ঢাকা বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
প্রজন্মগত পরিবর্তন

যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংবাদ উৎস এখন ইন্টারনেট

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৪, ০৬:১৫ পিএম

যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংবাদ উৎস এখন ইন্টারনেট

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে জনপ্রিয় সংবাদ উৎস হিসেবে উঠে এসেছে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো। দেশটির সর্বশেষ পরিসংখ্যানে এমনই চমকপ্রদ তথ্য জানা যায়। একে ‘প্রজন্মগত পরিবর্তন’ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

যুক্তরাজ্যের যোগাযোগ নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান অফকম জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের প্রতি দশজনের মধ্যে সাতজন (৭১ শতাংশ) প্রাপ্তবয়স্ক অনলাইন থেকে সংবাদ গ্রহণ করে, যা টেলিভিশনের (৭০ শতাংশ) চেয়ে সামান্য বেশি। অফকমের এই জরিপের ফলাফলে সংবাদ সূত্র হিসেবে প্রথমবারের মতো টেলিভিশনের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে ওয়েবসাইট ও অ্যাপস।

বিবিসির ‘কোয়েশ্চশন টাইমস’ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ফিওনা ব্রুস বলেছেন, উৎস হিসেবে সামাজিক মিডিয়ার চাহিদা বেড়ে যাওয়া একটি ‘উদ্বেগের বিষয়’।

অফকম উল্লেখ করেছে যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এই পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। যুক্তরাজ্যের প্রাপ্তবয়স্কদের ৫২ শতাংশ এখন সংবাদ জানতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে, যা ২০২৩ সালে ৪৭ শতাংশ ছিল। সংবাদ পেতে সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মগুলো হলো ফেসবুক, যা ১০ জনের মধ্যে ৩ জন ব্যবহার করেন। এরপরে রয়েছে ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম এবং এক্স (সাবেক টুইটার)। অপরদিকে বিবিসি নিউজের ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ্লিকেশন ১৮ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যবহার করে। তবে ঐতিহ্যবাহী সংবাদ উৎসগুলো এখনো অনলাইন প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে (যেমন বিশ্বাসযোগ্যতা, সঠিকতা এবং নিরপেক্ষতা) প্রাধান্য বজায় রাখে।

 এখনো সবচেয়ে বড় একক সংবাদ উৎস হিসেবে রয়েছে বিবিসি ওয়ান, যা ৪৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যবহার করে। যদিও ২০১৯ সালে এই হার ছিল ৫৮ শতাংশ। বিবিসি এর স্ট্রিমিং সার্ভিস আইপ্লেয়ার টেলিভিশন বিভাগের বড় অবদান রাখে, যা প্রায় এক চতুর্থাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যবহার করে। তবে চ্যানেল ৪ শীর্ষ ১০ সংবাদ উৎসের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।

পাবলিক সার্ভিস মিডিয়া কনটেন্ট, বিশেষ করে সংবাদ, পর্যালোচনা শুরু করছে অফকম। এই পর্যালোচনায় দেখা হবে বিবিসি ওআইচিভি-এর মতো পাবলিক সার্ভিস সংবাদ ব্রডকাস্টাররা দর্শকদের কতটা ভালোভাবে সেবা প্রদান করেছে। তারা অনলাইনেও কতটা ভালো সেবা দিচ্ছে তাও পর্যালোচনা করা হবে। পাবলিক সার্ভিস নিউজ সমর্থনের জন্য কোনো নিয়ন্ত্রণমূলক বা আইনগত পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে কিনা সেটিও বিবেচনা করবে অফকম।

অফকমের এর কৌশল ও গবেষণার প্রধান ইয়িহ-চুং টেহ বলেছেন, ‘ষাইটের দশক থেকে সংবাদমাধ্যম হিসেবে প্রাধান্য বিস্তার করেছে টেলিভিশন এবং এটি এখনো অত্যন্ত উচ্চ বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করছে। কিন্তু আমরা একটি প্রজন্মগত পরিবর্তনের সাক্ষী হচ্ছি, যেখানে অনলাইন সংবাদ ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে, যদিও এটি অনেক সময় কম নির্ভরযোগ্য হিসেবে দেখা হয়।’

এখন ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী যুবকদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রধান সংবাদ উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই বয়সীদের মধ্যে ইনস্টাগ্রাম সর্বোচ্চ জনপ্রিয়, যা ১০ জনের মধ্যে ৪ জন ব্যবহার করে, আর টিকটক ব্যবহার করে এক-তৃতীয়াংশ তরুণ–তরুণীরা। অনলাইন এবং টেলিভিশন সংবাদে প্রজন্মগত পার্থক্য খুবই স্পষ্ট। ১০ জনের মধ্যে ৯ জন সংবাদের জন্য তরুণ অনলাইন উৎস ব্যবহার করে। আর ৫৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে অনেকেই টেলিভিশনকে পছন্দ করে। যদিও তরুণেরা এবং বয়স্ক প্রজন্ম উভয়েই ঐতিহ্যবাহী সংবাদ উৎসগুলোকে বেশি বিশ্বাস করে। গত তিন বছরে ১০ জনের মধ্যে ৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যা পাবলিক সার্ভিস ব্রডকাস্টারদের ‘বিশ্বাসযোগ্য এবং সঠিক’ হিসেবে মনে করেন।

আর ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য সবচেয়ে বড় একক সংবাদ উৎস হলো টিকটক।

সংবাদ প্রকাশক ওয়েবসাইট ও অ্যাপগুলোর মধ্যে বিবিসির-এর ওয়েবসাইট হলো সবচেয়ে জনপ্রিয়, যা ৫৯ শতাংশ ব্যবহার করে। এর পরেই আছে স্কাই, দ্য গার্ডিয়ান এবং ডেইলি মেইল, যা প্রায় ২০ শতাংশ ব্যক্তি ব্যবহার করে।

সাধারণ নির্বাচনের সময় সংবাদ ব্যবহারের ওপর একটি গবেষণাও প্রকাশ করেছে অফকম। গবেষণায় দেখা গেছে, ৬০ শতাংশ মানুষ বলেছেন যে, তারা প্রচারণার সময় মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট দেখেছেন। এক চতুর্থাংশেরও বেশি বলেছেন যে, তারা ‘ডিপফেক’ কনটেন্টের মুখোমুখি হয়েছেন। ডিপফেক হলো যা হলো এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে কারসাজি করা ছবি বা অডিও।

ফিওনা ব্রুস একটি নিবন্ধে বলেন, এটা উদ্বেগের বিষয় যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সংবাদ উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি শুধু সাংবাদিকদের জন্যই নয়, আমাদের সকলের জন্য একটি সমস্যা। আর একবার একটি মিথ্যা গল্প ছড়িয়ে গেলে, তা সংশোধন করা প্রায় অসম্ভব।

আরবি/ এইচএম

Link copied!