ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

সামাজিক মাধ্যম ভাষা ব্যবহারে পরিবর্তনের যে বার্তা দিচ্ছে

ডিজিটাল দুনিয়া ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২৪, ০৪:১০ পিএম

সামাজিক মাধ্যম ভাষা ব্যবহারে পরিবর্তনের যে বার্তা দিচ্ছে

ফাইল ছবি

আপনি কি ইনস্টাগ্রাম রিলস বা টিকটকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রল করছেন? যদি তাই হয়, তাহলে আপনি হয়তো ভুগছেন ‘ব্রেইন রট’ নামে এক নতুন সমস্যায়। যেটাকে চলতি বছর অক্সফোর্ডের ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। বর্তমান সময়ে স্যোশাল মিডিয়া আমাদের ভাষায় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

ব্রেইন রট কী: ব্রেইন রট এমন একটি অবস্থা, যেখানে মানুষের মানসিক বা বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতার অবনতি ঘটে বলে মনে করা হয়। এটি বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে নিম্নমানের কনটেন্ট অতিরিক্ত দেখার কারণে হতে পার বলছেন বিশেষজ্ঞরা। ১৮৫৪ সালে মার্কিন লেখক হেনরি ডেভিড থরোর বই ‘ওয়াল্ডেন’-এ ব্রেইন রট শব্দটি প্রথমবার ব্যবহার করা হয় তিনি লিখেছিলেন, ইংল্যান্ড যখন পটেটো রট সারানোর চেষ্টা করছে, তখন কি কেউ ব্রেইন রট সারানোর চেষ্টা করবে না?

পরবর্তীতে এই শব্দটি সোশ্যাল মিডিয়ায় জেন জেড এবং জেন আলফা প্রজন্মের মধ্যে জনপ্রিয়তা পায়। এখন এটি মূলধারার আলোচনায় উঠে এসেছে, কারণ এটি আমাদের ভার্চুয়াল জীবনের নিম্নমানের কনটেন্ট নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর অ্যান্ড্রু পৃজিবিলস্কি বলেন, ব্রেইন রট বাস্তবে কোনো জিনিস নয়, তবে এটি আমাদের অনলাইন দুনিয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে। এটি এমন একটি শব্দ যা আমরা সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কিত আমাদের উদ্বেগগুলো একসঙ্গে তুলে ধরতে ব্যবহার করতে পারি।

অক্সফোর্ড ল্যাঙ্গুয়েজের প্রেসিডেন্ট ক্যাসপার গ্রাথওল বলেন, যদি গত দুই দশক ধরে অক্সফোর্ডের ওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার পর্যালোচনা করা যায়, তাহলে দেখা যায় যে, ইন্টারনেট সংস্কৃতি আমাদের জীবনের একটি অংশ হয়ে উঠেছে। গত বছরের ‘রিজ’ শব্দটির কথা বলতেই হবে। এটাই প্রমাণ করে কীভাবে অনলাইন দুনিয়া আমাদের ভাষায় প্রভাব ফেলছে। ব্রেইন রটও কোনো বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা নয়। বরং এটি সামাজিক  যোগাযোগমাধ্যমে অতিরিক্ত সময় কাটানোর ফলে সৃষ্ট মানসিক অস্বস্তির প্রতিফলন।

অন্যান্য আলোচিত শব্দগুলো: আরও কিছু শব্দ বর্তমানে ব্যবহার করা হচ্ছে। যেগুলো হলো:-

ডেমিউর: এমন একজন ব্যক্তি যিনি সংযত আচরণ করেন। এবং যিনি আচরণের সঙ্গে তার পোশাক নিয়েও সচেতন।

ডাইনামিক প্রাইসিং: মাত্রা অতিরিক্ত চাহিদার জন্য যখন বাজারে  পণ্যের বা সেবার মূল্যের পরিবর্তন হয়। 

লোর: যখন কোনো ব্যক্তি কিংবা বিষয়ের পটভূমি, গল্প এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্য সামনে নিয়ে আসাকে বুঝানো হয়।  

রোম্যান্টাসি: রোমান্স ও ফ্যান্টাসির সংমিশ্রণে তৈরি কাহিনিকে বুঝানো হয় এই শব্দের মাধ্যমে।

স্লপ: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি শিল্পকর্ম, লেখা বা অন্যান্য কনটেন্ট। যেটা নিম্নমানের হলেও অনলাইনে আলোচনায় থাকে লাইক ও শেয়ারিং করার মাধ্যমে। 

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ডিকশনারি একমাত্র নয়, গত মাসে ক্যামব্রিজ ডিকশনারি তাদের চলতি বছরের সংযুক্ত শব্দ হিসেবে ‘ম্যানিফেস্ট’ ঘোষণা করেছে। এটি আগে ‘স্পষ্ট’ বা ‘সহজে দেখা’ অর্থে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে ভিন্ন অর্থ ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়া ইউজারদের কাছে, তারা এই শব্দের মাধ্যমে বুঝায় এমনকি যেটা আপনি সহজে অর্জন করতে পারবেন। মার্কিন গায়িকা দুয়া লিপাকে ‘ম্যানিফেস্ট’ শব্দটির ভিন্ন ভাবে ব্যবহার করার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন ট্রেন্ড হিসেবে দেখা যায়।

অন্যদিকে, কলিন্স ডিকশনারি এই বছর ‘ব্র্যাট’ শব্দটি যুক্ত করে। যেটা সম্প্রতি শার্লি এক্সসির অ্যালবামের মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়েছে। ‘ব্র্যাট’ মূলত আত্মবিশ্বাসী ও স্বাধীন মনোভাব সম্পন্ন ব্যক্তিকে বুঝায়। বিশেষজ্ঞদের মতে এটা স্পষ্ট যে বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের ভাষায় সংস্কৃতিতে পরিবর্তন নিয়ে আসছে। পুরানো শব্দ অনেক সময় নতুন অর্থে ব্যবহার হচ্ছে আবার কখনো নতুন শব্দের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করাচ্ছে যেগুলো পরে স্থান পাচ্ছে ডিকশনারিতেও।

আরবি/ এইচএম

Link copied!