ঘরের দৈনন্দিন কাজগুলোতে মানুষ ও রোবটকে কীভাবে একত্রিত করা যায় সে বিষয়ে কাজ করছে মার্কিন টেকজায়ান্ট মেটা। মানুষ ও রোবট একে অপরের সঙ্গে কীভাবে ‘ইন্টার-একশন’ করে সে বিষয়টি জানতে ‘পার্টনার’ নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
এই প্রকল্পে মানুষ এবং রোবট কীভাবে একসঙ্গে কাজ করতে পারে, তা বোঝার জন্য গবেষণা করা হবে। বাসার সাধারণ কাজ যেমন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, রান্না এবং খাবার ডেলিভারি গ্রহণের মতো কাজগুলো গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
গৃহস্থালি কাজে স্বয়ংক্রিয় রোবট ব্যবহারের স্বপ্ন নতুন কিছু নয়। সেই ৬০ বছর আগে জনপ্রিয় কার্টুন ‘দ্য জেটসনস’-এ রোজি দ্য রোবট মেইড চরিত্রটি মানুষকে এক স্বপ্নের ভবিষ্যতের ধারণা দিয়েছিল। তবে বাস্তবে, এতদিনে কেবল রোবট ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বাজারে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অন্য হোম রোবট এখনো মূলধারার বাজারে জায়গা করে নিতে পারেনি, যার পেছনে মূল কারণ হলো- ব্যয়বহুল দাম, নির্ভরযোগ্যতার অভাব এবং সীমিত কার্যকারিতা।
ঘরে রোবটের উপস্থিতি বাড়াতে হলে, মানুষের সঙ্গে তাদের আরও কার্যকরীভাবে কাজ করার দক্ষতা গড়ে তুলতে হবে। বর্তমান সময়ের হোম রোবটগুলো পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সব কাজ করতে সক্ষম নয়। যেমন- একটি ভালো রোবট ভ্যাকুয়ামও মাঝেমধ্যে মানুষের সহায়তা চায়। মেটা তাদের ‘পার্টনার’ প্রকল্পকে একটি বেঞ্চমার্ক ও ডেটাসেট হিসেবে উপস্থাপন করছে, যা ঘরের কাজে রোবট-মানুষের সহযোগিতার ধরন বিশ্লেষণ করতে সহায়ক হবে।
মেটা জানিয়েছে, ‘আমাদের বেঞ্চমার্কে এক লাখ কাজ অন্তর্ভুক্ত, যার মধ্যে থালা-বাসন ধোয়া, খেলনা গুছানোসহ নানা গৃহস্থালি কাজ রয়েছে। আমরা পার্টনার ডেটাসেটও প্রকাশ করছি, যেখানে সিমুলেশনের মাধ্যমে এসব কাজ মানুষের হাতে সম্পাদনের নমুনা রয়েছে, যা ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) মডেল প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হতে পারে।’
সিমুলেশন এখন রোবটিক গবেষণায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, কারণ বাস্তব পরীক্ষার পরিবর্তে এটি কয়েক সেকেন্ডেই ফলাফল প্রদান করতে পারে। তবে মেটা জানিয়েছে যে, তারা শুধু ভার্চুয়াল সিমুলেশনে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং বাস্তব পরিবেশেও পার্টনার মডেল সফলভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই বোস্টন ডাইনামিক্সের স্পট রোবটে এটি পরীক্ষা করা হয়েছে। পাশাপাশি, মেটা একটি মিশ্র-বাস্তবতা ইন্টারফেস তৈরি করেছে, যা রোবটের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়াকে দৃশ্যমান করে তুলবে।
মেটা বলছে, ‘মানব-রোবট সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। পার্টনারের মাধ্যমে আমরা চাই, রোবটকে শুধু যান্ত্রিক সহকারী নয়, বরং ভবিষ্যতের প্রকৃত অংশীদার হিসেবে কল্পনা করতে।’
বর্তমানে বয়স্কদের জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ, ল্যাব্রাডর নামের একটি সংস্থা এমন স্বয়ংক্রিয় সার্ভিং কার্ট তৈরি করেছে, যা স্বাধীনভাবে বসবাসরত প্রবীণদের সহায়তা করতে পারে। তবে, মেটার মতো গবেষণাগুলো বাস্তবে রূপ নিতে আরও বড় ধরনের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রয়োজন হবে।
এদিকে, হিউম্যানয়েড রোবটও হোম অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে, এ ধরনের রোবটের দাম কমাতে হবে এবং নির্ভরযোগ্যতা আরও বাড়াতে হবে। এ কারণেই বেশিরভাগ নির্মাতারা প্রথমে শিল্প ও করপোরেট ক্ষেত্রে এসব রোবট ব্যবহারের পরিকল্পনা করছেন।
আপনার মতামত লিখুন :