সূর্য প্রতিদিনই আকাশে ওঠে। কিন্তু পৃথিবীর পৃষ্ঠে তার আলো ঠিক কতটা পৌঁছায়, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা এক গবেষণায় নতুন চিত্র তুলে ধরেছেন।
‘অ্যাডভান্সেস ইন অ্যাটমোস্ফিয়ারিক সায়েন্সেস’ জার্নালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে, গত কয়েক দশকে পৃথিবীতে পৌঁছানো সৌর বিকিরণের (solar radiation) পরিমাণে রয়েছে উল্লেখযোগ্য ওঠানামা—যা মূলত বায়ু দূষণ এবং জলবায়ু নীতিমালার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
ETH এর জলবায়ুবিজ্ঞানী অধ্যাপক মার্টিন ওয়াইল্ডের নেতৃত্বে পরিচালিত এক গবেষণায় সৌর বিকিরণের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ চিহ্নিত হয়েছে— ‘গ্লোবাল ডিমিং’ ও ‘ব্রাইটনিং’ যা সরাসরি প্রভাব ফেলেছে বিশ্বের সৌরশক্তি উৎপাদনে।
১৯৫০ থেকে ১৯৮০-এর দশক পর্যন্ত সময়কে বলা হচ্ছে ‘গ্লোবাল ডিমিং’-এর যুগ। যেখানে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যাপক ব্যবহার এবং শিল্পায়নের ফলে সৃষ্ট অ্যারোসল ও ধূলিকণা সৌর বিকিরণ আটকে দেয়। এতে পৃথিবীর পৃষ্ঠে পৌঁছানো আলো কমে যায় উল্লেখযোগ্যভাবে।
অধ্যাপক ওয়াইল্ড বলেন, ‘পৃথিবীর পৃষ্ঠে সূর্যালোকের পরিমাণ প্রতি বছর নয়, দশক ধরে উল্লেখযোগ্য তারতম্যের মধ্যে যায়, যা আবহাওয়া এবং শক্তি ব্যবস্থাপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দেয়।’
তবে ২০০০ সালের পর থেকে পরিস্থিতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। উন্নত দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচ্ছন্ন শক্তির চর্চা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সৌর বিকিরণের পরিমাণ বাড়তে শুরু করে, যাকে বলা হচ্ছে ‘ব্রাইটনিং’-এর যুগ।
ওয়াইল্ডের ভাষায়, ১৯৮০ পর অনেক স্থানে সৌর বিকিরণ আবার বাড়তে শুরু করেছে, যা পরিষ্কার বায়ুমণ্ডল এবং উন্নত পরিবেশ নীতির ইঙ্গিত দেয়।
এ বিষয়ে চীনে চালানো দীর্ঘমেয়াদী এক গবেষণার ফলাফল আরও স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে, কীভাবে ১৯৬০ থেকে ১৯৯০-এর মধ্যে সৌর বিকিরণ কমে গিয়েছিল, এবং ২০০০-এর পর ধীরে ধীরে আবার বাড়ছে।
ওয়াইল্ড বলেন, চীনের মতো দেশে, যেখানে আগে উচ্চ মাত্রার দূষণ ছিল, সেখানে আলো ফিরে আসা দূষণ নিয়ন্ত্রণের সফলতা প্রমাণ করে।
ওয়াইল্ড আরও বলেন, এই গবেষণা বিশ্বব্যাপী সৌরশক্তি খাতে বড় ধরনের আশাবাদ জাগাচ্ছে। যেখানে বায়ু পরিষ্কারের উদ্যোগ চলছে, সেখানে সৌরশক্তির প্রাপ্যতা বাড়ছে, যা ভবিষ্যতের নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বড় অবদান রাখবে।
সূত্র: ডেইলি গ্যালাক্সি
আপনার মতামত লিখুন :