ঢাকা মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫

অনুজীবের উপকারিতা-অপকারিতা

লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৪, ২০২৫, ১১:৩৯ এএম
ছবি: সংগৃহীত

আমাদের চারপাশে এমন অসংখ্য জীব রয়েছে, যাদের আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না। এরা এতই ক্ষুদ্র যে শুধু বিশেষ ধরনের যন্ত্র দিয়ে এদের দেখা যায়। এদের বলা হয় অনুজীব। অনুজীব বলতে সাধারণত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক, শৈবাল ও এককোষী প্রাণীকে বোঝায়। যদিও এরা ক্ষুদ্রাকার, তবুও পরিবেশ, জীবজগৎ এবং মানবজীবনে এদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই জীবগুলো যেমন উপকার করে, তেমনি অনেক সময় মারাত্মক ক্ষতির কারণও হয়ে দাঁড়ায়।

অনুজীবের উপকারিতা

পচন প্রক্রিয়ায় অনুজীবের ভূমিকা
অনুজীব মৃত প্রাণী ও উদ্ভিদের দেহকে পচিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়। এই পচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাটিতে পুষ্টি উপাদান ফিরে আসে, ফলে মাটি উর্বর থাকে এবং ফসল ভালো হয়। এর ফলে প্রকৃতিতে জৈব পদার্থের পুনর্ব্যবহার সম্ভব হয়।

খাদ্য প্রস্তুতিতে সাহায্যকারী
বিভিন্ন অনুজীব আমাদের খাদ্য তৈরিতে সহায়তা করে। যেমন-
# দুধ থেকে দই তৈরি হয় একধরনের উপকারী জীবাণুর মাধ্যমে।
# রুটি, পিঠা ও মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরি করতে যে খামির ব্যবহার হয়, তাও একধরনের অনুজীবের সাহায্যে তৈরি হয়।
# আচার ও মাটির হাঁড়িতে রাখা খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণেও অনুজীব সাহায্য করে।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনুজীবের অবদান
অনুজীব থেকেই আবিষ্কৃত হয়েছে অনেক প্রয়োজনীয় ওষুধ। যেমন, ছত্রাকজাত অনুজীব থেকে তৈরি ওষুধে অনেক ধরনের জীবাণুর সংক্রমণ রোধ করা যায়। অনুজীবের সাহায্যে তৈরি হয় নানা প্রতিষেধক, যা মানুষকে সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা করে।

কৃষিতে ব্যবহার
অনুজীব গাছের মূলের সঙ্গে মিশে বাতাসের নাইট্রোজেন গাছের জন্য সহজপাচ্য করে তোলে। এতে রাসায়নিক সার ছাড়াই জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। অনেক অনুজীব পোকামাকড় ও ক্ষতিকর জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে, ফলে কীটনাশকের ব্যবহার কমে।

জ্বালানি উৎপাদনে অনুজীবের ব্যবহার
গোবর ও অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ ভেঙে জ্বালানিরূপে গ্যাস উৎপন্ন করতে সাহায্য করে কিছু অনুজীব। এই গ্যাস রান্না ও আলো জ্বালানোর কাজে ব্যবহার করা যায়, যা পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী।

পরিবেশ রক্ষায় অনুজীব
অনুজীব প্রাকৃতিকভাবে জল, মাটি ও বর্জ্য পরিষ্কারে সাহায্য করে। পচনশীল দ্রব্য ভেঙে তারা পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখতে সহায়তা করে। কিছু অনুজীব বিষাক্ত ধাতু ও রাসায়নিক পদার্থ দূর করতে সক্ষম।

গবেষণা ও উন্নয়নে ভূমিকা
বিজ্ঞানীরা অনুজীব ব্যবহার করে নানা গবেষণা করছেন। জিন পরিবর্তনের মাধ্যমে নানা রোগের প্রতিষেধক, খাদ্য ও জৈব পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে অনুজীবের সাহায্যে বিকল্প খাদ্য, ওষুধ ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি তৈরি হবে।

অনুজীবের অপকারিতা

রোগ সৃষ্টি
অনেক অনুজীব মানবদেহে প্রবেশ করে নানা রোগ সৃষ্টি করে। যেমন—
# ব্যাকটেরিয়া থেকে কলেরা, টাইফয়েড, যক্ষ্মা ইত্যাদি রোগ হয়।
# ভাইরাস থেকে হয় ইনফ্লুয়েঞ্জা, হেপাটাইটিস, হঠাৎ জ্বর ইত্যাদি।
# এককোষী জীবাণু থেকে হয় আমাশয়, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি।

খাদ্যদ্রব্য নষ্ট করা
অনুজীব খাদ্যদ্রব্যে জন্ম নিয়ে তা পচিয়ে ফেলে এবং বিষাক্ত করে তোলে। সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে খাবার নষ্ট হয়ে যায় ও খেলে রোগ হতে পারে।

উদ্ভিদের রোগ
অনেক অনুজীব উদ্ভিদে রোগ সৃষ্টি করে। যেমন পাতায় দাগ পড়া, গাছের পচন, ফল ও শাকসবজিতে সংক্রমণ ইত্যাদি।

শিল্পক্ষেত্রে ক্ষতি 
কাপড়, কাঠ, কাগজ ও চামড়ার দ্রব্যে অনুজীব জন্ম নিয়ে তা নষ্ট করে দেয়। এতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও সাধারণ মানুষের আর্থিক ক্ষতি হয়।

অনুজীব অদৃশ্য হলেও জীবজগতে এদের প্রভাব অপরিসীম। তারা যেমন আমাদের বন্ধু, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে শত্রুও বটে। যদি অনুজীবকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ব্যবহার করা যায়, তবে তা মানবজাতির জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠতে পারে। আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে অনুজীব আজ ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় সম্পদ। তাই এদের সঠিকভাবে চিনে, ভালোভাবে ব্যবহার করলেই মানবসভ্যতা আরও উন্নত ও নিরাপদ হয়ে উঠবে।