ঢাকা সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫

কাঁঠাল পাতার উপকারিতা

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৩, ২০২৫, ১১:৩৫ এএম
কাঁঠাল পাতা, ছবি- সংগৃহীত

কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। গ্রীষ্মকালে এ ফলটি হয়ে থাকে। ফলটি স্বাদ এবং গন্ধের জন্য অনেকের কাছেই প্রিয়। কাঁঠাল আঁশ জাতীয় খাবার। এক কাপ কাঁঠালে মেলে ১৫৭ ক্যালোরি, ৩৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৪০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২ গ্রাম ফ্যাট, ৩ গ্রাম ফাইবার এবং ৩ গ্রাম প্রোটিন।

এ ছাড়া অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, কপার ও ম্যাংগানিজেরও উৎস কাঁঠাল। কাঁঠালের বিচিও খাওয়া হয়। কাঁঠালের পাতাও আমাদের বিভিন্ন উপকারে আসে।

কাঁঠাল পাতার উপকারিতা কি, কাঁঠাল পাতার বৈশিষ্ট এবং কাঁঠাল পাতা কীভাবে ব্যবহার করব এসব বিষয় নিয়ে আজকের আর্টিকেল-

কাঁঠাল পাতার বৈশিষ্ট্য

বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে কাঁঠালের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। কাঁঠাল গাছের ফল এক প্রকার হলদে রঙের, মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে। কাঁঠাল পাতার বৈশিষ্ট হলো, এ গাছের পাতার রং গাঢ় সবুজ, উপবৃত্তাকার ও সরল হয়ে থাকে। এ গাছের পাতাগুলো গাছের সঙ্গে একান্তভাবে সাজানো থাকে।

এ গাছের পাতার বোঁটাসহ  সমগ্র শরীরে গাঢ়  শ্বেতকোষ বিদ্যমান থাকে। এর পত্রমূকুল দুটি খড় সাদা, স্বল্পায়ু প্রায় নৌকাকৃতি উপবৃতে আবৃত থাকে। এ পাতাগুলোর রং গাঢ় কমলা রঙের হলে, পাতাগুলো নিজ থেকেই ঝরে পড়ে যায়।

কাঁঠাল পাতার উপকারিতা

কাঁঠাল পাতার মধ্যে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি’ এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্সসহ থায়ামিন, ইথানল, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফাইবার, জিঙ্ক ইত্যাদি উপাদান রয়েছে। এ ছাড়াও কাঁঠাল পাতার মধ্যে কার্বহাইড্রেটের মাত্রা বিদ্যমান থাকে।

ছাগলের খাবার কাঁঠাল পাতা

ছাগলের খাবারের বেশ উপযোগী একটি উপাদান হলো কাঁঠাল গাছের পাতা। ছাগলের খুবই পছন্দের একটি খাবার হলো কাঁঠাল পাতা, এতই পছন্দ যে কাঁঠাল পাতার সঙ্গে লেগে থাকা ডগাও পর্যন্ত খেয়ে ফেলে ছাগল। কাঁঠাল পাতা ছাগল খেলে, ছাগলের পাচনক্রিয়া শক্তিশালী হয়, হজমে ভালো কাজ করে এবং মাংসপেশী মজবুত হয়।

পাতা খেলে ছাগলের মুখে রুচি হয় ফলে অন্যান্য খাবারের প্রতি চাহিদা বাড়ে। কাঁঠাল পাতা খাওয়ার ফলে ছাগলের মাংস ও দুধ বৃদ্ধি পায়। এ খাবার ছাগল অধিক মাত্রায় খেয়ে ফেললেও ছাগলের কোনো পার্শপ্রতিক্রিয়া দেখা দিবে না।

রোগীদের জন্য কাঁঠাল পাতা

কাঁঠাল পাতা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি ঔষুধি পাতা। যারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত তারা কাঁঠালের পাতার রস বের করে খেতে পারেন। এ পাতার রস খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ ছাড়া এ পাতার রস খেলে চোখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

ব্যথা নিরাময়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে কাঁঠাল গাছের পাতা। যেকোনো ধরনের ব্যাথা আপনার শরীরে দেখা দিলে কিংবা কোনো জায়গা ক্ষত হলে, সেসব স্থানে কাঁঠাল গাছের পাতা ব্লেন্ড করে লাগালে আরাম পাওয়া যায়।

এ ছাড়াও চর্মরোগ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে কাঁঠাল পাতার রস।

কাঁঠাল পাতার মধ্যে বিভিন্ন ভেষজ গুণ রয়েছে। একজিমা, চুলকানি রোগীদের এ গাছের কচি পাতা সিদ্ধ করে খাওয়ানো হয়। এ ছাড়া এ পাতা দাদ স্থানেও লাগালে দাদ থেকে উপশম পাওয়া যায়।

কাঁঠাল পাতার রস কোষ্টকাঠিন্য, ডায়াবেটিস এবং চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ব্যবহার করা হয়। ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কাঁঠাল গাছের কচি পাতা ব্লেন্ড করে ব্যবহার করা হয়।

কাঁঠাল পাতার ব্যবহার

জ্বালানির কাজে কাঁঠাল পাতা

কাঁঠাল গাছের সবকিছুই উপকারী। কাঁঠাল গাছের ফল, ডালপালা, কাণ্ড, শিকড়, বাকল, বীজসহ এর পাতাও বেশ উপকারী। কাঁঠাল গাছের পাতার মধ্যে বিভিন্ন গুণাগুণ রয়েছে এবং এ পাতা বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

কাঁঠাল গাছের পাতা জ্বালানির কাজে ব্যবহার করা হয়। এ গাছের পাতা শুকিয়ে গেলে নিজ থেকেই ঝড়ে পড়ে যায়, সেই শুকনো পাতাগুলো না ফেলে জ্বালানির কাজে ব্যবহার করতে পারেন।

পিঠা তৈরিতে কাঁঠাল পাতা

কাঁঠাল পাতা বড়া অথবা পাকোড়া বানাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। কাঁঠালের কয়েকটি কচি পাতা পরিষ্কার করে ধুয়ে কুচি কুচি করে কেটে, তার সাথে কাঁচামরিচ কুচি, লবণ, হলুদের গুঁড়া এবং পরিমাণ মতো চালের গুঁড়া একসাথে সব উপকরণ ভালো করে মিশিয়ে, সেই মিশ্রণটি তেলে ভেজে নিলে হয়ে যাবে কাঁঠাল পাতার বড়া।

কাঁঠাল পাতার বড়া ছাড়াও এ পাতা পিঠা বানানোর কাজেও ব্যবহার করা হয়। এ পিঠা বানাতে, কাঁঠাল পাতা, তালের রস, চালের গুঁড়া, চিনি, নারিকেল, দুধ, বেকিং পাউডার এবং শলার কাঠি বা টুথপিক এসব উপকরণ লাগে।

এ পিঠা তালের রস এবং চালের গুঁড়া একসঙ্গে মিশিয়ে কয়েক ঘণ্টা ঢেকে রাখার পর তার সঙ্গে সব উপকরণ মিশিয়ে নিতে হবে।

এরপর কাঁঠাল পাতা পরিষ্কার করে নিয়ে সে পাতার কোণ বানিয়ে টুথপিক দিয়ে আটকিয়ে তার ভেতরে মিশ্রণটি দিয়ে ওপরে নারিকেল ছড়িয়ে ভাপের পাত্রে কিছুক্ষণ ঢেকে রাখবেন, হয়ে যাবে কাঁঠাল পাতা দিয়ে পিঠা।