ঢাকা রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

হয়রানিমূলক মামলা থেকে মুক্তির দাবি মোহাম্মদ উল্ল্যাহ টিপুর পরিবারের

রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪, ০৭:৫৬ পিএম

হয়রানিমূলক মামলা থেকে মুক্তির দাবি মোহাম্মদ উল্ল্যাহ টিপুর পরিবারের

ছবি সংগূহীত

ঢাকা: ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। সেই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি দলীয় নেতা কর্মীদের দিয়ে নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যার অভিযোগ ওঠে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে।

এসব ঘটনায় ৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত সারা দেশে শতাধিকি মামলা হয়। যার বেশিরভাগই হত্যা মামলা। নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের করা এসব মামলায় ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষকে আসামি করা হয়েছে। সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযান চলমান রেখে একাধিক জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দায়ের হওয়া এসব মামলার উল্লেখযোগ্য আসামি ও অজ্ঞাত আসামিদের নিয়ে সারা দেশে পুলিশ এবং রাজনৈতিক নেতাদের আর্থিকভাবে বাণিজ্য করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় দায়েরকৃত একটি মামলা যার ৫৮৬১(৫)/৩ নাং- ১৪/১০৪৬, যে মামলার ৭৫ নং প্রকুত আসামি- যুবলীগ কর্মী মো. টিপু (ডিস টিপু) কে গ্রেপ্তার না করে মোহাম্মদপুর বেড়ীবাধের ইউনিক ট্রেডিং কর্পোরেশনের মালিক সাধারণ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ উল্ল্যাহ টিপুকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত ৮ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেপ্তারের পর চালান দেওয়া হয়েছে বলে, তার চাচা জাফর উল্লহ নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন প্রকৃত আসামিকে আড়াল করতে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর পবিবারের স্বজনেরা দাবি করেন, মোহাম্মদ উল্ল্যাহ টিপু একজন নিরাপরাধ ব্যক্তি। তিনি কোন মিচ-ইনফরমেশনের কারণে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এমন অবস্থায় আমরা এ মামলা থেকে মুক্তি চাই। আমরা বলতে চাই তিনি একজন সাধারণ ব্যবসায়ী এবং কখনো কোন রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল না।

সাধারণ ব্যবসায়ী (ভুক্তোভোগী) মোহাম্মদ উল্ল্যাহ টিপুর রাজনৈতিক বিষয়ে জানতে মোহাম্মদপুর তার সাথে একই এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, টিপু কোন রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না।

একইসাথে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন যুবলীগ নেতা জানান, আমার জানা মতে যে টিপুকে ধরা হয়েছে সে আ.লীগ, যুব লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগসহ আওয়ামী লীগের কোন রাজনিতীর নেতা বা কর্মী নয় । তবে অন্য একজন টিপু যে ডিস টিপু নামে পরিচিত তিনি সাবেক আ.লীগ এমপির লোক হিসেবে কাজ করতেন বলে জানি।
 


এ বিষয়ে, মোহাম্মদপুর থানা ডিএমপি ঢাকা, এর অফিসার ইনচার্জ জনাব আলী ইফতেখার হাসান জানান, আসামি হিসাবে যে টিপুকে র‌্যাব তাদের অভিযানে গ্রপ্তার করে থানায় হাজির করেছিল। আমরা প্রাথমিক ভাবে তাকে চার্জশিটে থাকা আসামির সাথে মিল থাকায় তাকে প্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

তবে যিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন, যদি তিনি একই ব্যক্তি না হন সেক্ষেত্রে তদন্ত শেষে মামলার এজহার থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হবে বলে জানান আলী ইফতেখার।

পুলিশ পরিদর্শক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, প্রকৃত আসামিরা অবশ্যই শাস্তি পাবে এবং নির্দোষ ব্যক্তিরা কখনো হয়রাণি না হোক সে বিষয়ে পুলিশ সচেতন রয়েছে।  টিপু এবং মোহাম্মদ উল্লাহ টিপু নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে তদন্ত সাপেক্ষ এটি সমাধানের কাজ করছি।

টিপু যে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত ছিলেননা এ মর্মে একটি প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছেন তার জন্মস্থান (স্থায়ী  ঠিকানা)  ৩ নং জিরতলী ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান (নোয়াখালী, বেগমগঞ্জ) ।

 

৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত সারা দেশে শতাধিক যে মামলা হয়েছে সে সকল মামলার এজাহারে উল্লিখিত ঘটনাস্থল ও আসামি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিহতদের স্বজনরাই। অনেকেই মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন।

মোহাম্মদপুর থানায় দায়েরকৃত মামলা (৫৮৬১(৫)/৩ নাং- ১৪/১০৪৬) এর ৭৫ নং আসামি যুবলীগ কর্মী মো. টিপু ও মোহাম্মদ উল্ল্যাহ টিপুর বিষয়ে কথা বলেছেন মামলার বাদী মো. রফিকুল ইসলাম।

তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন..

যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনি না । ঘটনা স্থলে তিনি ছিলেন কিনা তাউ সঠিক ভাবে আমি বলতে পারি না। আমি মামলার দিন স্থানিয় কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি আমাকে মামলা করার বিষয়ে সাহায্য করেন। তারা যাদের নাম দিয়েছেন আমি তাকে শুধু সাক্ষর করেছি। টিপু নামের যাকে আটক করা হয়েছে তিনিই যে আমার ভাইয়ের হত্যার সাথে জড়িত ছিল এ বিষয় আমি নিশ্চিত করিনি, উল্লেখ করে বাদী রফিকুল বলেন, আমার চাওয়া কোন নির্দোষ ব্যক্তি যেন হয়রানি না হয়। আমার ভাই মারা গেছে। তার ১৪ মাসের ছোট বাচ্চা আছে। আমি এখন সঠিক বিচার চাই এবং ক্ষতিপূরণ চাই। আমার ভাইয়ের ছোট বাচ্চার ভবিষ্যত যেন নষ্ট না হয়।

এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দায়ের হওয়া এসব মামলার আসামিদের নিয়ে চিন্তায় পড়েছে পুলিশ। এ বিষয়ে পুলিশ সদরদপ্তর বলছে, প্রাথমিক তদন্তে কোনো আসামির সম্পৃক্ততা না পাওয়া গেলে মামলা থেকে তার নাম প্রত্যাহার করা হবে। একই সঙ্গে সঠিক তথ্যপ্রমাণ ছাড়া এসব মামলায় কোনো সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা যাবে না।

গত ১০ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদরদপ্তর থেকে এ নিয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। পুলিশ সদরদপ্তরের ডিআইজি (কনফিডেন্সিয়াল) কামরুল আহসান সই করা চিঠিটি সারাদেশের প্রত্যেক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ফ্যাক্স করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সদরদপ্তর থেকে চিঠির বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

 

আরবি/এস

Link copied!