সারা দেশের অধস্তন আদালতের অর্ধশত বিচারক-কর্মকর্তার ‘অবিশ্বাস্য সম্পদ’-এর বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগ তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে পর্যবেক্ষণসহ এই আদেশ দেন। এ সময় আদালত বলেছেন, দুদকের যে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পত্রিকায় বিচারকদের দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে, রাষ্ট্রপক্ষ খোঁজ নিয়ে এ ধরনের অনুসন্ধান প্রতিবেদনের অস্তিত্ব পায়নি। শতভাগ নিশ্চিত হওয়া ছাড়া বিচারকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের রিট কোনোভাবেই কাম্য নয়। পরে আদালত রিট আবেদনটি সরাসরি খারিজ করে দেন।
এর আগে ‘অবিশ্বাস্য সম্পদ অর্ধশত বিচারক-কর্মকর্তার’ শিরোনামে গত ১৪ অক্টোবর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে সোমবার রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আমিমুল এহসান জুবায়ের।
রিটে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুদকের চেয়ারম্যান, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়। গতকাল রিটের পক্ষে তিনি নিজেই হাইকোর্টে শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল তানিম খান। দুদকের গোয়েন্দা শাখার গোপন অনুসন্ধানে বিচার বিভাগের ৫১ বিচারক-কর্মকর্তার দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে গত ১৪ অক্টোবর ওই জাতীয় দৈনিকটির প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
শুনানিতে আরশাদুর রউফ বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান জিরো টলারেন্স। সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। পুরো ইস্যুটি পত্রিকার খবর নিয়ে। প্রতিবেদনে অনুসন্ধানের কথা বলা হয়েছে। অথচ এমন কোনো রিপোর্ট নেই বলে দুদক জানিয়েছে। শুনানি নিয়ে আদালত জনস্বার্থ মামলার মানদণ্ড পূরণ না করা এবং কোনো সারবত্তা না থাকায় রিট সরাসরি খারিজ করে আদেশ দেন।
এর আগে ওই জাতীয় দৈনিকে ‘অবিশ্বাস্য সম্পদ অর্ধশত বিচারক-কর্মকর্তার, অ্যাকাউন্টে শতকোটি টাকা অনেকের’ শিরোনামে কথিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, বিচার বিভাগের অর্ধশতাধিক কর্মকর্তার অবিশ্বাস্য সম্পদের তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের অনেকেই অবৈধ উপায়ে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কেউ কেউ আবার হাজার কোটি টাকার মালিক। অনেকের আলিশান ফ্ল্যাট রয়েছে দেশে ও বিদেশে।
কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি কিনেছেন বেশ কয়েকজন। শত শত বিঘা জামির মালিকানা অর্জন করেছেন কয়েকজন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গোয়েন্দা শাখার গোপন অনুসন্ধানে বিচার বিভাগের ৫১ জনের দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের নামে-বেনামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্যও রয়েছে দুদকের কাছে। এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে খবর প্রকাশ করেছে দৈনিকটি।
এতে দুদক সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, শিগিরি তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অনুসন্ধান শুরু হবে। অনুসন্ধানে ওই সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নামে-বেনামে আরও সম্পদ পাওয়া যাবে। পরে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দুদকের অনুসন্ধানের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, গত এক দশকে বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনের পর আনিসুল হক আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলে ধীরে ধীরে কলুষিত হতে থাকে বিচার বিভাগ। ওই সব কর্মকর্তা মন্ত্রীর আস্থাভাজন হওয়ায় তারা ক্ষমতার অপব্যবহার, নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রতারণা ও জালিয়াতিতে জড়িয়ে পড়েন।
আপনার মতামত লিখুন :