মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল, ২০২৫

এইচআইভি তহবিলের কাটছাঁট হলে প্রায় ৩ মিলিয়ন অতিরিক্ত মৃত্যু

স্বাস্থ্য ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ২৭, ২০২৫, ০২:০৯ পিএম

এইচআইভি তহবিলের কাটছাঁট হলে প্রায় ৩ মিলিয়ন অতিরিক্ত মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক এইচআইভি (HIV) তহবিল কমিয়ে দিলে ২০২৫ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ১০.৮ মিলিয়ন অতিরিক্ত সংক্রমণ এবং ২.৯ মিলিয়ন অতিরিক্ত মৃত্যু হতে পারে।

গবেষণাটি ২৬ মার্চ দ্য ল্যান্সেট এইচআইভি (he Lancet HIV) জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।  

বর্তমান পরিস্থিতি: নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলো (LMICs) তাদের এইচআইভি প্রোগ্রামের ৪০% তহবিল আন্তর্জাতিক উৎস থেকে পেয়ে থাকে। শীর্ষ ৫ দাতা দেশ (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি এবং নেদারল্যান্ডস) ইতোমধ্যে এইচআইভি তহবিল কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র একাই ৭২% আন্তর্জাতিক এইচআইভি সহায়তা প্রদান করে, যার অধিকাংশ আসে পেপফার (PEPFAR- President’s Emergency Plan for AIDS Relief) কর্মসূচির মাধ্যমে।  

সম্ভাব্য প্রভাব: 

  • ২০২৬ সালের মধ্যে সংক্রমণের হার ২০১০ সালের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে।
  • ২০৩০ সালের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে।
  • পেপফার পুরোপুরি বন্ধ হলে, গত দুই দশকের অগ্রগতি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

কেন পেপফার (PEPFAR) গুরুত্বপূর্ণ?

এর তহবিলে এইডস রোগীদের জন্য অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি (ART) প্রদান করা হয়, যা এইচআইভির বিস্তার কমায়।  
আর্ট (ART) থেরাপি বাধাগ্রস্ত হলে এইচআইভি দ্রুত এইডসে রূপান্তরিত হবে এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে।  
পেপফারের পরিষেবা বন্ধ থাকলে বিশেষত সাব-সাহারান আফ্রিকায় ব্যাপক প্রভাব পড়বে, কারণ ওই অঞ্চলের ছয়টি দেশে এই তহবিল ৪০% এর বেশি।

গবেষকরা সতর্ক করেন, ‘এই তহবিল হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলে, কয়েক দশকের অগ্রগতি হারিয়ে যাবে এবং লাখ লাখ জীবন ঝুঁকিতে পড়বে।’

ভবিষ্যৎ দৃশ্যপট: তিনটি সম্ভাব্য পরিণতি

স্ট্যাটাস কুয়ো (বর্তমান অবস্থা বজায় রাখা)
- ২০২৫-২০৩০ সালে ১.৮ মিলিয়ন নতুন সংক্রমণ ও ৭২০,০০০ মৃত্যু হবে।  
- এটি বর্তমান তহবিল অব্যাহত থাকলে ঘটবে।  

সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি (পেপফার স্থায়ীভাবে বন্ধ হলে)  
- ১০.৮ মিলিয়ন নতুন সংক্রমণ হবে।  
- ২.৯ মিলিয়ন অতিরিক্ত মৃত্যু হবে। 
- ২০০০ সালের পর যে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছিল, তা এক ধাক্কায় বিলুপ্ত হয়ে যাবে।  

তহবিলের ঘাটতি পূরণ করা গেলে
- ৪.৪ মিলিয়ন অতিরিক্ত সংক্রমণ ও ৭৭০,০০০ অতিরিক্ত মৃত্যু হবে।
- যদি ২০২৭ সালের মধ্যে বিকল্প তহবিল পাওয়া যায়, তবে পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হতে পারে।  

সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কারা হবে?

  • সাব-সাহারান আফ্রিকা: শিশুরা তিন গুণ বেশি সংক্রমিত হতে পারে।  
  • ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী: যৌনকর্মী, সমকামী পুরুষ, ট্রান্সজেন্ডার ও মাদক গ্রহণকারীদের মধ্যে ছয় গুণ বেশি সংক্রমণের আশঙ্কা।  
  • বিশ্বব্যাপী লক্ষ্যমাত্রা: UNAIDS ২০৩০ সালের মধ্যে এইডস নির্মূলের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল, কিন্তু এখন তা ২০৩৬-এর আগে সম্ভব নয়।

এখন কী করা দরকার?

  • পেপফারের পুনর্বহাল করা জরুরি।
  • নতুন তহবিল উৎস খুঁজতে হবে।
  • এইডস ও HIV পর্যবেক্ষণ এবং প্রতিরোধ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
  • বিকল্প অর্থায়নের পরিকল্পনা থাকা উচিত, যেন হঠাৎ করে কোনো কর্মসূচি বন্ধ না হয়।

ড. ক্যাথরিন হ্যাঙ্কিন্স (McGill University) বলেন, ‘এইডসের বিরুদ্ধে লড়াই থামিয়ে দিলে কোটি কোটি মানুষের জীবন ঝুঁকিতে পড়বে। এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।’

সূত্র: লাইভ সাইন্স

আরবি/এসএস

Link copied!