ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

ঢামেকে আবারও সফলভাবে আলাদা করা হলো জোড়া লাগানো শিশু

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪, ০৬:২৪ পিএম

ঢামেকে আবারও সফলভাবে আলাদা করা হলো জোড়া লাগানো শিশু

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আবারও সফলভাবে আলাদা করা হলো জোড়া লাগানো শিশু। কয়েকটি বিভাগের ৮০ জন চিকিৎসক ১০ ঘণ্টাব্যাপী অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশু দুটিকে আলাদা করা হয়।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে শিশু দুটি আলাদা বিষয়ে সাংবাদিকদের জানানো হয়।

ঢামেক হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাহনুর ইসলাম জানান, চলতি মাসের ১৪ জুন বরগুনার বেতাগী থেকে আসা মাহমুদা বুক ও পেট জোড়া লাগানো শিশু দুটিকে নিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ২১ জুন হাসপাতালে ৫ নম্বর ইউনিটে ভর্তি হয়। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এক মাস পর আসতে বলা হয়। এক মাস পর ভর্তি করা হয় এবং পরীক্ষা নিরীক্ষার শেষ করে পুষ্টিজনিত সমস্যা সমাধান দিয়ে এক মাস পর পুনরায় দেখা করতে বলা হয়। এবং ছয় মাস পর অপারেশনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এবং ভর্তির পর তাদের কয়েক দফা অস্ত্রোপচার হয়।

ডা. সাহনুর আরও বলেন, গত (৭ সেপ্টেম্বর) দশ ঘণ্টাব্যাপী সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পৃথক করা হয়। পরে দুজনকে আইসিইউতে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস (ভেন্টিলেটর যন্ত্র দিয়ে রাখা হয়। ৮ সেপ্টেম্বর রিফাকে ও ৯ সেপ্টেম্বর শিফাকে ভেন্টিলেটর মুক্ত করা হয়। এর মধ্যে রিফা সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলেও শিফা অসুস্থ ছিল। তার হার্টে সমস্যা দেখা দেয়। তাকে হার্ট ফাউন্ডেশনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে শিফার পিত্তনালীর সংযোগ খুলে যাওয়ায় আবার অস্ত্রোপচার করা হয়। শিফা বর্তমানে আইসিইউতে আছে। ওদের চিকিৎসার খরচ বহন করেছে ঢামেক হাসপাতালের সমাজ সেবা দপ্তর, আকিজ গ্রুপ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ, জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউট, বিএসএমএমইউ, বারডেম, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন, ল্যাবরেটরি মেডিসিন, এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক ও তার বাবা মা।

ডা. সাহনুর বলেন, অর্থায়ন, জন্মগত ত্রুটিগুলো শনাক্তকরণ, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা, অপারেশনের জন্য প্রস্তুতি। কখনো কখনো এমন অবস্থা পড়তে হয় দুজনের কাউকে রক্ষা করা যায় না। কখনো একজনকে রক্ষা করা সম্ভব হয়, শিফার সমস্যা গুলো ছিল জন্মগত হৃদ্‌রোগ। হৃৎপিণ্ডের পর্দা শেয়ারিং, যকৃৎ শেয়ারিং সাধারণ যকৃৎ নালি, পোর্টাল শিরা, ডিওডেনাম, ম্যালরোটেশান আর রিফার ছিল হৃৎপিণ্ডের পর্দা, যকৃৎ, কমন যকৃৎ, পোর্টাল শিরা, ডিওডেনাম শেয়ারিং। এমন অবস্থায় অস্ত্রোপচার পরবর্তী ফলাফল ভালো ছিল। ওরা ভালো থাকুক সকলের প্রচেষ্টায়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। ১৫ জুলাই থেকে যুদ্ধের মধ্যে ছিলাম। এর মধ্যে ডা. সাহনুর এই শিশুদের জন্য দৌড়েছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লম্বা সময় নিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানান।

শিশুদের বাবা বাদশা হাওলাদার বলেন, হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে চিকিৎসকসহ সকলের সহযোগিতা পেয়েছি। সবার কাছ থেকে আর্থিকভাবে হেল্প পাইছি। হাসপাতালের পরিচালক স্যারসহ সব ম্যাডাম স্যারদের কাছে কৃতজ্ঞ।

বাদশা মাহমুদার বাড়ি বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলায়। গত বছরের ৭ জুন সিজিরিয়ানের মাধ্যমে জোড়া বাচ্চার জন্ম দেয় মাহমুদা। এর আগে তাদের ঘরে ছয় বছরের এক কন্যা সন্তান রয়েছে।

এর আগে, ২০১৭ সালে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ তোহা-তৌফা ও ২০১৮ সালে পাবনার রাবেয়া-রোকাইয়াকে ও ২০২২ সালে নীলফামারীর জলঢাকার জোড়া লাগানো যমজ শিশু লাবিবা-লামিসাকে আলাদা করেন ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকেরা।

আরবি/ এইচএম

Link copied!