ঢাকা রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

গণমাধ্যম ফ্যাসিবাদের দোসর মুক্তের দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২৪, ০৪:২৭ পিএম

গণমাধ্যম ফ্যাসিবাদের দোসর মুক্তের দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি

ছবি রুপালী বাংলাদেশ

ঢাকা: বিগত ১৮ বছর যাবৎ আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার ও ফখরুদ্দিনের জরুরি সরকার সম্পূর্ণ স্বৈরাচারী কায়দায় দেশের গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ ও সাংবাদিকদের দমন করে এসেছে। সাগর-রুনিসহ সংবাদকর্মীরা খুন, গুম, নির্যাতন, চাকরি হারানোসহ বিভিন্নভাবে নিপীড়িত হয়েছেন। গণমাধ্যমে নতুন ধারা তৈরি ও মুক্ত সাংবাদিকতা নিশ্চিত করতে প্রতিটি মিডিয়া হাউজকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করা জরুরি। এসব দাবিসহ গণমাধ্যমে ফ্যসিস্টের দোসরদের বিচার এবং নয় দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ফ্যাসিবাদ রিরোধী সাংবাদিকরা। মানববন্ধন শেষে তথ্য উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

বুধবার (২৮ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘ফ্যাসিবাদ মুক্ত গণমাধ্যম চাই’ ফ্ল্যাটফর্মের ব্যানারে নবীন-প্রবীণ সংবাদকর্মীরা এই মানববন্ধন কর্মসূচি আয়োজন করেন। পরে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। 

মানববন্ধনে উপস্থিত সাংবাদিকরা বলেন, বিগত ১৮ বছর যাবৎ এক ফ্যাসিস্ট সরকার দোসর ক্ষমতাকে পাকা-পোক্ত করতে দেশের গণমাধ্যমকে খড়গহস্তে নিয়ন্ত্রণ করেছে। গণমাধ্যমক   কে দলীয় প্রচার মাধ্যমে পরিণত করে এদেশের মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ করেছে। এক্ষেত্রে সাংবাদিক নামধারী কিছু অতি উচ্চবিলাষী ব্যক্তি এই ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগের স্বার্থে তাদের নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে সরকারের ইচ্ছানুযায়ী পরিচালিত করে। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস ও সরকারী টেলিভিশন বিটিভি একটি নির্দিষ্ট দলের মুখপাত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিলো। অনেক সময় ফ্যাসিস্ট সরকারের এই উচ্চিষ্টভোগীরা স্বপ্রণোদিত হয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করে। বিগত সৈরশাসক শেখ হাসিনা আমলে সংঘটিত সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন এবং মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানোর কোনো বিচার হয়নি। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকান্ড এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।  তাই আমরা এখন গণমাধ্যমকে ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসর মুক্ত করতে মাঠে নেমেছি। 
মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে সিনিয়র সাংবাদিক ও বাসসের সাবেক বার্তা সম্পাদক মমতাজ বিলকিস বানু বলেন,  “দুঃখের বিষয় হলো, ফ্যাসিবাদ-পরবর্তী সময়েও আমরা দেখছি সরকারি প্রতিষ্ঠান বাসসসহ প্রায় সব গণমাধমে ফ্যাসিবাদের দোসরদেরকেই বহাল তবিয়তে রাখা হচ্ছে বা পুনর্বাসন করা হচ্ছে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে অযোগ্য ও ফ্যাসিবাদের দোসরদেরকে বড় বড় পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।”

"বৈষম্যবিরোধী মোধাভিত্তিক দেশ গড়ার যে স্বপ্ন নিয়ে ছাত্র-জনতা রক্তাক্ত বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে, বাসসে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদকের নিয়োগ ঠিক এর উল্টো। তার নিয়োগের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সাংবাদিক অঙ্গণে চলছে সমালোচনার ঝড়," বলেন মমতাজ বিলকিস বানু। 

জ্যেষ্ঠ এই সাংবাদিক বলেন, “অনেকেই বলছেন বাসসের ইতিহাসে কখনই এমন কম যোগ্যতাসম্পন্ন  কাউকে নিয়োগ দেয়া হয় নাই। বাসসের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদকদের জীবনী পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তারা বয়সের দিক থেকে এবং যোগ্যতায় ছিলেন সচিব পদ-মর্যাদার।” 

