বর্ষা বাদল উপেক্ষা করে কর্মমুখী মানুষ প্রতিদিন তার কাজের জন্য বেরিয়ে যায়; কিছু মানুষ বৃষ্টি উপভোগ করার জন্য বেরিয়ে পরে। বৃষ্টি অবশ্যই উপভোগ করবেন কিন্তু আমাদের এটাও জানতে হবে এসময় সাথে আসে ডেঙ্গু সংক্রামণের ভয়। ডেঙ্গু সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত থাকে। আমাদের দেশে গ্রীষ্মের আগে এবং বর্ষাকালে এটি বেশি ঘটে। এডিস প্রজাতির স্ত্রী মশার কামড়ে সাধাণত এই রোগটি হয়ে থাকে। প্রতি বছর প্রচুর মানুষ এই জ্বরে আক্রান্ত হন। সঠিক চিকিৎসার অভাবে আর অসচেতনতার কারনে মানুষ মারাও যেতে পারে।
কারণ
শুরুতেই বলা ভালো যে শুধুমাত্র এডিস প্রজাতীর স্ত্রী মশা কামড়ে ডেঙ্গু হয় না। চিকিৎসকদের মতে পরিবেশে থাকা কোনো ভাইরাসের মাধ্যমে যদি এডিস প্রজাতির স্ত্রী মশা সংক্রমিত হয়; তাহলে শুধুমাত্র সেই মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু সংক্রামণের সম্ভাবনা থাকে। এই প্রজাতির মশা রাতের অন্ধকারে থাকে না; থাকে দিনের আলোয়। এমন ধারণা একটা সময় সবাই পোষণ করতেন। কিন্তু এখন রাতেও নিস্তার নেই।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরদের বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যেমন উচ্চ তাপমাত্রা, মাথাব্যথা, শরীরে ব্যথা, বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা, গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং ফুসকুড়ি সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ।
সাধারণত সংক্রমণের পরে চার থেকে দশ দিনের মধ্যে এই লক্ষণগুলো দেখা দেয়। এই লক্ষণগুলোর সময়কাল দুই থেকে সাত দিনের মধ্যে।
সতর্কতা
- ভোরের দিকে এবং সন্ধ্যার সময় বাড়ির দরজা জালনা বন্ধ রাখুন।
- বাড়িতে ভিজা জঞ্জাল আলাদা রাখার চেষ্টা করুন এবং ঢাকনাসহ ডাস্টবিন ব্যবহার করুন।
- শুধুমাত্র নিজের বাড়ি নয়, আপনার পার্শ্ববর্তী এলাকা পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন।
- ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার আবশ্যক।
- এলাকার ওয়ার্ড ও কাউন্সেলর উদ্যোগে বিভিন্ন ড্রেন এবং জঙ্গলে মশা মারার স্প্রে দেওয়ার ব্যাপারে যুক্ত হন।
- মশা তাড়াতে নিমপাতা ব্যবহার করুন। খাবার তালিকায় নিমপাতা রাখতে পারেন; ঘরে নিমপাতা জ্বালাতে পারেন মশা তাড়ানোর জন্য।
- বাড়িতে কোথাও কোনো জমা জল থাকলে সেটি ফেলে দিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যে, কোথাও যেন কোনো পানি জমে না থাকে।
- আধুনিক সময়ে আমাদের কাছে ওডমসের মতো প্রতিরোধকগুলো রয়েছে; যা মশার কামড় থেকে আমাদের বাঁচাতে পারে। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে এই।
- রিপেল্যান্ট গুলি দুই মাসের কম বয়সী শিশুদের দেওয়া যাবে না।
- নয় থেকে ষোল বছর বয়সের কিশোরদের জন্য ডেঙ্গুর টিকা দেওয়া।
প্রতিকার
ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির প্রথম লক্ষণ হল ৯৯ থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত শরীরের তাপমাত্রা উঠতে পারে। ঘামের মাধ্যমে জোর ছেড়ে গেলেও আবার আসতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ প্রতিকারের কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল এজেন্ট নেই। সহায়ক যত্নের পরামর্শ দেওয়া হয় অতএব এই রোগের কত গুলি প্রতিকার আলোচনা করা হল: পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিতে হবে; তরল জাতীয় খাবার বেশি খাবেন, যেমন ডাবের জল, ফলের জুস, শরবত ইত্যাদি; প্যারাসিটামল বাড়িতে রাখবেন আক্রান্ত ব্যক্তি যদি প্রাপ্তবয়স্ক হন, তাহলে ২টি প্যারাসিটামল খেতে পারেন। চিকিৎসকে পরামর্শ আবশ্যক।
সাবধানতা
প্লাটিলেট বাড়াতে অযথা এটা সেটা টোটকা বেছে নেবেন না, ভাইরাস শরীর থেকে বেরিয়ে গেলে এটি ঠিক হয়ে যায়। ডেঙ্গু হলে আপনারা অযথা ভয় পাবেন না। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজে থেকে কিছু করবেন না। পরিশেষে, রক্তচাপ হ্রাস বা বিভিন্ন শারীরিক ছিদ্র থেকে সম্ভাব্য রক্তক্ষরণ ঘটতে পারে। এই ধরনের ক্ষেত্রে, স্যালাইন দেওয়া প্রয়োজন হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অপরিহার্য।
ডেঙ্গু একটি ক্ষতিকারক ব্যাধি, যদি সময়মতো ব্যবস্থা না নেয়া হয় তবে জীবনহানির সম্ভাবনা থাকে। সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং কোনো উপসর্গ থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। আমরা যদি সচেতন হই তাহলে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঠেকাতে পারবো। সতর্ক থাকুন সুস্থ থাকুন!
আপনার মতামত লিখুন :