রাজধানীর ফার্মগেট এলাকার আলোচিত টিপকাণ্ডের ঘটনায় তেজগাঁও কলেজের শিক্ষিকা ড. লতা সমাদ্দার ও নাট্যাভিনেত্রী সুবর্ণা মোস্তফাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে মামলা করেছেন কনস্টেবল নাজমুল তারেক। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকার চিফ ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে তিনি মামলাটি করেন।
এ মামলায় লতা সমাদ্দার ও সুবর্ণা মোস্তফা ছাড়াও নাট্যাভিনেতা আনিসুর রহমান মিলন, সাজু খাদেম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মলয় মালা, প্রাণ রায়, সায়মন সাদিক, মনোজ প্রামাণিক, স্বাধীন খসরু, চয়নিকা চৌধুরী, আশনা হাবিব ভাবনা, জ্যোতিকা জ্যোতি, উর্মিলা শ্রাবন্তী কর, দেবী সান, নাজনীন নাহার চুমকী, সুষমা সরকার ও কুসুম সিকদারকে আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পুলিশের সাবেক কনস্টেবল নাজমুল তারেক বলেন, ‘বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক এ ঘটনায় আমার এবং গোটা পুলিশ বাহিনীর ইমেজ নষ্ট হয়েছে। সে সময় যারা ঘটনাটি না জেনেই আমাকে দোষী করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানাভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে আমি মানহানির মামলা করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ মামলায় লতা সমাদ্দার ছাড়া আরও ১৭ জনের নাম উল্লেখ করেছি। যারা বিষয়টি না জেনে আমার ওপর দোষ চাপিয়ে টিপ পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদ করেন। আমাকে হেয় করা হয়েছে। পুলিশের ইমেজ নষ্ট হয়েছে। সে সময়ের কিছু স্কিনশর্ট ও গণমাধ্যমের সংবাদ দেখে আমি ডজনের বেশি অভিনেতা-অভিনেত্রী ও নির্মাতার নাম খুঁজে বের করেছি।’
তিনি মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, ২০২২ সালের ২ এপ্রিল সকাল ৮টা ২০ মিনিটে বৈধ কাগজপত্রসহ মোটরসাইকেল নিয়ে ডিউটিতে যাওয়ার জন্য বের হন। সেদিন শনিবার সরকারি নিয়োগ পরীক্ষা থাকার কারণে ফার্মগেটে প্রচণ্ড জ্যাম ছিল। তাই সিজান পয়েন্ট এলাকা হয়ে উল্টো দিকে মোটরসাইকেল চালিয়ে যান। তখন এক মহিলা মোবাইলে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলেন; অসাবধানতাবশত লতা সমাদ্দারের গায়ে মোটরসাইকেলের লুকিং গ্লাস লেগে যায়। তখন ড. লতা সমাদ্দার বলে ওঠেন, ‘এই বাস্টার্ড তুই কি উল্টো পথে যেতে পারিস? পুলিশের ক্ষমতা দেখাস?’ তৎক্ষণাৎ ঝগড়া-বিবাদে না জড়িয়ে তার কাছে সরি বলে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য মোটরসাইকেল ঘোরান।
কিন্তু তার ইউনিফর্মের সোল্ডার ব্যাজ ধরে টান দিলে মোটরসাইকেলসহ রাস্তার ওপরে পড়ে যান নাজমুল। পরে অনেক লোক জড়ো হয়ে গেলে নাজমুল তার চাকরির ক্ষতির কথা চিন্তা করে কোনো কিছু না বলে কর্মস্থলের দিকে চলে যান। ওই সময় নামজুল ছোটখাট বিষয় মনে করে ঘটনাটির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাননি। কিন্তু ঘটনার চার দিন পরে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারেন যে, শেরেবাংলা নগর থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। জিডিতে তাকে এক নম্বর আসামি উল্লেখ করে অভিযোগ করেন, কপালে টিপ পরায় পুলিশ সদস্যের হেনস্তার শিকার হয়েছেন লতা সমাদ্দার। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ঝড় তোলে। ফলে তাকে সমাজে ঘৃণার পাত্র হিসেবে বসবাস করতে করতে হচ্ছে।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, আলোচিত ঘটনাটি যাচাই-বাছাই না করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীসহ মুসলিম সমাজের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে নাট্যাভিনেতাসহ বিভিন্ন ব্যক্তি নিজেদের কপালে টিপ পরেন। যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াতে প্রচার করে তাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। এ ঘটনা বাংলাদেশের মুসলিম সমাজের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে বলে মনে করেন নাজমুল। সামাজিক ও পারিবারিকভাবে তাদের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে হেনস্তার শিকার হয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :