রাশিচক্রের প্রথম চিহ্ন মেষ, যা নিয়ন্ত্রিত হয় মঙ্গল গ্রহ দ্বারা, যা কর্ম, যুদ্ধ ও আকাঙ্ক্ষার গ্রহ। ভেড়া দ্বারা চিত্রিত, মেষ হলো সর্বদা এগিয়ে চলা এক সাহসী যোদ্ধা। উচ্ছ্বসিত, উদ্যমী এবং নতুন পথে ঝাঁপিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে কখনো পিছপা নয় এমন রাশি।
বসন্তের শুরুতেই মেষের আবির্ভাব, যা প্রতীক নতুন শুরুর। তাই মেষ রাশির মানুষরা প্রকৃতিগতভাবেই নেতা, উদ্যোগী, এবং পরিবর্তনের প্রবর্তক।
ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য
মেষ রাশি রাশিচক্রের প্রথম চিহ্ন হিসেবে নতুন শুরুর প্রতীক। এই রাশির জাতকরা সাধারণত আত্মবিশ্বাসী, উদ্যমী এবং চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসে। মঙ্গল গ্রহ দ্বারা শাসিত মেষরা সহজাতভাবে নেতৃত্বদানে পারদর্শী ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাবের অধিকারী।
তারা যেমন দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তেমনি আবেগপ্রবণ ও তাড়াহুড়ো করতেও ভালোবাসে। চলুন, বিস্তারিতভাবে জেনে নেয়া যাক আপনি বা আপনার প্রিয় মানুষটি মেষ রাশির হলে তার ব্যক্তিত্বে কী কী বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকে তা নিয়ে।
মেষ রাশির জাতক বা জাতিকারা মূলত আত্মবিশ্বাসী, সাহসী, আবেগপ্রবণ ও তাড়াহুড়ো করা স্বভাবের, প্রতিযোগিতাপূর্ণ ও উৎসাহী হয়ে থাকে। তবে এই ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলোর পাশাপাশি তাদের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে যা বেশ নেতিবাচক হতে পারে। আগুন যেমন আলো দেয়, তেমন পুড়িয়েও দিতে পারে।
এ রাশির জাতক বা জাতিকাদের অপেক্ষা ওদের সহ্য হয় না, মূলত তারা অধৈর্য। এছাড়া এরা রাগী হলেও হঠাৎ যেমন রেগে যায়, আবার দ্রুত শান্তও হয়ে যায়। এ রাশির জাতক জাতিকারা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। অন্য কার কিছু দেখা বা বিবেচনার আগে, এরা সবসময়ই নিজেদেরটা ভাবে।
প্রেম ও সম্পর্ক
ভালোবাসায় মেষ পুরোপুরি নিবেদিতপ্রাণ। ওদের প্রেম হয় আগুনের মতো. হঠাৎ জ্বলে ওঠে, দুঃসাহসিক, এবং রোমাঞ্চকর। মেষের সঙ্গী হতে চাইলে তৈরি থাকতে হবে সারপ্রাইজ, সাহসী পদক্ষেপ এবং মাঝমাঝে খানিকটা নাটকীয়তার জন্য।
মেষের জন্য মানানসই সঙ্গী:
- সিংহ ও ধনু
- মিথুন
- তুলা
কর্মজীবন ও উচ্চাশা
মেষ রাশির মানুষদের বসিয়ে রাখা মানে তাদের শক্তি নষ্ট করা। এরা এমন পরিবেশে ফুলে-ফেঁপে ওঠে, যেখানে প্রতিযোগিতা আছে, টানটান উত্তেজনা আছে, আর যেখানে নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায়। অফিসের ডেস্কে আটকে পড়া বা রুটিনমাফিক কাজ মেষদের জন্য একেবারেই না।
বরং এ জাতক জাতিকাদের দরকার এমন একটা রোল যেখানে ওরা নিজেই লিড দিতে পারে, নিজস্ব আইডিয়া কাজে লাগাতে পারে, আর নতুন কিছু শুরু করার স্বাধীনতা পায়।
