পিছিয়ে পড়া বা প্রায় হারাতে বসা ভাষাগুলো টিকিয়ে রাখতে সেগুলোর ডিজিটাল উন্নয়নে ল্যাঙ্গুয়েজ টেকনলজি পার্টনার প্রোগাম নামের একটি কর্মসূচি চালু করেছে মেটা। এর মাধ্যমে উন্নত মেশিন ইন্টেলিজেন্স (এএমআই) অর্জনের কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মেটার ফান্ডামেন্টাল এআই রিসার্চ (ফেয়ার) টিম। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যেন মানুষের মতো যুক্তি প্রয়োগ করে ভাষান্তরের মতো জটিল কাজ সম্পন্ন করতে পারে, সে লক্ষ্যে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি, এই প্রযুক্তিকে এমনভাবে উন্নয়ন করা হচ্ছে যাতে তা সবার জন্য উপকারী হয়।
এআই মডেলে কম প্রতিনিধিত্বশীল ভাষার সমর্থন বাড়াতে ইউনেস্কোর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে মেটা। বহুভাষিক সমস্যার সমাধান এবং তুলনামূলক কম ব্যবহৃত ভাষায় এআই মডেল তৈরি করলে ডিজিটাল জগতে ভাষাগত বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে প্রত্যাশা প্রতিষ্ঠানটির। একই সঙ্গে এটি এমন বুদ্ধিমান প্রযুক্তির বিকাশে সাহায্য করবে, যা নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে এবং অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে পারবে।
ভাষা প্রযুক্তি পার্টনার প্রোগ্রাম
মেটা তার ওপেন সোর্স ভাষা প্রযুক্তি, বিশেষত এআই-ভিত্তিক অনুবাদ প্রযুক্তি আরও উন্নত করতে অংশীদার খুঁজছে। বিশেষ করে, ইউনেস্কোর ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা দশক’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে কম প্রতিনিধিত্বশীল ভাষাগুলোর উন্নয়নে জোর দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেটা বলছে, এমন অংশীদার খুঁজছি যারা ১০ ঘণ্টার বেশি কথোপকথনের রেকর্ডিং ও প্রতিলিপি, ২০০ বাক্যের বেশি লিখিত টেক্সট এবং বিভিন্ন ভাষার অনুবাদকৃত বাক্য প্রদান করতে পারবেন। এই তথ্য মেটার গবেষণা দলের সঙ্গে একীভূত করে উন্নত স্পিচ রিকগনিশন ও মেশিন ট্রান্সলেশন মডেল তৈরি করা হবে, যা ওপেন সোর্স আকারে প্রকাশ করা হবে এবং সকলের জন্য বিনামূল্যে উন্মুক্ত থাকবে।
অংশীদার হিসেবে গবেষণা দলের নেতৃত্বে কারিগরি কর্মশালায় অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে। সেখানে ওপেন সোর্স মডেল কীভাবে ব্যবহার করে ভাষা প্রযুক্তি তৈরি করা যায়, তা শেখানো হবে। ইতোমধ্যে কানাডার একটি রাজ্য সরকার ইনুইট ভাষা সম্পর্কে এই কর্মসূচিতে যুক্ত হয়েছে।
ওপেন সোর্স ট্রান্সলেশন বেঞ্চমার্ক
ভাষা পার্টনার প্রোগ্রামের পাশাপাশি, মেটা একটি ওপেন সোর্স মেশিন ট্রান্সলেশন বেঞ্চমার্ক চালু করছে, যা ভাষান্তরকৃত এআই মডেলের কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে সাহায্য করবে। ভাষাবিদদের তৈরি বিশেষ বাক্যসমষ্টি দিয়ে এই বেঞ্চমার্ক তৈরি করা হয়েছে, যা মানব ভাষার বৈচিত্র্যকে তুলে ধরবে।
বেঞ্চমার্কটি বর্তমানে সাতটি ভাষায় পাওয়া যাচ্ছে এবং এতে অবদান রাখতে আগ্রহীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। বহুভাষিক মেশিন ট্রান্সলেশনের জন্য একটি নতুন মানদণ্ড তৈরি করাই লক্ষ্য বলে জানায় মেটা।
ভাষাগত বৈচিত্র্য সংরক্ষণে প্রতিশ্রুতি
মেটা জানায়, আজকের এই উদ্যোগ মেটার দীর্ঘমেয়াদি ভাষাগত অন্তর্ভুক্তির প্রতিশ্রুতির অংশ। ২০২২ সালে মেটা ‘কোনো ভাষাই পিছিয়ে থাকবে না’ প্রকল্প চালু করেছিলাম, যা অনেক ভাষার জন্য প্রথম নিউরাল মেশিন ট্রান্সলেশন মডেল তৈরি করেছিল এবং ভবিষ্যৎ গবেষণার ভিত্তি স্থাপন করেছিল। গত বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের সময় আমরা ইউনেস্কো এবং হাগিং ফেস-এর সঙ্গে মিলে এমন একটি ভাষান্তর প্রযুক্তি চালু করি।
সর্বশেষ, ডিজিটাল সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা ‘মেটা ম্যাসিভলি মাল্টিলিঙ্গুয়াল স্পিচ’ প্রকল্প চালু করেছি, যা এক হাজার ১০০টিরও বেশি ভাষার জন্য অডিও ট্রান্সক্রিপশন প্রসারিত করেছে। ২০২৪ সালে এতে ‘জিরো-শট স্পিচ রিকগনিশন’ যুক্ত করা হয়েছে, যা পূর্ব প্রশিক্ষণ ছাড়াই নতুন ভাষার অডিও ট্রান্সক্রিপ্ট করতে সক্ষম।
যে কোনো ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষের জটিল প্রয়োজন বুঝতে ও তার উত্তর দিতে সক্ষম এমন একটি বুদ্ধিমান প্রযুক্তি তৈরি করাই মেটার চূড়ান্ত লক্ষ্য বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এই লক্ষ্য অর্জনে ভাষান্তর প্রযুক্তি এবং অন্যান্য ভাষা প্রযুক্তির উন্নয়নে আরও অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী বলেও জানায় মেটা।
আপনার মতামত লিখুন :