ঢাকা রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করুন ঘরোয়া উপায়ে

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২৫, ১২:২৮ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

কোষ্ঠকাঠিন্য বা কনস্টিপেশন একটি সাধারণ কিন্তু অস্বস্তিকর সমস্যা, যা অনেক মানুষকে প্রভাবিত করে। এটি তখন ঘটে যখন অন্ত্রের চলাচল অনিয়মিত হয়ে যায় এবং মল শক্ত ও শুষ্ক হয়ে যায়, যা মলত্যাগ করা কঠিন করে তোলে। 
কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, ফাইবারের অভাব, পানিশূন্যতা, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা এবং কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। তবে, কিছু সহজ ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা সম্ভব।  

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার কিছু কার্যকরী ঘরোয়া পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হলো।  

ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান

ফাইবার বা আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সবচেয়ে কার্যকরী উপায়গুলোর মধ্যে একটি। ফাইবার দুই ধরনের হয়: দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয়। দ্রবণীয় ফাইবার পানিতে দ্রবণীয় হয়ে জেলের মতো পদার্থ তৈরি করে, যা মল নরম করতে সাহায্য করে। অদ্রবণীয় ফাইবার মলের আকার বাড়ায় এবং অন্ত্রের মাধ্যমে মল চলাচলকে ত্বরান্বিত করে।  

ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার:
- শাকসবজি: পালং শাক, ব্রকলি, গাজর, মটরশুঁটি।  
- ফল: পেয়ারা, আপেল, নাশপাতি, বেরি, কলা।  
- শস্য ও বীজ: ওটস, ব্রাউন রাইস, কিনোয়া, ফ্ল্যাক্সসিড।  
- ডাল ও বাদাম: মুগ ডাল, ছোলা, আলমন্ড, আখরোট।  

প্রতিদিন ২৫-৩০ গ্রাম ফাইবার গ্রহণ করার চেষ্টা করুন। তবে হঠাৎ করে অতিরিক্ত ফাইবার খাওয়া শুরু করলে পেট ফাঁপা বা গ্যাসের সমস্যা হতে পারে, তাই ধীরে ধীরে ফাইবারের পরিমাণ বাড়ান।  

পর্যাপ্ত পানি পান করুন

পানিশূন্যতা কোষ্ঠকাঠিন্যের একটি প্রধান কারণ। পর্যাপ্ত পানি পান না করলে মল শক্ত ও শুষ্ক হয়ে যায়, যা মলত্যাগ করা কঠিন করে তোলে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করুন। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার সময় আরও বেশি পানি পান করা জরুরি, কারণ ফাইবার সঠিকভাবে কাজ করার জন্য পানির প্রয়োজন হয়।  

নিয়মিত ব্যায়াম করুন 

শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা কোষ্ঠকাঠিন্যের একটি সাধারণ কারণ। নিয়মিত ব্যায়াম অন্ত্রের চলাচলকে উদ্দীপিত করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটা, জগিং, যোগব্যায়াম বা সাইকেল চালানো অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।  

প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার খান

প্রোবায়োটিক হলো উপকারী ব্যাকটেরিয়া, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে। প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।  

প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার:
- দই  
- কেফির  
- কিমচি  
- সাওয়ারক্রাউট  
- মিসো স্যুপ  

ঘরোয়া পানীয় ব্যবহার করুন

কিছু ঘরোয়া পানীয় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খুবই কার্যকরী।  

গরম পানিতে লেবু ও মধু:

সকালে খালি পেটে এক গ্লাস গরম পানিতে একটি লেবুর রস ও এক চা চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। এটি হজম প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।  

আলু বোখারার রস:

আলু বোখারার রস কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার একটি প্রাকৃতিক উপায়। সকালে খালি পেটে এক গ্লাস আলু বুরার রস পান করুন।  

ত্রিফলা চূর্ণ:

ত্রিফলা আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খুবই কার্যকরী। রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম পানিতে এক চা চামচ ত্রিফলা চূর্ণ মিশিয়ে পান করুন।  

নিয়মিত মলত্যাগের অভ্যাস গড়ে তুলুন 

নিয়মিত মলত্যাগের অভ্যাস গড়ে তোলা কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন একই সময়ে মলত্যাগের চেষ্টা করুন, বিশেষ করে সকালে। মলত্যাগের সময় তাড়াহুড়ো না করে সময় নিন এবং চাপ প্রয়োগ করবেন না।  

ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন

ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল পানিশূন্যতা সৃষ্টি করে, যা কোষ্ঠকাঠিন্যকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। অতিরিক্ত কফি, চা বা অ্যালকোহল পান করা থেকে বিরত থাকুন।  

তিলের তেল বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন

তিলের তেল বা অলিভ অয়েল মল নরম করতে সাহায্য করে। রাতে ঘুমানোর আগে এক চা চামচ তিলের তেল বা অলিভ অয়েল গরম পানির সাথে মিশিয়ে পান করুন।  

মানসিক চাপ কমিয়ে আনুন

মানসিক চাপ হজম প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করতে পারে। যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমিয়ে আনুন।  

যদি সমস্যা স্থায়ী হয়, ডাক্তারের পরামর্শ নিন

যদি ঘরোয়া উপায়গুলো প্রয়োগ করার পরও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর না হয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য অন্ত্রের অন্যান্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে, যেমন ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS) বা অন্ত্রের বাধা।  

কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ সমস্যা, তবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করে এটি দূর করা সম্ভব। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার, পর্যাপ্ত পানি পান, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি। যদি সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।  

এই সহজ ঘরোয়া উপায়গুলো অনুসরণ করে আপনি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে পারেন এবং সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।