ঢাকা শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫

এগিয়ে যাচ্ছে ‘বাহন’, কমছে এনটিটিএন মনোপলি

শাওন সোলায়মান

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৮, ২০২৫, ১২:৩১ পিএম

এগিয়ে যাচ্ছে ‘বাহন’, কমছে এনটিটিএন মনোপলি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) হিসেবে দেশে সর্বশেষ লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠান ‘বাহন লিমিটেড’। সরকারি বেসরকারি প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় অনেক পরে লাইসেন্স পেলেও বাজার দখলে দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে বাহন। 

বাহন যতটাই এগিয়ে যাচ্ছে, বাজারে অন্যান্যদের মনোপলি (একচ্ছত্র আধিপত্য) যেন ততটাই কমছে। বেসরকারি খাতের অপারেটর হিসেবে এনটিটিএন এর বাজারে ‘ফার্স্ট মুভার অ্যাডভানটেজ’ না থাকলেও, ‘ফাস্ট গ্রোয়িং’ প্রতিষ্ঠান হিসেবে দ্রুতই বাজার দখলে এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। 

স্বল্প সময়েই দেশজুড়ে বিস্তৃত ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের কারণে ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরের (এমএনও) মতো অপরাপর টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলো আস্থা রাখছে বাহনে।

২০০৮ সালের এনটিটিএন গাইডলাইনের আলোকে ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে এনটিটিএন অপারেটর লাইসেন্স দেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে তিনটি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা এবং বাকি দুইটি বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠান। তবে ২০১৪ সালে আবেদন করেও ২০১৯ সালের পূর্বে এই লাইসেন্স পাচ্ছিল না বাহন। 

বেসরকারি খাতে মাত্র দুইটি অপারেটর হওয়ায় এনটিটিএনের বাজারে মনোপলির অভিযোগ ছিল আইএসপি’দের। ঐ দুই প্রতিষ্ঠানের হঠকারিতার কাছে আইআইজি, আইএসপি’রা একরকম জিম্মি ছিল। 

একটি এনটিটিএন অপারেটরের আবার ইন্টারনেট সঞ্চালন প্রক্রিয়ার সবগুলো ধাপের লাইসেন্স ছিল। ফলে বাজারে আরেকটি এনটিটিএন অপারেটরকে লাইসেন্স দেওয়ার জোরালো দাবি ছিল আইএসপি’দের। এমন প্রেক্ষাপটে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এনটিটিএন লাইসেন্স দেওয়া হয় বাহন লিমিটেডকে।

২০২০ সালের জানুয়ারিতেই বাণিজ্যক কার্যক্রমে আসে বাহন। তবে কোভিড-১৯ করোনার জন্য শুরুতেই হোচট খায় প্রতিষ্ঠানটির পথচলা। অবশ্য লকডাউন উঠে যাওয়ার পরই দ্রুতই নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে মনযোগী হয় বাহন লিমিটেড। বাজারে দেরিতে এসেও অন্যান্য এনটিটিএন অপারেটরদের শক্ত প্রতিযোগীতা দিচ্ছে বাহন। 

জানা যায়, এখন পর্যন্ত দেশজুড়ে ৭ হাজার ৩০০ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড ফাইবার অপটিক তথা ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক স্থাপন করেছে প্রতিষ্ঠানটি, যা বাজারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এছাড়াও এক হাজার ৬০০ কিলোমিটার ফাইবার বাংলাদেশ রেলওয়ে, বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড (পিজিসিবি) এবং অন্যান্য এমএনও থেকে লিজ নেওয়া। পাশাপাশি ৫৪১ কিলোমিটার ওভার-হেড (ঝুলন্ত) ক্যাবল আছে। বর্তমানে এনটিটিএন বাজারের ১০ শতাংশ রয়েছে বাহনের দখলে এবং এটি উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

টেলিকম বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেড় শতাধিক আইএসপি প্রতিষ্ঠানকে বাহন ইতোমধ্যে সেবা দিয়েছে। বাহনের সেবা নিয়েছে সাতটি আইআইজি অপারেটর। এছাড়াও বেসরকারি খাতের তিনটি মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি এবং বাংলালিংককেও সেবা দিয়েছে বাহন।

এনটিটিএন হিসেবে এসব প্রতিষ্ঠানের আস্থাও অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি’র সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, এনটিটিএনের মাত্র ১০ শতাংশ বাজার বাহনের দখলে থাকলেও, বিবেচনায় রাখতে হবে যে, বাহন সবার পরে এসেছে। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো বাহনের তুলনায় ১০ বছর, ৮ বছর আগে এসেছে। 

আর এনটিটিএন হচ্ছে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগের ব্যবসা। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো তো রাষ্ট্রীয় অর্থায়নেই চলে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে এক প্রকার সরকারি অর্থেই নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করেছে। 

বাহন সেই তুলনায় সরকারের কোন সহায়তাই পায়নি। অন্যদের লিফটে করে ১০ তলায় উঠিয়ে বাহনকে বলা হয়েছে সিড়ি বেয়ে উঠতে। এসব বিবেচনায় বাহনের ১০ শতাংশ বাজার দখল বেশ অনুপ্রেরণার। 

তাছাড়াও আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো বাহনের থেকে আশানুরূপ সেবা পাচ্ছে। আইএসপিএবি’ও বাহনের অগ্রযাত্রায় সাহায্য করছে। গুলশান-বনানীর বিভিন্ন সড়কের ক্রসিং এ ট্রান্সমিশনে বাহনকে আইএসপিএবি থেকে সহায়তা করা হয়েছে। তবে এনটিটিএন সেবায় খরচ কমানোর মাধ্যমে ইন্টারনেটের খরচ আরও কমিয়ে আনতে বাহন অধিকতর ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করি।

টেলিকম বিশেষজ্ঞ ও বাহনের চিফ অপারেটিং অফিসার রাশেদ আমিন বিদ্যুত বলেন, খুব চ্যালেঞ্জিং প্রেক্ষাপটে বাহনের যাত্রা শুরু হয়। বাহনের প্রতি অংশীজনদের অনেক প্রত্যাশা এবং সেগুলো পূরণেই নিরলস কাজ করছি।

 যেকোন ব্যবসাতেই বিদ্যমান প্রতিযোগীদের মধ্যে থেকে নিজের জায়গা অর্জন করা খুবই কঠিন। গ্রাহকদের আস্থায় সেই কাজটি করার চেষ্টা করছি। আমরা মনে করি যে, এটা শুধু একটা ব্যবসা না বরং সুলভ মূল্যের ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক তৈরির মাধ্যমে দেশের ডিজিটালাইজেশনে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে বাহন। 

বাহনের প্রবৃদ্ধি এবং আগামী দিনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে রাশেদ আমিন বলেন, এখন পর্যন্ত ৭ হাজার কিলোমিটার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক স্থাপন করেছে বাহন। আগামী ৫ বছরে এটিকে ১০ হাজারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। 

২০২৫ সাল শেষ হওয়ার পূর্বে, দেশের প্রতিটি স্থানে নিরবিচ্ছিন্ন সঞ্চালন ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে একটি অগ্রসরমান এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে চায় বাহন। 

দেশজুড়ে ঝুলন্ত তার অপসারণে আরেকটি বড় লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে আমাদের। বাহনের ৫৪১ কিলোমিটার যে ওভার-হেড ক্যাবল আছে, সেটারও কারণ হচ্ছে ঐ স্থানে মহাসড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। যখনই কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেবে, সেখানকার তারও মাটির নিচে নিয়ে আসবো আমরা।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!