ঢাকা রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
ইউমিডিজি জি৯

কম দামে আকর্ষণীয় ফিচারের লোভনীয় ফাঁদ

শাওন সোলায়মান

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৫, ০২:৩৪ পিএম

কম দামে আকর্ষণীয় ফিচারের লোভনীয় ফাঁদ

ছবি: ইন্টারনেট

বাংলাদেশের বাজারে ‘জি৯’ মডেলের নতুন হ্যান্ডসেট এনেছে চীনা স্মার্টফোন ব্র্যান্ড ইউমিডিজি। সম্প্রতি ‘জি৯’সহ মোট চারটি ডিভাইস আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। অবশ্য এখনো ক্রেতা সাধারণের কাছে বিক্রি শুরু হয়নি এসব ডিভাইস। তবে তার আগেই বিতর্ক দেখা দিয়েছে, ‘জি৯’ মডেলের স্মার্টফোন নিয়ে। 

মাত্র ১৪ হাজার ৯৯০ টাকায় আকর্ষণীয় সব ফিচারের প্রতিশ্রুতি থাকলেও ‘জি৯’-এর গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক, ৫০ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা, দুর্বল পারফরম্যান্স, নিরাপত্তা ইস্যুর মতো বিষয়ে ‘জি৯’ যেন কম দামে আকর্ষণীয় ফিচারের লোভনীয় ফাঁদে পরিণত হয়েছে।

গত বছর ‘জি৯’ বাজারজাত করা হয় ইউরোপে। লিথুনিয়াভিত্তিক স্বতন্ত্র  প্রযুক্তি গবেষণা  প্রতিষ্ঠান ও অনলাইন প্রকাশক সাইবার নিউজ ডট কমের সাংবাদিক পলিয়াস গ্রিনকেভিচ ‘জি৯’ স্মার্টফোন নিয়ে একটি বিস্তারিত  প্রতিবেদন  প্রকাশ করেন। 

তাতে দেখা যায়, ‘জি৯’ ফাইভ-জি মোবাইল নেটওয়ার্ক সমর্থনের দাবি করলেও ডিভাইসটিতে ফাইভ-জি ব্যবহার করা যায়নি। লিথুনিয়ায় ফাইভ-জি রয়েছে এবং নিজের অন্যান্য ফাইজ-জি-সমর্থিত ডিভাইসে পঞ্চম প্রযুক্তির নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারেন বলে দাবি করেন সাংবাদিক পলিয়াস। 

‘জি৯’-এর নিরাপত্তাজনিত আরেকটি গুরুতর সমস্যা চিহ্নিত করেছেন পলিয়াস। ডিভাইসটিতে দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা আপডেট পাওয়ার অনিশ্চয়তা রয়েছে। ব্র্যান্ডটির পূর্ববর্তী মডেলগুলোয় নিরাপত্তা আপডেটের ঘাটতি দেখা গেছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘রেডিট’ এ অভিযোগ করেছেন ইউমিডিজির ব্যবহারকারীরা। 

বিশেষ করে, ইউনিসটক চিপসেটে সাইবার নিরাপত্তা দুর্বলতার  প্রমাণ পাওয়া গেছে। নিরাপত্তা আপডেটের অনুপস্থিতি ফোনটিকে সাইবার আক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে বলে মনে করছেন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।

‘জি৯’-এর পারফরম্যান্স নিয়েও আছে বিতর্ক। জি৯ মডেলে ইউনিক্স টি৭৬৫ চিপসেট ব্যবহার করা হয়েছে, যা সাধারণত স্বল্পমূল্যের ডিভাইসের জন্য উপযুক্ত বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।দীর্ঘমেয়াদে ফোনটিতে ধীরগতি এবং ল্যাগিংয় সমস্যা দেখা দিতে পারে। ৬ জিবি ভার্চুয়াল র‌্যাম থাকা সত্ত্বেও ভারি অ্যাপ ব্যবহারের সময় ফোনটি কাক্সিক্ষত মাত্রায় কাজ করে না বলেও অনলাইনে অভিযোগ রয়েছে ডিভাইসটির ব্যবহারকারীদের। ব্র্যান্ডটির দাবি করা ডিভাইসের ৫০ মেগাপিক্সেলের প্রধান ক্যামেরার পারফরম্যান্স ‘শর্তযুক্ত’। 

ইউরোপের বাজারের ব্যবহারকারীদের ‘রিভিউ’ অনুযায়ী, ৫০ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা হিসেবে শক্তিশালী ছবি ও ভিডিও রেকর্ডিংয়ের  প্রত্যাশা থাকলেও, ‘জি৯’ সেই প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ। কম আলোতে তোলা ছবি ঝাপসা হওয়ার পাশাপাশি ‘ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন’ না থাকায় সামান্য নড়াচড়ায় ছবিগুলো ঘোলাটে হয়ে যায়।

‘জি৯’ স্মার্টফোন বাংলাদেশের গ্রাহকদের কাছে যাওয়ার পর ডিভাইসটির সীমাবদ্ধতা ও সমস্যা আমলে নিতে চায় ইউমিডিজি বাংলাদেশ। 

সেলস অ্যান্ড অপারেশনস হেড মাসুকুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, প্রায় দেড় বছর গবেষণার পর ডিভাইসটি ডিজাইন করেছি। ইউরোপিয়ান বাজারের মতো না বরং বাংলাদেশের গ্রাহকদের বিবেচনায় রেখেই বাংলাদেশের জন্য ইউমিডিজি প্রোডাক্ট ডিজাইন করে। এ

ই জি৯ ও বাংলাদেশেই তৈরি। বাংলাদেশের জন্য এটা কাস্টমাইজড ডিভাইস। বাংলাদেশের ব্যবহারকারীদের যদি কোন নেতিবাচক অভিজ্ঞতা হয় তখন সেটিকে ‘এক্সেপ্ট’ করতে পারব। তবে অভিযোগ আসার সম্ভাবনা নেই ৯৯ শতাংশ। 

মাসুকুর রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশের বেশির ভাগ গ্রাহক ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে স্মার্টফোন কেনে। সেই দামের মধ্যে ডিভাইসটি ঠিক আছে।

তবে গ্রাহকরা বলছেন ভিন্ন কথা। রাজধানীর তিতুমীর কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাতুল ইসলাম বলেন, আমরা মধ্যবিত্ত ঘরের স্টুডেন্টরা অনেক সাধ করে একটা স্মার্টফোন কিনি। কেনার সময় বিবেচনায় থাকে যে, কমপক্ষে দুই থেকে তিন বছর স্মার্টফোনটি ব্যবহার করব।

 কম দামে আকর্ষণীয় সব ফিচারের বিজ্ঞাপন যখন দেখি, আমরা আকৃষ্ট হই। আমাদের  প্রত্যাশা জাগে যে, ঐ ডিভাইসটি আমাদের চাহিদা পূরণ করবে। কিন্তু কেনার পর যদি স্মার্টফোন ব্র্যান্ড  প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করে তাহলে, সেটি আমাদের সঙ্গে  প্রতারণা। আমি এটাকে ফাঁদ হিসেবে দেখি।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!