বর্তমানে এই তথ্য-প্রযুক্তির যুগে যেন স্মার্টফোন, ল্যাপটপ-ডেক্সটপ, ইন্টারনেট ছাড়া এক মুহুর্ত চলা যায় না। আর এগুলোর সাথে আবশ্যিকভাবে প্রয়োজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। যার মধ্যে রয়েছে- ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রামসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম। এখন সোশ্যাল মিডিয়া শুধু ছবি, স্ট্যাটাস বা ভিডিও পোস্ট করার প্ল্যাটফর্ম নয়। ব্যবসা বা টাকা আয় করার দারুণ এক প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে।
তবে অনেক সময় দেখা যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও চুরি করে কেউ ফেক আইডি খুলে প্রতারণা করছে। এজন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার ছবি, ভিডিও এবং ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে আপনাকেই সতর্ক থাকতে হবে। সেই সঙ্গে বেশ কিছু উপায় জেনে রাখুন, যার মাধ্যমে খুব সহজেই আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় সুরক্ষিত থাকতে পারবেন-
প্রোফাইল লকড করুন
প্রথমেই যে কাজটি করবেন তা হচ্ছে আপনার প্রোফাইলটি লকড বা প্রাইভেট করুন। যেন আপনার বন্ধু লিস্টে থাকা মানুষ ছাড়া অন্য কেউ দেখতে না পারে। প্রোফাইল পাবলিক করা থাকলে ছবি চুরি হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
প্রাইভেসি সেটিংস আপডেট করুন
প্রথমেই আপনার প্রতিটি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের প্রাইভেসি সেটিংস ভালোভাবে দেখে নিন। বেশিরভাগ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে প্রাইভেসি সেটিংস কাস্টমাইজ করার সুযোগ রয়েছে, যেখানে আপনি নির্ধারণ করতে পারবেন কে আপনার পোস্ট দেখতে পারবে, কে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে ইত্যাদি।
টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন চালু করুন
টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা যা আপনার অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী করে। এতে লগইন করার সময় পাসওয়ার্ডের পাশাপাশি আপনাকে একটি দ্বিতীয় স্তরের ভেরিফিকেশন কোড প্রদান করতে হয়, যা সাধারণত আপনার মোবাইল ফোনে পাঠানো হয়। এই পদ্ধতি হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনে।
সতর্ক হয়ে পোস্ট করুন
আপনার পোস্টে কী ধরনের তথ্য শেয়ার করছেন, তা ভালোভাবে যাচাই করে পোস্ট করুন। আপনার ব্যক্তিগত ঠিকানা, ফোন নম্বর, জন্মতারিখ, ই-মেইল ঠিকানা ইত্যাদি সংবেদনশীল তথ্য কখনোই পাবলিক পোস্টে শেয়ার করা উচিত নয়। সাইবার অপরাধীরা এই তথ্যগুলো ব্যবহার করে আপনার পরিচয় চুরি করতে পারে বা ফিশিং আক্রমণ চালাতে পারে।
পাসওয়ার্ড শক্তিশালী রাখুন
পাসওয়ার্ড সুরক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী এবং জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাসওয়ার্ডে সংখ্যা, বিশেষ চিহ্ন, ছোট ও বড় হাতের অক্ষরের মিশ্রণ ব্যবহার করুন। একই পাসওয়ার্ড একাধিক জায়গায় ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন এবং নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন।
অজানা লিঙ্ক বা ফাইল ডাউনলোড করবেন না
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ফিশিং আক্রমণ একটি সাধারণ সমস্যা। অজানা বা সন্দেহজনক লিঙ্কে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন এবং সন্দেহজনক ফাইল ডাউনলোড করবেন না। এসব লিঙ্কে ক্লিক করলে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হতে পারে, কিংবা ম্যালওয়্যার আপনার ডিভাইসে ইনস্টল হয়ে যেতে পারে।
অ্যাপ ও থার্ড পার্টি অ্যাক্সেস কন্ট্রোল করুন
সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের সাথে যুক্ত বিভিন্ন অ্যাপ বা থার্ড পার্টি সার্ভিসের অ্যাক্সেস সীমিত রাখুন। প্রতিটি অ্যাপ ইনস্টল করার আগে সেটি কী ধরনের তথ্য সংগ্রহ করছে, তা ভালোভাবে যাচাই করে নিন এবং প্রয়োজনবোধে অ্যাক্সেস বাতিল করুন।
অ্যাকাউন্ট অ্যাক্টিভিটি নিয়মিত মনিটর করুন
আপনার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে কোনো অস্বাভাবিক কার্যক্রম আছে কি না তা নিয়মিত চেক করুন। কোনো সন্দেহজনক লগইন বা কার্যক্রম দেখা গেলে দ্রুত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন এবং প্রয়োজনবোধে অ্যাকাউন্টের সাপোর্ট টিমের সাথে যোগাযোগ করুন।
ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট যাচাই করে অ্যাড করুন
সোশ্যাল মিডিয়াতে ভুয়া প্রোফাইল ব্যবহার করে হ্যাকিং বা ফিশিং আক্রমণ করা হয়। অজানা বা সন্দেহজনক প্রোফাইল থেকে বন্ধুত্বের অনুরোধ এলে সেটি যাচাই না করে গ্রহণ করবেন না। এমনকি পরিচিত কারো প্রোফাইল থেকেও যদি অস্বাভাবিক অনুরোধ আসে, তবে সেটি নিশ্চিত করতে পারেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে।
প্রোফাইলে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন না
আপনার প্রোফাইলের তথ্য যতটা সম্ভব সীমিত রাখুন। অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন চাকরির বিবরণ, পড়াশোনা বা পরিবার সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশ না করাই ভালো। আপনি যা শেয়ার করবেন, তা যেন শুধু আপনার প্রিয়জনরা দেখতে পায়।
আপনার মতামত লিখুন :