সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক মেটার এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যা সারা বিশ্বের মানুষের কাছে জনপ্রিয়। এ মাধ্যমটি ব্যবহার করে মানুষ তার প্রতিটি মুহূর্ত তাদের প্রিয় মানুষদের সঙ্গে ভাগ করে নেয়।
তবে, ফেসবুকে প্রকাশ করা যেকোনো পোস্ট, ছবি বা মন্তব্যই নির্দিষ্ট কিছু নিয়মের মধ্যে পরে। এই নিয়মগুলোকেই সহজভাবে বলা হয় ফেসবুক কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড।
ফেসবুক কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড বা নীতিমালার ওপর ভিত্তি করে ফেসবুক কাজ করে। এ নীতিমালাগুলো না মানলে মেটা আপনার বা আমার প্রকাশিত বিভিন্ন ফেসবুক কন্টেন্টের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এমনকি আপনার বা আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধও করে দিতে পারে মেটা।
যদিও ফেসবুক প্রকাশ্যে কোনো পূর্ণাঙ্গ নিষিদ্ধ শব্দের তালিকা দেয় না, তবে একটি বিষয় পরিষ্কার: এখানে যেমন খুশি তেমন শব্দ ব্যাবহার করা যায় না।
শব্দ নিয়ে যুদ্ধ
ফেসবুকের কনটেন্ট পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মানব পর্যালোচকের সংমিশ্রণে কাজ করে, প্রতিনিয়ত কাজ করে প্ল্যাটফর্মটি থেকে আপত্তিকর, ক্ষতিকর বা বিভ্রান্তিকর ভাষা সরাতে। গালাগাল থেকে ঘৃণামূলক বক্তব্য পর্যন্ত, এমনকি নিরীহ মনে হওয়া অনেক শব্দও আপনাকে পোস্ট মুছে ফেলার ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
সবচেয়ে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অশ্লীল ভাষা।
যদি আপনি কোনো বিজ্ঞাপনে গালাগাল করার চেষ্টা করেন বা প্রতীক ও ইমোজির মাধ্যমে গালিগুলো ঢাকতে চান, তাহলে সাবধান। ফেসবুকের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা এই ছদ্মবেশী ভাষাও শনাক্ত করে ফেলতে পারে এবং তাৎক্ষণিকভাবে সরিয়ে দিতে পারে।
স্বাস্থ্যবিষয়ক কথাবার্তায় সাবধানতা
অবাক করা বিষয় হলো, ফেসবুক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অনেক শব্দকেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। যেমন ‘ওজন কমানো’, ‘ডায়েট’, ‘মোটা’, ‘মানসিক অবসাদ’, কিংবা ‘উদ্বেগ’– এসব শব্দ বিশেষ করে বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।
ফেসবুক বলছে, এর মাধ্যমে মানুষকে ভুলভাল তথ্য থেকে রক্ষা করা হচ্ছে, তবে সমালোচকদের মতে এটি প্রয়োজনীয় আলাপচারিতাও দমন করে।
ঘৃণার ভাষার সীমারেখা
ঘৃণামূলক বক্তব্য ফেসবুকের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই বড় চ্যালেঞ্জ। স্পষ্টতই বর্ণবাদ, সাম্প্রদায়িকতা বা লিঙ্গভিত্তিক ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্য নিষিদ্ধ।
তবে সাম্প্রতিক কিছু নীতিমালায় দেখা গেছে, রাজনীতি বা অধিকারভিত্তিক আলোচনায় কিছু কঠিন ভাষার ব্যবহার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যদি কাউকে পশুর সঙ্গে তুলনা করা হয়, তাহলে তা নিশ্চিতভাবে নিষিদ্ধ।
হুমকি বা সহিংসতা উসকে দেওয়া
সহিংসতা বা হুমকি– সরাসরি বা পরোক্ষ– কোনোভাবেই অনুমোদন দেয় না ফেসবুক। কাউকে ক্ষতিসাধনের কথা বলা বা সেসব উদযাপন করা হলে, পোস্টটি সরিয়ে দেওয়া হয় মেটা ঠেকে।
তবে প্রায়ই দেখা যায়, এসব নিয়ম প্রয়োগে ভুল হয় এবং নিরীহ ব্যবহারকারীরাও আপনার আমার ভুলের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হন।
মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান
বর্তমান তথ্যযুদ্ধের যুগে, ফেসবুক মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
স্বাস্থ্য, রাজনীতি বা মহামারিসংক্রান্ত যেকোনো ভুল তথ্য, যেমন ভ্যাকসিনবিরোধী মতামত, তাৎক্ষণিকভাবে মুছে ফেলা হয়। যদিও কেউ কেউ একে সেন্সরশিপ বলে সমালোচনা করেন, অনেকের মতে, এটি দায়িত্বশীলতার অংশ।
নিষিদ্ধ পণ্য ও সেবা
ফেসবুকে কিছু নির্দিষ্ট পণ্য ও সেবার বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ। যেমন-
- অস্ত্র, গুলি ও বিস্ফোরক
- তামাক ও সংশ্লিষ্ট পণ্য
- মাদক ও মাদকসামগ্রী
- অ্যালকোহল (কিছু অঞ্চলে)
- জুয়া ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কনটেন্ট
এ ছাড়াও, ‘দ্রুত ধনী হওয়ার উপায়’ বা ‘চমৎকার ফলের নিশ্চয়তা’ ইত্যাদি প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ।
অদৃশ্য প্রভাব
এ অদৃশ্য শব্দ তালিকার কারণে অনেক সময় ব্যবহারকারীরা না বুঝেই সমস্যায় পড়েন। পোস্ট হঠাৎ গায়েব হয়ে যাওয়া, বিজ্ঞাপন বাতিল হওয়া কিংবা অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
এ ছাড়াও, অনেক সময় মেটার নেওয়া এসব পদক্ষেপের কোনো ব্যাখ্যা পর্যন্ত দেওয়া হয় না। ফলে, বাস্তবে এটি এমন এক প্ল্যাটফর্ম হয়ে দাঁড়িয়েছে যেখানে শুধু নিয়ম নয়, ভাষার সীমারেখাও প্রতিনিয়ত নির্ধারণ করছে আপনার উপস্থিতি।
তাই, পরেরবার আপনি ফেসবুকে কিছু লেখার আগে কিংবা একটি বিজ্ঞাপন দেওয়ার পরিকল্পনা করার আগে, শব্দ বাছাইটা একটু ভালোভাবে করে নিন। কারণ শুধু লাইক আর কমেন্ট নয়, আপনার শব্দ দিয়েই নির্ধারিত হতে পারে আপনি মেটার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থাকবেন কি না।