স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের কাছে চিয়া সিড এখন বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু দাম কিছুটা বাড়তি বলে অনেকেই চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ থেকে বঞ্চিত হন। প্রায় চিয়া সিডের মতো দেখতে আরেকটি বীজ হলো তোকমা। এর দাম চিয়া সিডের চেয়ে কিছুটা কম। তবে দুটি বীজের পুষ্টিগুণ প্রায় কাছাকাছি। চিয়া সিড গোলাকার আর তোকমা কিছুটা লম্বাটে দানার। ওজন নিয়ন্ত্রণে অনেকেই এখন চিয়া সিড খাচ্ছেন। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চিয়া সিডের চেয়ে তোকমাদানা বেশি কাজে দেয়।
বিশেষ করে অনেকেই আছেন যাঁদের চিয়া সিড খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়। তাঁদের জন্য তোকমা উপকারী। চিয়া সিডের চেয়ে তোকমা দ্রুত হজম হয়। তোকমায় আছে ফাইবার বা আঁশ। ১ টেবিল চামচ তোকমায় আঁশ পাবেন ৭ গ্রাম। চিয়া সিডের তুলনায় তোকমায় প্রোটিনও বেশি।
তোকমাদানা

অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য: তোকমাদানা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বা প্রদাহরোধী গুণাবলী দিয়ে পূর্ণ। যা শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: তোকমাদানা বিশেষ করে উচ্চ পরিমাণে অ্যালফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড এর উৎস। যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ফাইবার: এটি ভালো পরিমাণ ফাইবার সরবরাহ করে, যা পাচন প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে।
এন্টিঅক্সিডেন্ট: তোকমাদানা অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পূর্ণ, যা শরীরের কোষগুলোকে মুক্ত র্যাডিক্যাল থেকে রক্ষা করে।
হরমোন সুষম রাখে: এটি মহিলাদের হরমোন সুষম রাখতে সাহায্য করতে পারে, বিশেষ করে মাসিক চক্রের সময়।
চিয়া সিড

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: চিয়া সিডও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের ভালো উৎস, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
ফাইবার: চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। যা পাচনকে উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে কার্যকর।
প্রোটিন: চিয়া সিড প্রোটিনের ভালো উৎস। যা শরীরের পেশী গঠন ও মেরামত করতে সাহায্য করে।
পুষ্টি: চিয়া সিডে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ও জিঙ্কও রয়েছে। যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
হাইড্রেশন: চিয়া সিড পানির সাথে মিশে জল শোষণ করে। তাই এটি শরীরের হাইড্রেশন বজায় রাখতে সহায়তা করে।
কোনটা বেশি উপকারী?
তোকমাদানা বেশি উপকারী হতে পারে যদি আপনি ওমেগা-৩ এবং প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য চান। বিশেষ করে হৃদরোগ এবং প্রদাহ কমাতে।
চিয়া সিড বেশি উপকারী হতে পারে যদি আপনি ফাইবার, প্রোটিন, এবং পুষ্টি চান, যেগুলি শক্তি এবং হাইড্রেশন বজায় রাখতে চান।
তবে দুটো সিডই স্বাস্থ্যকর এবং শরীরের জন্য উপকারী। এদের ব্যবহারকে ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভ্যাসে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তা আরও বেশি উপকারি হতে পারে।
তোকমাদানা খাওয়ার নিয়ম
ভেজানো অবস্থায় খাওয়া: তোকমাদানা পিষে বা ভিজিয়ে খাওয়া ভালো। কারণ পুরো তোকমাদানা হজম হতে পারে না ফলে শরীর পুরোপুরি পুষ্টি নিতে পারে না। পিষে নেওয়া তোকমাদানা ভালোভাবে শরীরে শোষিত হয়। গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে, স্মুদি বা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
দিনে ১-২ চামচ: সাধারণত প্রতিদিন ১-২ চামচ তোকমাদানা খাওয়া পরিমিত পুষ্টি বয়ে আনে। বেশি খাওয়ার ফলে গ্যাস বা পেটে অস্বস্তি হতে পারে।
সালাদে বা দইয়ে যোগ করা: আপনি তোকমাদানা সালাদ বা দইয়ের মধ্যে মিশিয়ে খেতে পারেন, যা স্বাদ ও পুষ্টি বাড়িয়ে দেয়।
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
ভিজিয়ে খাওয়া: চিয়া সিডের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল এটি জল শোষণ করে জেলির মত রূপ নেয়। সেহেতু চিয়া সিডকে অন্তত ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে।
দিনে ১-২ চামচ: আপনি প্রতিদিন ১-২ চামচ চিয়া সিড খেতে পারেন। তবে বেশি খেলে পেট ফুলে যেতে পারে তাই পরিমাণে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
স্মুদি বা জল: চিয়া সিডের সঙ্গে পানি বা স্মুদি তৈরি করা যেতে পারে। ভিজিয়ে তাতে কিছু ফল বা মধু মিশিয়ে খেলে তা আরও সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হবে।
যেকোনো খাবারে যোগ করা: চিয়া সিড বিভিন্ন ধরনের খাবারের মধ্যে যোগ করা যেতে পারে। যেমন: ওটমিল, দই, সালাদ বা প্যানকেক।
বিভিন্ন পরিস্থিতিতে খাওয়ার পরামর্শ
ওজন কমানোর জন্য: যদি আপনি ওজন কমাতে চান তবে সিড দুটো ভিজিয়ে খাওয়া উচিত। যা পেট ভরিয়ে রাখে এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমায়।
হজমের সমস্যা: ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় সিড দুটি পাচনতন্ত্রের জন্য উপকারী। তবে প্রচুর পানি পান করতে হবে যাতে ফাইবার হজমের সমস্যা না সৃষ্টি করে.
শরীরের শক্তি বাড়াতে: চিয়া সিড বা তোকমাদানা দিনভর শক্তি সরবরাহে সহায়তা করতে পারে। এটি শক্তির অভাব কাটাতে সহায়ক।
এগুলি সাধারণ পরামর্শ তবে যদি আপনার নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে তাহলে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া ভালো।