কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালানোর পেছনে লুকিয়ে আছে বিশাল আর্থিক ও পরিবেশগত ব্যয়। এমনকি আপনি যখন চ্যাটজিপিটির মতো একটি চ্যাটবটকে শুধু ধন্যবাদ বলেন, সেটিও কোম্পানির জন্য খরচ বাড়িয়ে দেয়। সামান্য সৌজন্যবোধের এই প্রকাশই প্রতিদিন ৭ লাখ মার্কিন ডলার পর্যন্ত খরচের অন্যতম উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভদ্রতা মানেই খরচ: প্রতি ‘ধন্যবাদে’ খরচ ১০ সেন্ট ও আধা লিটার পানি
গবেষণা বলছে, চ্যাটজিপিটিতে প্রতিটি ইনপুট বা প্রশ্নের গড় খরচ প্রায় ৪০ আগোরোট বা ১০ সেন্ট। এর মধ্যে আশ্চর্যজনকভাবে উল্লেখযোগ্য অংশজুড়ে আছে ছোট ছোট বিনিময়- যেমন ‘অনুগ্রহ করে’, ‘ধন্যবাদ’, বা ‘দয়া করে’। এইসব মানবিক সৌজন্যের প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে চ্যাটবটকে একই পরিমাণ শক্তি ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যয় করতে হয়, যেমনটা জটিল কোনো বিশ্লেষণমূলক প্রশ্নের ক্ষেত্রে হয়।
এইসব খরচ শুধুই আর্থিক নয়- এর পরিবেশগত দিকও গুরুতর। ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি, রিভারসাইড এবং ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস, আর্লিংটনের গবেষণায় দেখা গেছে, বৃহৎ ভাষা মডেল চালাতে প্রচুর পানি লাগে, কারণ ডেটা সেন্টারগুলোকে ঠান্ডা রাখতে পানি ব্যবহার করা হয়। প্রতি ১০০০ প্রশ্নে প্রায় ৫০০ লিটার পানি ব্যবহৃত হয় বলে ধারণা করা হয়।
ব্যয় স্বীকার করেও চ্যাটজিপিটি চালু রাখার পক্ষে সাম অল্টম্যান
ওপেনএআই-এর সিইও স্যাম অল্টম্যান স্বীকার করেছেন, চ্যাটজিপিটি চালাতে প্রতিদিন কয়েক মিলিয়ন ডলার ব্যয় হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি ধন্যবাদ বা অনুগ্রহ করে বলার মতো ছোট বিনিময়গুলোও খরচসাপেক্ষ। তবে এগুলিই মানুষকে আমাদের এআই ব্যবহারকে আরামদায়ক ও মানবিক বলে মনে করায়।’
এই কারণেই, এমন খরচ সত্ত্বেও ওপেনএআই চায় মানুষ যেন এআই-এর সঙ্গে স্বাভাবিক, ভদ্র এবং সংবেদনশীল আচরণ বজায় রাখে।
মানবিকতা বনাম পরিবেশ: সৌজন্য কি নতুন সংকটের পথ?
এআই-এর সঙ্গে সৌজন্যমূলক আচরণ একদিকে ব্যবহারকারীর জন্য ইতিবাচক অভিজ্ঞতা তৈরি করলেও, অন্যদিকে এটি পরিবেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে। প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ, পানি ব্যবহার, এবং হার্ডওয়্যারের উপর নির্ভরতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে- ভবিষ্যতে এই মডেলগুলোর টেকসইতা নিয়ে।
এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে: প্রযুক্তিকে আরও মানবিক করে তুলতে গিয়ে কি আমরা পরিবেশ ও সম্পদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছি?
আপনার মতামত লিখুন :