জীবন সবসময় একভাবে চলে না। জয়-পরাজয় মিলেই জীবন। তবে অনেক সময় চলার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় হতাশা, গ্লানি, ব্যর্থতা কিংবা তীব্র অপমান। যার কারণে মানুষের মনে জন্ম নেয় একরাশ অভিমান। এমন পরিস্থিতিতে একটা সময় পর নিজেকে মূল্যহীন ভাবতে থাকে কেউ কেউ। এমনকি বেঁচে থাকার উৎসাহ হারিয়ে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
সেই মানুষটা চলে যাওয়ার পর কাছের মানুষগুলো আক্ষেপ করলেও তখন আর কিছুই করার থাকে না। অবশ্য কেউ হুট করেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন না। কোনো বিষয়ে হতাশা থেকেই আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় আসে। সে সময় নিজেকে একটু সামলে নিলেই জীবন বিসর্জন দিতে হতো না। তাই আমাদের প্রত্যেকের আত্মহত্যার চিন্তা মনে আসলে কী করা উচিত সে বিষয়ে জানা উচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশিরভাগ আত্মহত্যার সঙ্গে মানসিক রোগের সম্পর্ক থাকে। বিষণ্ণতা, ব্যক্তিত্বের সমস্যা, সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্তি ইত্যাদি মানসিক রোগের যথাযথ চিকিৎসা না করালে এবং সম্পর্কজনিত জটিলতা, ব্যর্থতা ইত্যাদি কারণে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটে থাকে।
যখন আত্মহত্যার চিন্তা আসবে সে সময়ে কী করা উচিত এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, সবার আগে আমাদের বুঝতে হবে কোনোকিছু স্থায়ী নয়। জীবনে পরাজয় এলেও সেটা একসময় কেটে যাবে। তার জন্য দরকার ধৈর্য।
যখন কোনো ব্যক্তির মনে আত্মহত্যার চিন্তা আসবে সে সময় তাকে সবার প্রথমে নিজেকে শান্ত করতে হবে। কিছু সময় নিয়ে ভাবতে হবে আমার জীবনে এই যে কষ্টটা আছে, এটার সমাধান আছে। হতে পারে এই মুহূর্তে আমি সেটা করতে পারছি না এটা স্বাভাবিক বিষয়। তবে অবশ্যই এর সমাধান আছে।
আত্মহত্যার চিন্তা এলে ভাবতে হবে আমি হয়তো পথ খুঁজে পাচ্ছি না। আমার পথের শেষে যে আলো আছে আমি তা দেখতে পাচ্ছি না। আমাকে এই অবস্থায় একটু ধৈর্য ধরতে হবে। আমি আত্মহত্যা চিন্তা বাদ দিয়ে মাত্র একটা মাস শেষ চেষ্টা করে দেখি কেউ সাহায্য করতে পারে কিনা। যদি একজন ডাক্তার কিংবা সাইকোলজিস্টের কাছে গিয়ে আমার আশা ভঙ্গ হয়, তাহলে আমি আরো অভিজ্ঞ সাইকোলজিস্টের কাছে যাবো। সমাধানের পথ আমি খুঁজে নেবো।
সহজ কথায় আত্মহত্যার চিন্তা আসতেই পারে, আর এই চিন্তা থেকে বের হতে সমস্যার সম্মুখীন হলে একজন অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। শরীরের রোগে চিকিৎসকের কাছে গেলে মনের সমস্যার জন্য মনের চিকিৎসকের কাছে যাওয়াটাও খুব স্বাভাবিক ব্যাপার, এটা আমাদের বুঝতে হবে।
আমরা কেউ জানি না মৃত্যুর পরের জীবন কেমন হতে পারে। হয়তো ওই জীবনে আরো কঠিন কিছু অপেক্ষা করছে। আর এই জীবনে কঠোর চেষ্টা করলে ভালো কিছু হতে পারে। যখন একজন মানুষ এই বিষয়টা বুঝতে পারবে, সেটা তাকে সুইসাইড থেকে অনেকাংশে বাঁচিয়ে নেবে।
এমন অনেক আত্মহত্যার ঘটনায় দেখা গেছে, মানুষটা বেঁচে থাকতে তার বন্ধু, কাছের মানুষ কিংবা পরিবারের সদস্যদের নিজের কষ্টের কথা জানিয়েছেন। আর তার চলে যাওয়ার পর সেই কথা বলে হা-হুতাশ করে সেইসব আপনজনেরা। কিন্তু, তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। তবে এক্ষেত্রে যার সঙ্গে সে নিজের হতাশা শেয়ার করে তার বসে থাকা উচিত না।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, যে সময় শুনবেন আপনার কাছের কেউ হতাশার কথা বলে নিজেকে শেষ করতে চাইছেন, তখনই তাকে বুঝাতে হবে। প্রথমে তাকে জাজ না করে তার কথা ভালোভাবে শুনতে হবে। তবে তাকে কোনো পরামর্শ দেবেন না। অনেক সময় কথা বললে যে হতাশায় আছেন সে একটু হালকা বোধ করেন।
তার কথা শোনার পর যদি মনে হয়, সে একটু হালকা হয়েছে, তখন তাকে বলতে হবে আমি তোমাকে একজন সাইকোলজিস্টের কাছে নিয়ে যেতে চাই।তবে কোনোভাবেই বলা যাবে না যে তুমি নিজে যাও। যিনি তার হতাশার কথা শুনেছেন তিনি তাকে নিজে একজন অভিজ্ঞ সাইকোলজিস্টের কাছে নিয়ে যাবেন। এই দুটো কাজ করলেই প্রথম অবস্থায় আত্মহত্যার চিন্তা থেকে মানুষটাকে বের হয়ে আসার পথে এক ধাপ এগিয়ে নেওয়া যাবে।