এক্ষেত্রে, বাসসের নতুন এমডি বাসসে বর্তমানে কর্মরত অনেক সাংবাদিকের চেয়ে পেশাগত যোগ্যতা ও বয়সে অনেক পিছিয়ে আছেন বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিলকিস বানু। 

এদিকে তিনি বাসসে যোগদানের দিনই তার পরোক্ষমদদে বাসসে কর্মরত কিছু সংখ্যক সাংবাদিক ব্যবস্থাপনা সম্পাদককে লাঞ্ছিত করার হুমকি দিয়ে জেষ্ঠ্যতা লঙ্ঘণ করে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদলের খসড়া তৈরী করে পিছনের তারিখে স্বাক্ষর প্রদানে বাধ্য করে, যা স্পষ্টত বাসসের আইন ও সংশ্লিষ্টবিধির লঙ্ঘণ। কিন্তু, নতুন এমডি বাসসের আইন ও বিধি উপেক্ষা করে এই পদায়নগুলোকে সেভাবেই অনুমোদন দিয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। 

বাসস ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি গণমাধ্যমে স্বৈরাচারের চিহ্নিত দোসরদের অবিলম্বে বরখাস্ত ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয় মানববন্ধনে।  

দাবিসমূহ:
১. গত ১৮ বছরে রাজনৈতিক কারণে বাসসসহ সকল মিডিয়া হাউজ থেকে চাকরিচ্যুত সকল গণমাধ্যমকর্মীকে সসম্মানে পুনর্বহাল করতে হবে। এবং সকল বন্ধ মিডিয়া হাউজ অবিলম্বে খুলে দিতে হবে।
২. গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সাইবার সিকিউরিটি আইন, মানহানি এবং হয়রানিমূলক সকল মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।হামলা-মামলার শিকার সকল সাংবাদিককে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৩. সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আমলে নিহত সকল সাংবাদিকের হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে যথাযথ বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
৪. পতিত স্বৈরাচার হাসিনার তল্পিবাহক সাংবাদিক নামের কলংক এবং সমাজ ও দেশ ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠির মূল্যবোধ বিরোধী ঘাদানিক চেতনায় বিশ্বাসী এবং শাহবাগি বিষাক্ত মনোভাব পোষণকারীদের বাসসসহ সকল মিডিয়া হাউজ থেকে বিতাড়িত করতে হবে।৫. আগস্টের ঐতিহাসিক পট পরিবর্তনের পর বাসসের শীর্ষপদে তড়িঘড়ি করে নিয়োগ দেয়া অযোগ্য ও ঘাদানিক-শাহবাগীদের দোসর ব্যক্তিকে সাংবাদিকরা চান না। এ ব্যাপারে এখনি উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ চাই।
৬. বিগত ১৮ বছরে বাসস থেকে স্বৈরাচারী হাসিনার দোসররা বিপুল অংকের টাকা লুটপাট করেছে। যার প্রমাণসহ অভিযোগ দুদকে জমা দেয়া আছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে এর সঠিক বিচার ও দোষিদের বাসস থেকে বিদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. সাইবার সিকিউরিটি আইন, অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনসহ কলোনিয়াল ও নিপিড়নমূলক সকল আইন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
৮. অবিলম্বে রেডিও-টেলিভিশন-অনলাইন এবং ছাপা পত্রিকার জন্য সমন্বিত ওয়েজ বোর্ড ঘোষণা ও কার্যকর করতে হবে। এবং গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের জন্য আর্থিক প্রনোদনার ক্ষেত্রে কার্যকর নীতি প্রণয়ন করতে হবে।
৯. একইনামে ভিন্ন ভিন্ন  সাংবাদিক ইউনিয়নের পরিবর্তে সত্যিকারের সাংবাদিকদের নেতৃত্বে গতিশীল ও মিডিয়াবান্ধব ইউনিয়ন নিশ্চিত করতে হবে।

মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দেওয়ার সময় উপস্থিত আরও ছিলেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আখতার হোসেন  মাসুদ, সমাজকর্মী মো. শামসুদ্দিন, গণমাধ্যমকর্মী বুরহান উদ্দিন ফয়সাল, আরিফুর রহমান তুহিন, কাজী মুস্তাফিজ ও জয়নাল আবেদীন শিশির।

 

আরবি/এস

Link copied!