ঢাকা শনিবার, ০১ মার্চ, ২০২৫

ঢাকার কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজার

মিনহাজুর রহমান নয়ন
প্রকাশিত: মার্চ ১, ২০২৫, ০৫:১২ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

আবার বছর ঘুরে আসছে রমজান। রমজানকে কেন্দ্র করে বিরাট ইফতার বাজার জমে ওঠে সেই মুঘল আমল থেকেই। কালের বিবর্তনে নতুন অনেক খাবার আইটেম যোগ হলেও ঐতিহ্যবাহী অনেক কিছু এখনো পাওয়া যায়, আর তা খাওয়ার জন্য মানুষ ভিড় করে দূর-দূরান্ত থেকে। ঢাকার কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজারের বিস্তারিত নিয়ে এবারের ফিচার। ঢাকার কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজার-

চকবাজার ইফতারপাড়া
ঢাকার সবচেয়ে বড়, বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং জনপ্রিয় ইফতার বাজার হলো পুরান ঢাকার চকবাজার। দুপুরের পর থেকেই শায়েস্তা খাঁর আমলের নির্মিত শাহী মসজিদের সামনের রাস্তাতে বসতে শুরু করে ইফতারের হাট। প্রায় ১০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই ইফাতারিপাড়ার বিশেষ আকর্ষণ হলো বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙায় ভইরা লইয়া যায়। এ ছাড়াও বিশেষ আকর্ষণের মধ্যে থাকে খাসির গোশতের রানের কাবাব, সুতি কাবাব, মুঠি জালি কাবাব, জালি কাবাব, নারগি চাপ, টিকা কাবাব, শাক ফুলুরি, ডিম চপ, দই বড়া, কবুতর ও কোয়েলের রোস্ট, হালিম, নুরানি লাচ্ছি, পেস্তা বাদামের শরবত, পরোটা, পেঁয়াজু, আলুর চপ, ছোলা বুট, ঘুগনি, বেগুনি, বোম্বে ও শাহী জিলাপি।

বেইলি রোডের অভিজাত ইফতার
চকের পরেই ইফতারের জন্য নামকরা জায়গাটি হলো বেইলি রোড। রোজার এই একটি মাস পুরো বদলে যায় খাবারপাড়া নামে খ্যাত জায়গাটি। বেইলি রোডের ইফতার ৮০-এর দশক থেকে পরিচিতি লাভ করেছে। এখানকার অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলোর পাশাপাশি স্কুল-কলেজের সামনের রোডে ফুটপাতের ওপর অস্থায়ী দোকানগুলোতেও শোভা পায় নানা ইফতারের পসরা।
রকমারি খাবারগুলোর মধ্যে হালিম দেখা যায় কয়েক পদের। যেমন- শাহী হালিম, মুরগির হালিম, ও খাসির হালিম। অন্যান্য খাবারগুলোর মধ্যে আছে রেশমি কাবাব, গরুর চপ, বিফ আচারি, গরুর কালো ভুনা, বিফ কড়াই, ব্রেন মসল্লা, কার্লি চিকেন, মুরগির আস্ত রোস্ট, চিকেন ফ্রাই, চিকেন উইংস, মুরগির জাম্বু রোস্ট, খাসির কলিজা, গরুর শিক, সুতি কাবাব, টানা পরোটা, কিমা পরোটা, চিপ রোল, চিকেন সাসলিক, চিকেন টিক্কা, চিংড়ি বল, চিকেন বটি কাবাব, চিকেন তান্দুরি, চিকেন তাওয়া চাপ, বিফ তাওয়া, চিকেন গ্রিল, দই বড়া, জাফরানি জিলাপি, এবং ডাবলির ঘুগনি।

মিরপুর ইফতার বাজার
মিরপুর-২ থেকে শুরু করে, মিরপুর-১০, পল্লবী, কল্যাণপুর জায়গাগুলো ইফতারের জন্য বেশ প্রসিদ্ধ। মিরপুর ১১ নম্বরে স্থানীয়দের প্রথম পছন্দ বনলতা রেস্তোরাঁ। এখানকার ইফতারি আইটেমগুলোর মধ্যে আছে ফ্রাইড অনথন, ভেজিটেবল রোল, ফ্রাইড চিকেন, স্প্রিং রোল, ডিম চপ, আলুর চপ, চিকেন ড্রামাস্টিক, বারবিকিউ উইংস, চিকেন ললিপপ, চিকেন সাসলিক, বোনলেস চিকেন, চিকেন পপকর্ন, চিকেন এগ রোল, চিকেন শর্মা, বার-বি-কিউ, গরু ও খাসির হালিম, বিফ কাঠি কাবাব, এবং তান্দুরি চিকেন। এ ছাড়া বোম্বে তিলের জিলাপি, ইরানি জিলাপি, লাচ্ছি, স্পেশাল মাঠা, এবং দইয়ের বিক্রিও অনেক বেশি হয়। বেশ সাশ্রয়ী মূল্যে ইফতারের খাবার কিনতে হলে যেতে হবে মিরপুরের বিহারি ক্যাম্পের হোটেলগুলোতে। সেখানে স্বল্প মূল্যে জম্পেশ ইফতারি হয়ে যায়।

মোহাম্মদপুর ইফতার বাজার
ঢাকার খাবারের এলাকাগুলোর মধ্যে মোহাম্মদপুরের সুনামও কম নয়। এখানকার বিহারি ক্যাম্প-এ প্রতিবছর রোজায় ইফতারের জমজমাট আয়োজন হয়। সাধারণ ইফতার ছোলা-মুড়ি, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি তো আছেই! তার সঙ্গে স্পেশাল চাপ, হালিম, কাবাব, মগজ ও আস্ত মুরগির রোস্টের ক্ষেত্রে এই এলাকার জুড়ি মেলা ভার। আরও আছে শেখেরটেক, মোহাম্মদপুর কৃষি বাজার, আদাবর, জাপান গার্ডেন সিটির পাশে টোকিও স্কয়ার, এবং প্রিন্স বাজার। অভিজাত রেস্তোরাঁর সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত ভিড় হয় রাস্তার ধারের ছোট-বড় ইফতারের দোকানগুলোতেও। এসব জায়গায় ইফতারের সঙ্গে ঘুগনি মাখিয়ে খাওয়াটা স্থানীয়দের কাছে রীতিমতো প্রচলিত একটি খাবার।