তলপেটে ব্যথা হয় কেন? প্রতিকারের উপায়

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ১০, ২০২৫, ১১:৫৩ এএম

তলপেটে ব্যথা হয় কেন? প্রতিকারের উপায়

ছবিঃ সংগৃহীত

তলপেটে ব্যথা একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, যা হালকা থেকে তীব্র হতে পারে এবং এটির কারণও ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। কখনো এটি সাময়িক ও নিরীহ, আবার কখনো গুরুতর রোগের ইঙ্গিত। তাই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এ বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার।  

বিশেষজ্ঞদের মতে, নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই তলপেটে ব্যথার কিছু সাধারণ কারণ রয়েছে। যদি তলপেটের ডানদিকে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, তাহলে এটি অ্যাপেন্ডিসাইটিসের লক্ষণ হলে হতেও পারে। অন্যান্য সম্ভাব্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে মূত্রথলির সংক্রমণ, মূত্রথলিতে পাথর, প্রস্রাবের ইনফেকশন, কোষ্ঠকাঠিন্য বা হজমের সমস্যা। তবে, যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং সঙ্গে পেটে কোনো চাকা অনুভূত হয়, শরীরে জ্বর আসে বা ওজন কমতে শুরু করে, তাহলে পেটের টিউমার, টিবি বা অন্যান্য গুরুতর রোগের আশঙ্কাও থাকতে পারে। তাই এসব লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।


তলপেটে ব্যথার কারণ

বিশেষজ্ঞদের মতে, তলপেটে ব্যথার পেছনে বিভিন্ন শারীরিক ও চিকিৎসাগত কারণ থাকতে পারে। কিছু প্রধান কারণ হলো- হজমজনিত সমস্যা (গ্যাস, অ্যাসিডিটি বা কোষ্ঠকাঠিন্য), ইনফেকশন প্রস্রাবনালী সংক্রমণ (UTI), খাদ্যজনিত সংক্রমণ, কিংবা অন্ত্রের সংক্রমণ, শারীরিক পরিবর্তন ও হরমোনজনিত কারণ (নারীদের ক্ষেত্রে মাসিক চলাকালীন ব্যথা, ডিম্বাশয়ের সিস্ট বা গর্ভধারণজনিত কারণ) বা অন্ত্র ও পরিপাকতন্ত্রের জটিলতা (অ্যাপেনডিসাইটিস, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS), আলসার বা অন্ত্রের কোনো বাধা)।

তলপেটে ব্যথার লক্ষণ ও সতর্কবার্তা

যুক্তরাজ্যের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্য অনুযায়ী, পেট হল পাঁজর ও শ্রোণির (পেলভিস) মধ্যবর্তী অংশ, যেখানে পাকস্থলী, যকৃত, পিত্তথলি, অগ্ন্যাশয়, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ থাকে। একসঙ্গে এদের পাচনতন্ত্র বলা হয়।  

এই অঙ্গগুলোর যেকোনো একটিতে সামান্য সমস্যা বা অস্বস্তি হলেই পেটে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। তলপেটে ব্যথার সঙ্গে যদি নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা যায়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি-  

  • দীর্ঘস্থায়ী বা ক্রমশ তীব্র ব্যথা  

  • বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া  

  • রক্তমিশ্রিত মল বা প্রস্রাব  

  • জ্বর ও অতিরিক্ত ক্লান্তি  

  • খাবার খেতে বা হজম করতে অসুবিধা  

তলপেটে ব্যথা হলে কী করবেন?

ডাক্তারদের মতামত অনুযায়ী, তলপেটে ব্যথা শুরু হলে প্রাথমিকভাবে করণীয় কিছু কাজ আছে যা ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। যেমন, হালকা গরম পানি পান করলে তা হজমে সহায়তা করবে। ভারি খাবার এড়িয়ে হালকা ও সহজপাচ্য খাবার খেতে হবে। গরম পানির থলি বা হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ব্যথা কমাতে সহায়ক। কখনই নিজে নিজে ওষুধ না খেয়ে তার আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি। সেটি যেকোনো ব্যাথার ক্ষেত্রেই। তবে পেটে ব্যথার ক্ষেত্রে, ব্যথা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা ক্রমশ বাড়তে থাকে বা অন্যান্য গুরুতর উপসর্গ দেখা দেয় তবে দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।

ঘরোয়া প্রতিকার

তলপেটে ব্যথা উপশমে কিছু ঘরোয়া উপায় আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে কিছু ঘরোয়া উপায় উল্লেখ করা হলো- 

 আদা বা আদা চা
আদা প্রাচীনকাল থেকে প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, বিশেষ করে ব্যথা ও বমি ভাব দূর করতে। এতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও প্রদাহ বিরোধী উপাদান পেটের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। ব্যথা উপশমে আদা কুঁচি করে চিবিয়ে খাওয়া বা আদা চা পান করা যেতে পারে।  

কলা ও আপেল
কলা ও আপেল উচ্চমাত্রায় ফাইবারসমৃদ্ধ, যা হজম প্রক্রিয়া সহজ করে এবং পেটব্যথা কমাতে সহায়ক। এগুলো বমি ভাব ও ডায়রিয়া প্রতিরোধেও কার্যকর ভূমিকা রাখে।  

টোস্ট 
টোস্ট বা হালকা পোড়া রুটি সহজে হজম হয় এবং এটি পেটের অতিরিক্ত অ্যাসিড শোষণ করে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। বিশেষত, টোস্ট বা শুকনো বিস্কুট খেলে বমি ভাবও উপশম হতে পারে।  

পুদিনা পাতা
পুদিনা পাতা একটি প্রাকৃতিক ব্যথানাশক, যা পেটব্যথা ও বমি ভাব কমাতে সহায়ক। এটি হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং পেট খারাপ হলে আরাম দেয়। পুদিনা পাতা চিবিয়ে খাওয়া বা চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে পান করা যেতে পারে।  

অ্যাপেল সিডার ভিনেগার
অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে থাকা অ্যাসিড ও স্টার্চ অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়াগুলোর কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা হজমের জন্য উপকারী। এক কাপ পানিতে এক চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার ও এক চামচ মধু মিশিয়ে পান করলে পেট ব্যথা উপশম হতে পারে।  

দই 
দই অত্যন্ত উপকারি একটি খাবার। পেটের ব্যথা কমাতেও এটি বেশ উপকারী। এতে উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা অন্ত্রের সমস্যা দূর করে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।  

গরম পানির সেঁক 
পেটে ব্যথার ক্ষেত্রে গরম পানির সেঁক বেশ কাজে দেয়। এটি পেশির টান কমাতে সাহায্য করে জার ফলে ব্যথার উপশম হয়।  


এগুলো সহজলভ্য ও প্রাকৃতিক উপায়, যা পেটের ব্যথা উপশমে কার্যকর হতে পারে। তবে ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী বা তীব্র হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তলপেটে ব্যথা নির্ভর করে তার কারণের ওপর। সাধারণত হালকা ব্যথা হলে ঘরোয়া উপায়ে সমাধান সম্ভব, তবে তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। সুস্থ থাকতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা অনুসরণ করুন।  
 

আরবি/এসএস

Link copied!