২০২৪ সাল বিদায় নিচ্ছে। কয়েকদিন পরেই শুরু হচ্ছে ২০২৫। প্রতিবছর কয়েক ধাপ করে এগিয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তির উন্নয়ন; বিশেষ করে এআইয়ের পরিধি বাড়ার সঙ্গে আরও প্রযুক্তির বিস্ময়কর আবিষ্কার হয়ে চলেছে। আসছে নতুন বছরে কোন প্রযুক্তি উঠে আসবে, আর সেসব প্রযুক্তি পণ্য আমাদের ডিজিটাল জীবনযাপনে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা জেনে রাখা জরুরি।
চলুন জেনে নেই ২০২৫–এ যে ৫ প্রযুক্তি পণ্য ট্রেন্ড চলতে পারে
এআই এজেন্ট
চলতি বছর মাইক্রোসফট নিয়ে এসেছে এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) এজেন্ট। এটি দিয়ে ব্যবহারকারীরা নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টমাইজড এআই এজেন্ট তৈরি করতে পারবেন। এর মূল লক্ষ্য হলো ব্যক্তিগত বা প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কাজকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন করতে সহায়তা করা এবং গ্রাহকদের দ্রুত ও সঠিক তথ্য দেওয়া। এই এআই এজেন্টগুলো প্রচলিত চ্যাটবট থেকে আরও উন্নত হবে।
কারণ, এগুলো নির্দিষ্ট কাজ নিজে নিজেই করতে পারবে এবং ব্যবহারকারীর নির্দেশনার কোনো প্রয়োজন হবে না। মাইক্রোসফট এরই মধ্যে কয়েকটি নমুনা এজেন্ট তৈরি করেছে। সেগুলো ব্যবহারকারীরা প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারবেন। এই এআই এজেন্টগুলো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকসেবা, বিক্রয় এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করবে।
বহুমুখী রোবট
একাধিক কাজ একাই করতে পারে, এমন রোবট নতুন বছরে সাড়া ফেলতে পারে। প্রথাগত রোবটের চেয়ে মাল্টিফাংশনাল রোবট ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষ করে উৎপাদন বাড়াতে শিল্পকারখানাগুলো এ ধরনের রোবট ব্যবহার করছে। আমাজন ও সিমেন্স উৎপাদন এবং কর্মদক্ষতা বাড়ানোর জন্য পলি ফাংশনাল রোবোটিকসে বিনিয়োগ করেছে। এ রোবটগুলো প্যাকেজিং, উৎপাদন যন্ত্রে সহায়তা, জীবাণুমুক্তকরণ ইত্যাদি করে দেবে। ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য খাতে এ ধরনের রোবটের প্রভাব দেখা যেতে পারে।
পোস্ট-কোয়ান্টাম ক্রিপ্টোগ্রাফি
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সংখ্যা বাড়ছে। টেক জায়ান্টরা কোয়ান্টাম কম্পিউটারে বিনিয়োগের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। এগুলোর অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহ্যগত এনক্রিপশন কৌশল হ্যাকারদের কবলে পড়তে পারে। পোস্ট-কোয়ান্টাম ক্রিপ্টোগ্রাফি কোয়ান্টাম আক্রমণ প্রতিরোধী অ্যালগরিদম তৈরি করে। ইতিমধ্যে গুগল, আইবিএম এবং মাইক্রোসফট কোয়ান্টাম প্রতিরোধী অ্যালগরিদম তৈরি করছে। নতুন বছর কোয়ান্টাম কম্পিউটার জগতে ডেটা সুরক্ষায় পোস্ট-কোয়ান্টাম ক্রিপ্টোগ্রাফির ব্যবহার বাড়বে।
ডিসইনফরমেশন সিকিউরিটি
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে মিথ্যা তথ্য। সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরনের মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেশি। ফলে সামাজিক, রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন দিকে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তাই এবার মেটা বা এক্সের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এআই দিয়ে মিথ্যা তথ্য ও ভুল প্রচারণা মোকাবিলা করতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে মেটার ফেসবুকে এর ব্যবহার দেখা গেছে। মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে সত্যতা যাচাই করা, ছদ্মবেশে ভুয়া প্রচার চালানো এবং বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন কমাতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। ২০২৫ সালে হয়তো জনপ্রিয় সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডিসইনফরমেশন সিকিউরিটির ব্যবহার দেখা যাবে।
হাইব্রিড কম্পিউটিং
হাইব্রিড কম্পিউটিং এমন একটি প্রযুক্তি, যা সাধারণ কম্পিউটার এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের সমন্বয় ঘটায়। এটি বর্তমান ও ভবিষ্যতের জটিল সমস্যা সমাধানে উন্নততর সমাধান দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে। এ ধরনের প্রযুক্তি জটিল সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তি একত্র করে। এর মূল উদ্দেশ্য, প্রতিটি প্রযুক্তির শক্তিকে কাজে লাগাতে হাইব্রিড পরিবেশ তৈরি করা। বড় আকারের ডেটা সেট বিশ্লেষণ, মার্কেট ট্রেন্ড প্রেডিকশন বা মেশিন লার্নিং মডেল, ক্রিপ্টোগ্রাফি, সাইবার সিকিউরিটিসহ বিভিন্ন কাজে এই কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। আইবিএম ও গুগল এ ধরনের কম্পিউটার উন্নত করার জন্য কাজ করছে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রযুক্তি বিভিন্ন শিল্পে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে।
সূত্র: টেকনোলজি ম্যাগাজিন
আপনার মতামত লিখুন :