তাই আশ্চর্যের কিছু নেই যে অনেক মেষকে দেখা যায় উদ্যোক্তা হিসেবে, যেখানে নিজের স্বপ্নকে বাস্তব করার জন্য ঝুঁকি নিতে হয় তাদের প্রতিনিয়ত। কেউ কেউ আবার যায় ক্রীড়া বা ফিটনেস দুনিয়ায়, কারণ ওদের মধ্যে প্রচণ্ড এনার্জি আর ফিজিক্যাল ড্রাইভ থাকে।
সেনাবাহিনী বা জরুরি পরিষেবায় মেষের সাহসী আর অ্যাকশনপ্রিয় স্বভাব একেবারে ফিট করে যায়। আবার কেউ কেউ সৃজনশীল নেতৃত্বের জায়গায় থাকে- যেমন কোনো প্রজেক্ট ম্যানেজ করা, নতুন কিছু তৈরি করা বা অন্যদের অনুপ্রাণিত করা।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার কি জানেন? মেষরা শুধু একটা চাকরি খুঁজে না। তারা এমন কিছু খোঁজে যেখানে একটা উদ্দেশ্য আছে। তারা চায় কাজটা অর্থবহ হোক, যেন তারা জানে কেন কাজটা করছে। আর যদি লিডারশিপের সুযোগ মেলে, তাহলে তো কথাই নেই- তখন তারা পুরো ফায়ারমোডে চলে যায় এ রাশির মানুষেরা।
স্বাস্থ্য ও সুস্থতা
মেষ রাশির মানুষদের শরীর আর মন- দুটোই একেবারে তালগোল পাকানো রকেটের মতো! এদের শক্তি এতটাই বেশি যে যদি সেটা কোথাও খরচ না হয়, তাহলে এক সময় সেটা ওদের বিরক্তি, রাগ বা মানসিক চাপ হয়ে বের হয়।
শরীরতত্ত্ব অনুযায়ী, মেষের শারীরিক সংযোগ থাকে মাথা ও মুখ অংশের সঙ্গে। তাই অনেক সময় মাথাব্যথা, সাইনাস, ঘাড়-কাঁধে টেনশন বা মানসিক চাপজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যখন অনেক কিছু একসঙ্গে করতে গিয়ে বিরক্ত বা হতাশ হয়ে পড়ে।
মেষদের জন্য খুব দরকার শারীরিকভাবে অ্যাকটিভ থাকা। যেন শরীরের সেই অতিরিক্ত এনার্জিটা সঠিকভাবে ব্যবহার হয়। জিম, দৌড়ানো, মার্শাল আর্ট, ডান্স, সাঁতার বা যেটাই হোক না কেন, কিছু না কিছু শরীরচর্চা এ রাশির জাতক জাতিকাদের জন্য অপরিহার্য। নইলে তারা খুব সহজেই অলসতা আর হতাশার মধ্যে ঢুকে পড়তে পারে।
যা মেষদের একদম মানায় না!
আর হ্যাঁ, মানসিক শান্তির জন্য একটা মন্ত্র মনে রাখা দরকার- ধৈর্য। মেষরা অনেক সময় এত তাড়াহুড়ো করে ফেলে যে পরে হোঁচট খেতে হয়। যদি একটু থেমে, গভীর শ্বাস নিয়ে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে শেখে, তাহলে শুধু সুস্থ থাকবে না, বরং জীবনটাও অনেক বেশি হালকা আর আনন্দময় হবে।
মেষ রাশির মানুষদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ
- উপাদান: অগ্নি
- শাসক গ্রহ: মঙ্গল
- প্রতীক: ভেড়া
- রং: লাল, গাঢ় লাল ও সাহসী রং
মেষ হওয়া মানে জীবনকে পুরো উন্মাদনা নিয়ে জাপটে ধরা। এরা স্বপ্নকে তাড়া করে, ভালোবাসে উদ্দামভাবে, এবং নিয়ম ভাঙে দারুণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে। মেষই সেই আগুনের স্ফুলিঙ্গ, যা অন্যদের জ্বালাতে অনুপ্রেরণা দেয়। হ্যাঁ, কখনো কখনো একটু বেশি গরম হয়ে যায়, তবে মেষ ছাড়া দুনিয়াটা বেশ নীরব হতো বলেই মনে হয়!
আপনার মতামত লিখুন :