প্রাচীনকাল থেকেই রূপচর্চা ও রান্নার মসলা হিসেবে মেথির বীজ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। গ্রামে মেথির পাতা শাক হিসেবেও খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। সুগন্ধের জন্য অনেকেরই পছন্দ পাঁচফোড়নের অন্যতম উপাদান মেথি। উচ্চ রক্তচাপ কমাতে জাদুকরি ভূমিকা পালন করে মেথি ভেজানো পানি। শুধু তা–ই নয়, নিয়মিত মেথি ভেজানো পানি খেলে শরীরের মেটাবলিজম বা বিপাক প্রক্রিয়া উন্নত হবে। মেটাবলিজম ভালো থাকলে সহজে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ভারতীয় উপমহাদেশে বহু বছর ধরে মেথির বীজ ভেজানো পানি ডায়াবেটিস, ওজন নিয়ন্ত্রণ ও কোষ্ঠকাঠিন্যে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মেথির বীজে আছে গ্লুকোমেনান নামক ফাইবার, যা খাদ্যের সঙ্গে গ্রহণকৃত চিনি অন্ত্রে শোষণপ্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করে। এ ছাড়া এতে থাকা বিভিন্ন ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড অগ্ন্যাশয়কে ইনসুলিনমুক্ত করতে সহায়তা করে।
হজমে সাহায্য করে
খালি পেটে মেথি ভেজানো পানি খাওয়ার কিছু উপকারিতা রয়েছে, যা প্রাচীন আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে প্রচলিত। মেথি গ্যাস, বদহজম এবং অ্যাসিডিটির সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। খালি পেটে মেথি ভেজানো পানি পান করলে হজম প্রক্রিয়া সক্রিয় হয়।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
মেথির বীজ রক্তের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই এই পানি নিয়মিত পান করা ডায়বেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।
কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়
মেথির বীজে থাকা দ্রবণীয় ফাইবার কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে যার ফলে কমে হৃদ্রোগের ঝুঁকি।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
মেথির বীজ ভেজানো পানিতে থাকা ফাইবারের কারণে অনেকক্ষণ ধরে পেট ভরা অনুভূত হয়, যার ফলে ক্যালরি গ্রহণ কমে ওজন নিয়ন্ত্রণে আসা শুরু করে।
ত্বকের দাগ কমায়
মেথির বীজে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য আছে, যা ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে, ব্রণ বা দাগ কমাতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়
মেথির বীজে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে শরীরকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে
মেথির বীজ প্রোটিন এবং নিকোটিনিক অ্যাসিডের একটি ভালো উৎস, যা চুলের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। মেথি বীজের পানি পান করলে চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় এবং চুল পড়া কমে।
মেথি খাওয়ার সঠিক নিয়ম কী?
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি চিবিয়ে খেলে বা এক গ্লাস পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে সেই পানি পান করলে শরীরের রোগ-জীবাণু মরে, বিশেষত কৃমি মরে, রক্তের চিনির মাত্রা কমে। রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বা চর্বির মাত্রা কমে যায়। গরমে ত্বকে যে ঘা, ফোড়া, গরমজনিত ত্বকের অসুখ হয়, এই অসুখগুলো দূর করে মেথি।
মেথি কি মলত্যাগে প্রভাব ফেলে?
মেথি ব্যবহারের প্রথম কয়েকদিন হালকা ডায়রিয়া এবং গ্যাস হতে পারে, যদিও এটি গ্রহণকারীর সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সাথে সাথে এটি প্রায় সবসময়ই কমে যায় । কম। মেথি বীজে দ্রবণীয় ফাইবার বেশি থাকে, যা কার্বোহাইড্রেট হজম এবং শোষণকে ধীর করে রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। মেথি (ফেনুগ্রীক) একটি বহুল ব্যবহৃত ভেষজ উদ্ভিদ, যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য সুপরিচিত। তবে, এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অপকারিতাও রয়েছে, যা সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি।
অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া
মেথি খাওয়ার পর ত্বকে ফুসকুড়ি, চুলকানি বা শ্বাসকষ্টের মতো অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এমন ক্ষেত্রে মেথি খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
গর্ভাবস্থায় ব্যবহার
গর্ভবতী মহিলাদের মেথি খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এটি গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট
হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের সমস্যায় মেথি খাওয়া শ্বাসকষ্ট বাড়াতে পারে।
পেটের সমস্যা
পেটের গণ্ডগোল, যেমন গ্যাস, পেটব্যথা বা ডায়রিয়া থাকলে মেথি খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ এটি পেটের সমস্যা বাড়াতে পারে।
রক্তে শর্করার মাত্রা
মেথি রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। তবে, রক্তে শর্করার মাত্রা কম থাকলে মেথি খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
শিশুদের জন্য
শিশুদের মেথি খাওয়ানো এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এটি তাদের জন্য উপযুক্ত নয় এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :