প্রথমবারের মতো পৃথিবীর বাইরের একটি স্থান বিশ্ব ঐতিহ্যের ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড মনুমেন্টস ফান্ড (WMF) ২০২৫ সালের ঝুঁকিপূর্ণ ঐতিহ্য স্থানের তালিকায় চাঁদকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। নতুন মহাকাশ যুগে দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকা চন্দ্রাভিযান এবং মহাকাশ কার্যক্রমের কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সংস্থার প্রেসিডেন্ট ও সিইও বেনেডিক্ট দে মঁতলোর বলেছেন, চাঁদকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার মূল উদ্দেশ্য হলো মহাকাশে মানবজাতির প্রথম পদক্ষেপের স্মৃতিগুলো সংরক্ষণ করা। এটি আমাদের যৌথ ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
চাঁদে ৯০টিরও বেশি ঐতিহাসিক চন্দ্রস্থল রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো ট্রাঙ্কুইলিটি বেস। এখানে নীল আর্মস্ট্রংয়ের বিখ্যাত পায়ের ছাপ এবং অ্যাপোলো ১১ মিশনের সময়কার ১০০টিরও বেশি নিদর্শন সংরক্ষিত রয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে চাঁদের মাটিতে রাখা ক্যামেরা, টেলিভিশন সম্প্রচার সরঞ্জাম, এবং আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিনের রেখে যাওয়া স্মারক।
তবে, বেনেডিক্ট দে মঁতলোর সতর্ক করেছেন, চন্দ্রপৃষ্ঠে দ্রুতগতিতে বেড়ে চলা কার্যক্রমের ফলে এই ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনগুলো ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। তিনি বলেন, চাঁদে কোনো সুনির্দিষ্ট সংরক্ষণ প্রটোকল ছাড়াই কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে, যা ঐতিহাসিক নিদর্শনের জন্য বড় ঝুঁকি।
বিশ্ব ঐতিহ্য রক্ষার জন্য পৃথিবীর পাশাপাশি মহাকাশেও সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে বলে WMF মনে করে। এটি কেবল ঐতিহ্য নয়, মানবজাতির সম্মিলিত গল্পের প্রতিচ্ছবিও।
চাঁদের পাশাপাশি ২০২৫ সালের ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত স্থান। এর মধ্যে রয়েছে গাজার ঐতিহাসিক নগরী, যেখানে মসজিদ ও গির্জাসহ বহু স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে কিয়েভের টিচার্স হাউস-ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
WMF-এর প্রতিবেদন এমন এক সময়ে এসেছে যখন স্পেসএক্স চাঁদে দুটি বেসরকারি রোবোটিক ল্যান্ডার প্রেরণ করেছে। একই সময়ে, নাসার আর্টেমিস প্রোগ্রামের লক্ষ্য হলো এই দশকের মধ্যেই চাঁদে স্থায়ী মানববসতি স্থাপন এবং মঙ্গল গ্রহে অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া।
WMF এর মতে, চাঁদের ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং সচেতনতার প্রয়োজন। এ পদক্ষেপ কেবল চাঁদের ঐতিহ্য রক্ষা নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ইতিহাসের মূল্যবান অধ্যায় সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা।
আপনার মতামত লিখুন :