আয়নাঘরসহ যেসব স্থানে গুমের শিকার ব্যক্তিদের আটকে রাখা হয়েছিল সেসব স্থানসহ দেশের যে কোনো স্থান পরিদর্শনসহ যে কোনো ব্যক্তিকে তলব ও জিজ্ঞাসাবাদেরও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তদন্ত কমিশনকে। একইসঙ্গে কমিশনকে গুমের শিকার ব্যক্তির সন্ধান এবং গুমের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) এ সংক্রান্ত ক্ষমতা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এছাড়াও কমিশনকে ৯০ দিনের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
চলতি মাসের ২৭ আগস্ট হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করে দেয় সরকার। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তির সন্ধানে এ কমিশন করা হয়। ওই কমিশনের টার্মস অব রেফারেন্স (কার্যপরিধি) সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে রোববার নতুন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। একইসঙ্গে বাতিল করা হয়েছে ২৭ আগস্টের প্রজ্ঞাপনটি। তবে কমিশনের সব সদস্য অপরিবর্তিত রয়েছেন।
যেসব বিষয় তদন্ত করবে–
জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী তদন্ত কমিশনের কার্যপরিধি হচ্ছে..
(ক) ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, তদন্তকারী সংস্থা এবং অনুরূপ যে কোনো বাহিনী বা সংস্থার কোনো সদস্য বা সরকারের মদদে, সহায়তায় বা সম্মতিতে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তি-সমষ্টি কর্তৃক আয়নাঘর বা যে কোনো জ্ঞাত বা অজ্ঞাত স্থানে বলপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, তাদের শনাক্ত করা এবং কোন পরিস্থিতিতে গুম হয়েছিল তা নির্ধারণ করা এবং সে উদ্দেশ্যে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যসহ যেকোনো ব্যক্তি বা সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা।
(খ) বলপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনাগুলোর বিবরণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করা এবং উক্ত বিষয়ে সুপারিশ প্রদান করা।
(গ) বলপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান পাওয়া গেলে তাদের আত্মীয়-স্বজনকে অবহিত করা।
(ঘ) বলপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে অন্য কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালিত তদন্তের তথ্য সংগ্রহ করা।
(ঙ) বলপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ প্রদান করা।
(চ) বলপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় আইন সংস্কারের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রদান করা।
(ছ) বর্ণিত উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট যে কোনো কার্য করা।
কমিশনের সদস্য
পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিশনের প্রধান হলেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। সদস্য হিসেবে রয়েছেন– হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস ও মানবাধিকার কর্মী সাজ্জাদ হোসেন। কমিশনস অব ইনকোয়ারি অ্যাক্টের ৩ ধারার প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার এ কমিশন গঠন করেছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ তদন্ত কমিশনকে সাচিবিক সহায়তাসহ সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করবে ও কমিশনের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করবে।
আপনার মতামত লিখুন :