থাকেন। হাটে ঘাটে, বাজারে, অফিস-আদালত ও অন্যান্য জনবহুল স্থানে প্রকাশ্যে পানাহার বন্ধ রাখাসহ মানুষের আচরণগত অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।

রমজান মাসে খাদ্য গ্রহণের ব্যাপারে মুসলমানেরা অনেক বেশি উদার বা উদাসীন মনোভাবের পরিচয় দিয়ে থাকেন। তবে স্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কে আমরা একটু বেশিই উদাসীন। স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখতে তাই আমাদের প্রয়োজন, আমরা যা খাচ্ছি তার প্রতি সচেতনা।

আর এর জন্য রমজানে সুস্থ থাকার উপায় জানার আগে আসুন নিচের উপকারী প্রশ্নের উত্তরগুলো জেনে নেই-

প্রশ্ন: সারাদিন রোজা রাখার পর কি যত ইচ্ছা তত খাওয়া যাবে?
উত্তর: না। অনেকেই মনে করেন রমজানে আমরা যত খুশি খাওয়া দাওয়া করব, এতে দোষের কিছু নেই। এটা একটা ভ্রান্ত ধারণা। কারণ, খাদ্য এমন একটি বিষয় যা সব সময় একইভাবে কার্যকর ভ‚মিকা পালন করে। তাই রমজান মাসেও আপনি বেশি পরিমাণে খাদ্যগ্রহণ করলে মোটা বা স্থূলাকায় হবেন এটাই স্বাভাবিক।

বেশি করে কার্বোহাইড্রেট বা চিনি-মিষ্টি খেলে অবশ্যই আমাদের ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত হবে এবং ওজন বাড়বে। অতিরিক্ত তেল-চর্বি জাতীয় খাদ্য গ্রহণেও আপনার ওজন বাড়বে এবং রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়বে এটাও অবধারিত।

তাই রমজান মাসে সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে অত্যাধিক চিনিযুক্ত খাবার ও অতিমাত্রায় তেল-চর্বি জাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে। অবশ্যই অতিভোজন থেকে বিরত থাকবেন। তা না হলে আপনি এক মাসে যে পরিমাণ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বেন, তা সারাতে অনেক মাস লেগে যাবে।

প্রশ্ন: রমজান মাসে সুষম খাদ্য কীভাবে বজায় রাখব?
উত্তর: রমজানেও সুষম খাদ্য (ব্যালান্সড ডায়েট) গ্রহণ করতে ভুলবেন না। সুষম খাদ্য বলতে এমন এক ধরনের খাদ্যকে বোঝায় যাতে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপাদান সঠিক মাত্রায় বিদ্যমান থাকবে, যেমন- কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার ও পানি।

কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে রমজান মাসে ভাত, মাছ, সবজি, ফলমূল ইত্যাদি বাদ দিয়ে, যদি পোলাও, বিরিয়ানি, তেহারি, কাচ্চি, ভাজাপোড়া খাবার, মিষ্টি, খিচুড়ি, ফিরনি, পায়েস ও মন্ডা মিঠাই, ফাস্টফুড ইত্যাদি খাদ্যের প্রতি বেশি ঝুঁকে যান, তবে শাক-সবজি, ফলমূল, ভাত-রুটি ও ফাইবার জাতীয় খাদ্য গ্রহণের মাত্রা কমে গিয়ে, সুষম খাদ্যগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হওয়ার ফলে আপনার স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যাবে।

তার মানে এই নয়, রমজানে আপনি ইফতারের মজাদার খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন। তবে এসব মজাদার খাদ্য অবশ্যই স্বল্প মাত্রায় গ্রহণ করবেন এবং রাতের খাবার ও সাহরিতে প্রয়োজনীয় শাক-সবজি, ফলমূল, মাছ-ভাত অবশ্যই পরিমিত পরিমাণে খাবেন।

প্রশ্ন: সময়মতো সাহরি ও ইফতার না করা কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?

উত্তর: হ্যাঁ। অনেক সময় অসাবধানতা ও উদাসীনতার কারণে অনেকেই সাহরি না খেয়েই রোজা পালন করে থাকেন; এটা উচিত নয়। কারণ, এতে একদিকে যেমন সাহরি সুন্নতের সওয়াব ও বরকত থেকে বঞ্চিত হতে হয়, অপরদিকে এটি স্বাস্থ্যহানিকর এবং কর্তব্য কর্ম আমল ও ইবাদত সম্পাদনে অন্তরায় হতে পারে।

অনুরূপ কেউ কেউ যথাসময়ে ইফতার গ্রহণেও অলসতা করেন। এতেও ইফতারের সুন্নতের সওয়াব না পাওয়া এবং ইবাদতে বিঘ্ন ঘটাও অসুস্থতার কারণ ঘটতে পারে।
প্রশ্ন: কাজকর্ম ও ইবাদতের কথা চিন্তা করে কীভাবে খাওয়া উচিত?

উত্তর: সাহরিতে এমন খাবার গ্রহণ করা উচিত যাতে রোজা পালন সহজ হয় এবং ইবাদতের অসুবিধা না ঘটে। ইফতারেও এমন খাবার গ্রহণ করা উচিত যাতে স্বাস্থ্য রক্ষা হয় এবং রাতে তারাবির নামাজ, তাহাজ্জুদ নামাজ ও অন্যান্য ইবাদতের সহায়ক হয়। একসঙ্গে বেশি পরিমাণে খাবার গ্রহণ না করে রাতে বারবার অল্প অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। ইফতারের পর থেকে সাহরি পর্যন্ত পানি ও তরল খাবার বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।

প্রশ্ন: রমজানে ঘুম ও ব্যায়াম কিরূপ হওয়া উচিত?

উত্তর: এ মাসে রোজা রাখার ফলে অনেকেই কাজ-কর্ম কমিয়ে, ঘুমের পরিমাণ বাড়িয়ে ফেলেন এবং অনেকেই নিয়মিত হাঁটা বা ব্যায়াম থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলেন। এটা মোটেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। রোজার সময় প্রত্যেক ব্যক্তি তার কর্মতৎপরতা বজায় রেখে রোজা পালন করবেন। তবে হাঁটা ও ব্যায়ামের সময়সূচি পরিবর্তন করে নিতে পারেন। তবে অতিরিক্ত কোনো ব্যায়াম করা যাবে না। হাঁটাহাঁটি ও হালকা ব্যায়াম করার সময়, যদি মাথা হালকা বোধ করা বা মাথা ঘোরার উপক্রম হয়, তবে হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম বন্ধ করে দিতে হবে।