পান্তা ভাতের সঙ্গে বাঙালিদের পরিচয় বহু আগে থেকেই। কিন্তু প্রতি বছর বাংলা নববর্ষের দিনে পান্তা ভাত নিয়ে বেশ আলোচনা তৈরি হয়। এ নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মতামত।
গ্রাম বাংলার সর্বস্তরে খাবারের তালিকায় পান্তা ভাত ছিল এক সময় শীর্ষ স্থানে। বর্তমানে খাদ্যাভাসে খাবারটি কম রাখা হলেও পহেলা বৈশাখে বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে এই খাবার জায়গা পেয়েছে।
মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া প্রতিযোগিতার ফাইনালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক নারী কিশোয়ার চৌধুরী পান্তা ভাত তৈরি করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন। কেউ ভাবতেও পারেনি যে রান্নার এরকম একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পান্তা ভাতের মতো একটি আটপৌরে খাবার পরিবেশন করা যায়।
পান্তা ভাতের উপকারিতা
এক গবেষণায় দেখা গেছে, পান্তা ভাতে অনেক উপকারী অণুজীব আছে। আবার এখানে নতুন কিছু অণুপুষ্টি উপাদানও পাওয়া গেছে। গবেষণার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পান্তা খেলে রক্তে স্বাভাবিকের চেয়ে কম হারে বাড়ে শর্করার মাত্রা।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পান্তা ভাতে থাকা পুষ্টিকর পদার্থগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটিকে শক্তিশালী করে।
এছাড়া পান্তা ভাত দেহের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। পান্তা ভাতে আয়রন প্রচুর পরিমাণে থাকে।
পান্তা ভাতে প্রচুর পরিমাণে বিটা-সিটোস্টেরল, কেম্পেস্টেরোলের মতো মেটাবলাইটস রয়েছে যা শরীরকে প্রদাহ বা যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করে। এসব কোলেস্টোরেল কমাতেও এসব সাহায্য করে।
এছাড়াও পান্তা ভাতে রয়েছে আইসোরহ্যামনেটিন-সেভেন-গ্লুকোসাইড ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো মেটাবলাইটস যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
পান্তা ভাতের অপকারিতা
প্রতিটি খাবারে যেমন উপকার রয়েছে তেমনই রয়েছে অপকার। পান্তা ভাতও এর বিপরীত নয়। পান্তা ভাতে উপকারের পাশাপাশি রয়েছে অপকার। তা হল...
টানা ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ভাতের ফারমেন্টেশন হলে সেখানে অ্যালকোহলের উপাদান তৈরি হয় এবং সেই পান্তা ভাত খাওয়ার পর শরীর ম্যাজ ম্যাজ করে ও ঘুম পেতে পারে।
এছাড়াও পান্তা ভাত যদি পরিষ্কার পাত্রে বিশুদ্ধ পানি দিয়ে তৈরি করা না হয়, তাহলে সেখানে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া তৈরি হতে পারে। সেই ভাত খেলে মানুষ অসুস্থ হয়েও যেতে পারে।
বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, বিহার, উড়িষ্যা, দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরালা- এসব অঞ্চলেও জনপ্রিয় খাবার এই পান্তা ভাত।
থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, চীন, ইন্দোনেশিয়াতেও ফার্মেন্টেড রাইস খাওয়া হয় তবে সেটা তৈরি করার প্রক্রিয়া ও স্বাদ পান্তা ভাতের চেয়ে আলাদা।