আমরা যখন ফেসবুকে একটি পোস্ট শেয়ার করি, একটি ছবি আপলোড করি বা কোনো মন্তব্য করি, তখন আমাদের প্রতিটি কাজই কিছু না কিছু নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে পড়ে। এসব নির্দিষ্ট নিয়মগুলোকে সহজ কথায় ফেসবুক কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড বলে।
ফেসবুক কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড হলো একটি নির্দেশিকা, যা ব্যবহারকারীদের জন্য নির্ধারণ করে দেয় কী ধরনের কনটেন্ট ফেসবুক ও এর অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে (যেমন ইনস্টাগ্রাম, মেসেঞ্জার ও থ্রেডস) অনুমোদিত এবং কী ধরনের কনটেন্ট নিষিদ্ধ।
প্রতিদিন লক্ষ কোটি মানুষ তাদের মতামত, অনুভব ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করে এসব প্ল্যাটফর্মে। মেটা চায়, ব্যবহারকারীরা যেন নিরাপদভাবে ও স্বাধীনভাবে নিজেদের মত প্রকাশ করতে পারে, তবে সেই স্বাধীনতা যেন কারো জন্য ক্ষতিকর না হয়। এই লক্ষ্যেই ফেসবুকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করা হয়েছে।
এই স্ট্যান্ডার্ডগুলো শুধু ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই কাজ করে না, বরং এটি এমন একটি পরিবেশ তৈরি করে যেখানে সবাই সুরক্ষিত এবং সম্মানজনকভাবে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে।
ফেসবুকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের মূল উদ্দেশ্য হলো সহিংসতা, ঘৃণা, ভুয়া খবর, এবং অন্য যেকোনো ধরনের অনৈতিক কনটেন্ট রোধ করা। এই নিয়মগুলো অনুসরণ করে ব্যবহারকারীরা শুধু নিরাপদ পরিবেশে নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারে, বরং তারা অন্যদেরও সমর্থন ও সম্মান প্রদর্শন করতে পারে।
ফেসবুকের এই স্ট্যান্ডার্ডগুলো অনুসরণ না করলে, কোনো পোস্ট অথবা অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
কেন প্রয়োজন এই স্ট্যান্ডার্ড?
কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের মূল উদ্দেশ্য হলো একটি ভারসাম্যপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। অর্থাৎ এমন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা একসঙ্গে বজায় থাকে। ইন্টারনেট যেমন মানুষের কথা বলার সুযোগ তৈরি করে, তেমনই তা অপব্যবহারেরও সুযোগ করে দেয়। তাই, নির্দিষ্ট কিছু মূল্যবোধের ভিত্তিতে মেটা এই নীতিমালা পরিচালনা করে:
১. বিশ্বাসযোগ্যতা ও স্বচ্ছতা: ফেসবুক চায়, ব্যবহারকারীরা যেন তাদের প্রকৃত পরিচয় নিয়ে প্ল্যাটফর্মে যুক্ত থাকেন। ভুয়া প্রোফাইল, বিভ্রান্তিকর তথ্য বা প্রতারণামূলক কার্যকলাপ এড়িয়ে চলার জন্যই এই নীতি কার্যকর।
২. নিরাপত্তা: যেকোনো হুমকি, সহিংসতা বা উসকানিমূলক কনটেন্ট প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, যাতে কেউ যেন ভয় বা নিপীড়নের শিকার না হন।
৩. গোপনীয়তা: ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য যেন নিরাপদ থাকে, সে বিষয়েও ফেসবুক সচেতন। কারো সম্মতি ছাড়া ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করাকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়।
৪. মর্যাদা ও সম্মান: সকল মানুষের সমান অধিকার ও সম্মান রয়েছে- এই বিশ্বাসে ফেসবুক হেনস্তা, ঘৃণামূলক বক্তব্য বা বৈষম্যমূলক আচরণকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।
কীভাবে কাজ করে কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড?
কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডে প্রতিটি বিষয়ে দুটি অংশ থাকে:
নীতির যৌক্তিকতা: প্রতিটি নীতির পেছনে যুক্তি ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করা হয়।
পলিসি লাইন: কোন কনটেন্ট নিষিদ্ধ, কোন কনটেন্ট বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে অনুমোদিত, এবং কোন কনটেন্ট কেবল ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য প্রযোজ্য- এসব বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়াও, কিছু ক্ষেত্রে যদি কোনো কনটেন্ট আপত্তিকর হলেও তা গণমাধ্যমগত গুরুত্ব বা জনস্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়, তবে মেটা সেই কনটেন্ট রাখতে পারে। তবে তা রিভিউ করে, এর সম্ভাব্য ক্ষতির ঝুঁকি যাচাই করে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতির আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের বিশদ বিবরণ
ফেসবুকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডগুলো সব ধরনের কনটেন্টের জন্য প্রযোজ্য, যা সবার জন্য, বিশ্বব্যাপী, এবং এর মধ্যে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি কনটেন্টও।
প্রতিটি নীতির শিরোনামে তার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে, এবং এরপর স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে কোন ধরনের কনটেন্ট অনুমোদিত নয়, কোন কনটেন্টের জন্য অতিরিক্ত প্রমাণ বা কনটেক্সট প্রয়োজন এবং কোন কনটেন্টগুলো সতর্কীকরণ সহ বা ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য দেখানো যেতে পারে।
কারা এই স্ট্যান্ডার্ড নির্ধারণ করে?
মেটা এ নীতিমালাগুলো গড়ে তুলেছে সাধারণ ব্যবহারকারীদের মতামত, প্রযুক্তি ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ এবং বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে। এই নীতিমালাগুলো বিভিন্ন সংস্কৃতি, ভাষা ও সমাজের বাস্তবতা বিবেচনায় তৈরি- যাতে সবাই নিজেকে অন্তর্ভুক্ত মনে করে।
ফেসবুক কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড কেবল একটি নিয়মের তালিকা নয়, বরং এটি একটি ভারসাম্যপূর্ণ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তোলার প্রচেষ্টা- যেখানে সবাই নিরাপদে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে এবং সম্মানের সঙ্গে মত প্রকাশ করতে পারে। আমাদের সকলের দায়িত্ব, এই নীতিমালাগুলোর প্রতি সচেতন থাকা ও তা অনুসরণ করা, যাতে আমরা একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে একটি স্বাস্থ্যকর অনলাইন কমিউনিটি গড়ে তুলতে পারি।
ফেসবুকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে আমাদের দায়িত্ব
ফেসবুকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড শুধু ফেসবুকেরই নয়, ইনস্টাগ্রাম, মেসেঞ্জার এবং থ্রেডস-এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এই স্ট্যান্ডার্ডগুলো সারা বিশ্বজুড়ে সবাইকে অভ্যস্ত করানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে, যাতে একজন ব্যক্তি ফেসবুক প্ল্যাটফর্মে কিভাবে আচরণ করবে, সেটি নির্ধারণ করা যায়।
এছাড়া, এই নীতিগুলোকে পুনঃমূল্যায়ন ও আপডেট করা হয়, যাতে সব ধরনের মতামত, বিশ্বাস ও সংস্কৃতি অন্তর্ভুক্ত থাকে। বিশেষ করে, যা অন্যান্য সময় বা সমাজে উপেক্ষিত বা বৈষম্যের শিকার হতে পারে, সেই সব সম্প্রদায়ের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া হয়।
আপনার মতামত লিখুন :