সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫

চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ১২, ২০২৫, ১২:৩৭ পিএম

চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা

ছবিঃ সংগৃহিত

আজকাল স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের ডায়েটে চিয়া সিডের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলছে। এই ছোট্ট বীজটি দেখতে যতটাই সাধারণ, এর গুণে ততটাই অসাধারণ। চিয়া সিড ছোট দেখতে হলেও পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সুপারফুড এটি।

এতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও বিভিন্ন খনিজ উপাদান, যা শরীরের নানা প্রয়োজনে কাজ করে।

নিয়মিত চিয়া সিড খেলে হজমশক্তি বৃদ্ধি, ওজন নিয়ন্ত্রণ, হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো, এবং ত্বক-চুলের যত্ন নেয়া সহজ হয়। চলুন আজকে জেনে নিই চিয়া সিড খাওয়ার বিভিন্ন উপকারিতা এবং এটি খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত।

চিয়া সিড সকালে খালি পেটে খেলে কি হয়?

সকালে খালি পেটে চিয়া সিড খেলে শরীর ডিটক্স হয় এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়। এতে থাকা ফাইবার দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে, ফলে খাওয়ার পরিমাণ কমে যায়- যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

এ ছাড়া খালি পেটে চিয়া সিড খাওয়া রক্তে সুগার লেভেল ব্যালেন্স করতে সাহায্য করে এবং এনার্জি লেভেলও বাড়ায়।

চিয়া সিড কখন খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়?

চিয়া সিড খাওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো:

  • সকালে খালি পেটে- হজম এবং মেটাবলিজম বৃদ্ধিতে সহায়ক।
  • খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে- পেট ভরাট অনুভব হয়, ফলে খাবারের পরিমাণ কমে।
  • ওয়ার্কআউটের আগে/পরে- এনার্জি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

এক চামচ চিয়া সিডে কত ক্যালরি থাকে?

এক চামচ (প্রায় ১২ গ্রাম) চিয়া সিডে থাকে প্রায়:

  • ৫৮ ক্যালরি
  • ২.০ গ্রাম প্রোটিন
  • ৪.০ গ্রাম ফ্যাট (মূলত ওমেগা-৩)
  • ৫.০ গ্রাম ফাইবার
  • ৪.৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট

চিয়া সিড কতক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়?

চিয়া সিড সাধারণত ২০-৩০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। এই সময়ের মধ্যে বীজ ফুলে ওঠে এবং জেলি-জাতীয় আকার ধারণ করে, যা হজমের জন্য উপকারী।

যদিও অনেকে এক রাত ভিজিয়ে রেখে সকালে খেতে পছন্দ করেন, যা হজমের ক্ষেত্রে আরও উপকারী।

ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

ওজন কমানোর চেষ্টায় অনেকেই নানা কিছু ট্রাই করছেন- ডায়েট, জিম, ডিটক্স! কিন্তু জানেন কি, একটা ছোট্ট বীজ চুপিচুপি আপনাকে দারুন সাহায্য করতে পারে?

হ্যাঁ, কথা বলছি চিয়া সিডের! পেট ভরা রাখা, ক্ষুধা কমানো, হজম ঠিক রাখা- সবকিছুতেই দারুন একটিভ এই সুপারফুড। তবে যেভাবে খুশি খেলেই হবে না, চিয়া সিড খাওয়ারও আছে কিছু গোপন ট্রিক! চলুন জেনে নিই ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার সঠিক নিয়মগুলো।

সকালে খালি পেটে: ১ গ্লাস পানিতে ১ চামচ চিয়া সিড ভিজিয়ে খালি পেটে খান।
খাবারের আগে: খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে খেলে ক্ষুধা কমে।
স্মুদি বা জুসে: স্বাস্থ্যকর ব্রেকফাস্টের অংশ হিসেবে যোগ করা যায়।

চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা

  • হজমে সহায়ক
  • ওজন কমাতে কার্যকর
  • হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে (ওমেগা-৩)
  • হাড়ের জন্য ভালো (ক্যালসিয়াম)
  • ব্রেইন ফাংশন উন্নত করে
  • ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে

চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা

যদিও এটি খুবই স্বাস্থ্যকর, তবে কিছু সতর্কতা রাখা জরুরি:

  • অতিরিক্ত খেলে গ্যাস্ট্রিক বা পেট ফাঁপা হতে পারে।
  • পানি ছাড়া খেলে গিলতে সমস্যা হতে পারে।
  • হরমোনাল সমস্যা থাকলে সাবধান থাকতে হতে পারে।
  • অ্যালার্জির ঝুঁকি

টিপ: দিনে ১ বা ২ চামচের বেশি চিয়া সিড খাবেন না। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান করুন, কারণ অতিরিক্ত ফাইবার পানির অভাবে আপনার কষ্টের কারণ হতে পারে।


চিয়া সিড খাওয়ার পরিমাণ

প্রতিদিন ১ বা ২ চা চামচ চিয়া সিডই যথেষ্ট। অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়, বিশেষ করে এতে থাকা ফাইবারের কারণে।

চিয়া সিড খেলে কি এলার্জি হয়?

চিয়া সিড পুষ্টিগুণে ভরপুর হলেও, সবার শরীর তা একভাবে তা গ্রহণ করে না। অনেকেই জানেন না যে এই সুপারফুড থেকেও কিছু মানুষের শরীরে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

চুলকানি, র‍্যাশ, গলা ফুলে যাওয়া কিংবা হজমের সমস্যা-  এমন কিছু উপসর্গ চিয়া সিডে অ্যালার্জির লক্ষণ হতে পারে। তাই চিয়া সিড খাওয়ার আগে জানা জরুরি, এটি আপনার শরীরের সঙ্গে মানাবে কি না। চলুন জেনে নিই, চিয়া সিড খেলে অ্যালার্জি হয় কিনা, হলে কেন হয়, এবং কীভাবে সতর্ক থাকতে পারেন।

হ্যাঁ, কিছু মানুষের ক্ষেত্রে চিয়া সিডে অ্যালার্জি হতে পারে। লক্ষণগুলো হলো:

  • চুলকানি বা র‍্যাশ
  • গলা ফুলে যাওয়া বা গলার মধ্যে অস্বস্তি
  • বমি ভাব বা ডায়রিয়া
  • শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া (গুরুতর ক্ষেত্রে)

অ্যালার্জির উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।

চিয়া সিড একটি দারুণ পুষ্টিকর খাদ্য, যা নিয়ম মেনে খেলে শরীরের জন্য অনেক উপকারে আসে। তবে যেকোনো সুপারফুডের মতোই, এটি খাওয়ার নিয়ম, পরিমাণ ও সতর্কতা মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার ডায়েটে চিয়া সিড যোগ করতে চাইলে প্রথমে ছোট পরিমাণে শুরু করুন, এবং শরীরের প্রতিক্রিয়া দেখুন। আর দরকার হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 

আরবি/এসএস

Link copied!