এলাচ স্বাদ ও সুগন্ধের জন্য দারুণ এক উপকরণ। মসলা চা হোক বা সাধারণ দুধ-চা, স্বাদ বাড়াতে অনেকেই এলাচ ব্যবহার করেন। পায়েসে এলাচ খাবারের স্বাদটাই বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুণ। শুধু তাই নয়, খাওয়ার পর আবার অনেকেই মুখশুদ্ধি হিসাবেও এলাচ খান। অনেকেই আছেন এলাচ পছন্দ করেন, অনেকে আবার করেন না। তবে খালি পেটে একটি করে এলাচ শরীরের জন্য অনেক উপকারী।
গুরুত্বপূর্ণ দিক
এলাচ বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সুস্বাদু মসলা। কালো এবং সবুজ এলাচ উভয়েরই রয়েছে অনন্য উপকারিতা। গর্ভবতী মহিলারা, স্তন্যপান করানো মায়েরা এবং যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের প্রতিদিন এলাচ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।

এলাচ এর উপকারিতা:
১. এলাচ পেটের সমস্যা ও অ্যাসিডিটি দূর করে। বিপাকতন্ত্রকে সক্রিয় রাখে এবং হজমে সাহায্য করে। বুক জ্বালা, বমি বমি ভাব থেকে মুক্তি পেতে এলাচ মুখে দিলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
২. দেহের ক্ষতিকর টক্সিন দূর করে দিতে এলাচের জুড়ি নেই। যাদের ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে শুরু করেছে, তাঁরা নিয়মিত সকালে খালি পেটে এলাচ ভেজানো জল খেলে বলিরেখা কমে ত্বক টানটান হয়।
৩. মধু, লেবুর রস ও গরম জলের সঙ্গে একটা এলাচ মিশিয়ে দিয়ে পান করলে শ্বাসকষ্ট দূর হবে। যাঁরা হুপিংকাশি ও ফুসফুস সংক্রমণের মতো সমস্যায় ভোগেন তাঁদের জন্য এলাচ খুবই উপকারী।
৪. এলাচ হাঁপানি ও হৃদরোগ নিরাময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখে ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ ছাড়া এলাচ রক্তসঞ্চালনেও সহায়ক। প্রতিদিন এলাচ খেলে রক্তের ঘনত্ব সঠিক থাকে।
৫. মুখে খুব বেশি দুর্গন্ধ হয়? একটি এলাচ নিয়ে চিবাতে থাকুন। এলাচ মুখের দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস করে। এছাড়াও মাড়ির ইনফেকশন, মুখের ফোঁড়াসহ দাঁত ও মাড়ির নানা সমস্যা থেকে রক্ষা করে।
৭. গবেষণায় দেখা যায় নিয়মিত এলাচ খাওয়ার অভ্যাস ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এলাচ দেহে ক্যানসারের কোষ গঠনে বাঁধা প্রদান করে থাকে।
৮. অনেক সময় ভারী কোনও জিনিস তুলতে গেলেই পেশিতে টান ধরে। এ ক্ষেত্রে ছোট বা বড় এলাচ গরম জলে ফুটিয়ে খেলে তত্ক্ষণাত্ উপশম হয়।
৯. গরম জলে চা পাতা, এলাচ গুঁড়া ও মধু দিয়ে ফুটিয়ে তৈরি করে নিন এলাচ চা। মাথা ব্যথা করলে এক কাপ গরম এলাচ চা খেয়ে দেখুন। ব্যথা নিমেষেই দূর হবে। এ ছাড়াও এলাচ মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে।
১০. এলাচ অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে ভরপুর। সর্দি-কাশির সমস্যাতেও এলাচ খেলে সুফল পাবেন।
১১. যারা ব্রণ, ব্রণ বা ত্বক সংক্রান্ত অন্য কোনো সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্যও রাতে এলাচ খাওয়া উপকারী। এছাড়া শুষ্ক ও ঝরে পড়া চুলের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেও এলাচ খেলে উপকার পাওয়া যায়। রাতে হালকা গরম পানির সাথে এলাচ খেলে ত্বক সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা কমে যায় এবং ত্বক উজ্জ্বল হয়। আসলে এলাচ রক্ত শুদ্ধ করতে কাজ করে, যার ফলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ভালো থাকে।

১২. আজ, কাজের চাপ, প্রতিযোগিতা এবং সব ধরণের মানসিক চাপ এতটাই বেড়ে গেছে যে বেশিরভাগ মানুষ রাতে শান্তির ঘুমও পায় না। ভালো ঘুমের অভাবে তা তাদের সারাদিন প্রভাবিত করে। এতে তাদের উৎপাদনশীলতা কমে যায়, মানসিক চাপ বাড়ে এবং এই চক্র এভাবে চলতে থাকে। আপনিও যদি একই রকম পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে থাকেন, তাহলে এলাচ আপনাকে অনেক সাহায্য করতে পারে। এ জন্য রাতে ঘুমানোর আগে মুখে দুটি এলাচ রাখুন, ভালো করে চিবিয়ে তারপর হালকা গরম পানি পান করুন। এটি নিয়মিত করলে কয়েকদিনের মধ্যেই দেখবেন অনেকটাই উপশম।
১৩. যারা হার্টের ও হার্টের ভালভের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য এলাচি একটি আদর্শ পথ্য। প্রতিবার খাওয়ার পর একটি এলাচি চিবিয়ে খেলে হার্ট সুস্থ থাকবে। অথবা দুটি এলাচি গরম পানিতে জ্বাল দিয়ে সেই পানি চায়ের মতো করে খেলেও উপকার পাওয়া যাবে।
১৪. বয়স বাড়ার সঙ্গে যেসব সমস্যা বেড়ে যায়, তার মধ্যে একটি হলো প্রস্রাবের গন্ডগোল। বিশেষ করে যাঁদের প্রস্রাব হতে চায় না, তাঁদের জন্য দুটি এলাচি এক কাপ পানিতে গরম করে চায়ের মতো করে পান করলে এ জটিল সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
১৫. মাথাব্যথার অনেক কারণ থাকে। সে জন্য স্থায়ী চিকিৎসা প্রয়োজন। মাথাব্যথা থেকে তাৎক্ষণিক মুক্তি পেতে চাইলে একটি এলাচি চিবিয়ে খেলে কিছুক্ষণের জন্য মাথা ব্যথা সারবে। সেই সঙ্গে এলাচি তেলের ব্যবহার করলে সুফল পাওয়া যায়।

১০০ গ্রাম এলাচে নিম্নলিখিত পুষ্টি সরবরাহ করে:
১১ গ্রাম প্রোটিন
০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল
৬৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট
৭ গ্রাম মোট চর্বি
এলাচ চিবিয়ে খেলে যে উপকার পাবেন
আদার মতোই এলাচও পেটের নানা সমস্যা এবং হজমের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে এই এলাচ। বিপাকতন্ত্রকেও সক্রিয় রাখে। কখনও বুক জ্বালা, বমি বমি ভাব হলে এলাচ চিবিয়ে নিন, কিছু ক্ষণেই স্বস্তি মিলবে।
অপকারিতা
অতিরিক্ত এলাচ খেলে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে । পেট খারাপ, বদহজম, ডায়রিয়ার মতো উপসর্গগুলিও কিছু মানুষের মধ্যে দেখা যায় । এই ধরনের সমস্যা রোধ করতে পরিমিত পরিমাণে এলাচ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এটি এলাচের অন্যতম প্রধান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।