সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সেলিম আহমেদ

প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৫, ০৪:২৯ এএম

এমন স্বস্তির ঈদযাত্রা আর কখনো হয়নি

সেলিম আহমেদ

প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৫, ০৪:২৯ এএম

এমন স্বস্তির ঈদযাত্রা আর কখনো হয়নি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

প্রায় ৭ বছর থেকে ঢাকা থাকি। প্রতিবারই ঈদের সময় বাড়ি যেতে কতটা ভোগান্তি পোহাতে হতো। ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিটের জন্য আগের দিন তারাবির পর লাইন ধরে পরের দিন দুপুরে পেতাম কাক্সিক্ষত টিকিট। কখনো কখনো দীর্ঘ লাইন ধরেও টিকিট নামের সোনার হরিণটি ভাগ্যে জুটত না। 

এখানেই শেষ নয়, ট্রেনের দীর্ঘ শিডিউল বিপর্যয়, যাত্রীর গাদাগাদিতে সিটে বসাই দায় ছিল। কিন্তু এবার সেই চিত্র নেই। অনলাইনে সহজেই টিকিট কাটতে পেরেছি, ট্রেনে ছিল না অতিরিক্ত যাত্রীদের ভিড় কিংবা শিডিউল বিপর্যয়। এবারের মতো এত স্বস্তিতে আর কখনো ঈদের সময় বাড়ি যাইনি। কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা থেকে ঈদের ছুটিতে পঞ্চগড়ে যাওয়া ফরাবী হাফিজ।

একই কথা জানালেন ট্রেনে করে রাজশাহীতে যাওয়া ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা অনি আতিকুর রহমান। গতকাল শনিবার বনলতা এক্সপ্রেসে বাড়ি গেছেন তিনি। অনি আতিকুর বলেন, তিনি বলেন, ঈদের বাকি দু’দিন অথচ অবিশ্বাস্য পরিবেশ ছিল রেলস্টেশনের। অন্তত চার লেয়ারে চেকিং। 

স্টেশনে ভেতরে ঢুকতেই দেখি নির্ধারিত সময়ের আগেই প্লাটফর্মে অপেক্ষা  করছে ট্রেন। যথাসময়ে ট্রেন ছেড়ে গেল গন্তব্যের পথে। সবকিছু এমন নির্বিঘ্নে হবে- সত্যি বলতে এতটাও আশা করিনি।

ট্রেনের মতো বাসে ছিল স্বস্তি। গত শুক্রবার রাতে সড়ক-মহাসড়কে গাড়ির চাপ ছিল। কোথাও কোথাও থেমে থেমে ধীরগতিতে চলেছে গাড়ি। তবে অসহনীয় যানজট ছিল না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকার ভোগান্তিতে পড়েননি ঘরমুখো যাত্রীরা। 

তবে গতকাল শনিবার ভোর থেকে তা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। দিনভর কোথাও যানজটের খবর পাওয়া যায়নি। ঢাকা থেকে বগুড়া যাওয়া টিনা আক্তার বলেন, মাত্র সাড়ে ৩ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে বগুড়া ফুড ভিলেজ পৌঁছেছি। যা কখনো কল্পনাতিত ছিলনা।

সব মিলিয়ে লম্বা ছুটি থাকায় এবারের ঈদযাত্রা ছিল স্বস্তির।  ঈদযাত্রার শুরু থেকেই ট্রেন, বাস, লঞ্চ কিংবা অন্য কোনো পথেও বড় কোনো ধরনের ভোগান্তির খবর পাওয়া যায়নি। শুরুর দিন থেকেই ট্রেনে ছিল না কোনো শিডিউল বিপর্যয়, সড়কে ছিল না বড় ধরনের যানজট। 

সব মিলিয়ে এবারের ঈদযাত্রায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন অনেকেই। কেউ কেউ বলছেন তাদের জীবদ্দশায় এত স্বস্তিতে ঈদযাত্রা কখনো হয়নি। ইতিমধ্যে প্রায় সবাই ঈদের ছুটিতে বাড়িতে চলে যাওয়ায় ঈদের আগ পর্যন্ত আর কদিন কোনো ভোগান্তি হবে না বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। 
যাত্রী চাপও কম, ট্রেন ছাড়ছে সময়মতো
গতকার শনিবার সকালে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, ভোর থেকে প্রতিটি ট্রেনই নির্ধারিত সময়ে প্ল্যাটফর্ম থেকে রওনা করায় যাত্রীদের মাঝে দেখা যায়নি ভোগান্তির রেশ। যারা আগেই টিকিট কেটে রেখেছেন, তারা নির্ধারিত সিট পেয়ে স্বস্তি জানিয়েছেন। 

অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামাল দিতে স্টেশনের গেটে তিন স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করতে দেখা গেছে। সারা দিনে মোট ৫১টি ট্রেন ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাবে। 

রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, ট্রেন ছাড়বে সকাল ৯টা ১০ মিনিটে। আগের অভিজ্ঞতায় সিটে যেতে না পারার শঙ্কায় এক ঘণ্টা আগে স্টেশনে এসেছি। তবে এসে তেমন ভিড় পেলাম না। 

ট্রেনে ওঠার কিছু সময় পরে সিটগুলো ভর্তি হওয়ার পর কিছু লোক দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। তবে সেটি অন্যান্যবারের তুলনায় নগণ্য।

সদরঘাট নৌ-টার্মিনাল এলাকায় ভিড় করছেন দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা। সদরঘাট টার্মিনাল ও পন্টুন এলাকায় যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। ঈদের দু’দিনের মতো বাকি থাকতেই ডেক ও কেবিনে পরিপূর্ণ যাত্রী থাকায় সন্তুষ্ট লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকরা।

লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, দিনের শুরুতেই পন্টুনগুলোতে নৌপথে বাড়িফেরা যাত্রীদের উপস্থিতি গত কয়েক দিনের তুলনায় অনেক বেশি। সকালে চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, হাতিয়া ও পটুয়াখালীগামী পন্টুনে বেশ ভিড় দেখা যায়।

সড়কপথে কিছুটা ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। ভোর থেকে রাজধানীর মহাখালী-গাবতলীসহ একাধিক বাস টার্মিনালেও দেখা গেছে যাত্রীদের ভিড়। সড়কে জ্যামও কিঞ্চিত বেড়েছে। অনেকেই খরচ বাঁচাতে পণ্যবাহী ট্রাক-পিকআপে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। প্রচণ্ড রোদের মধ্যে ট্রাক-পিকআপে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন তারা। 

সরেজমিনে রাজধানীর সায়েদাবাদ, গাবতলী, মহাখালীসহ অন্যান্য টার্মিনাল এলাকায় বাস কাউন্টার ও আশপাশের এলাকা ঘুরে সাধারণ সময়ের মতোই যাত্রীদের উপস্থিতি দেখা যায়। কোথাও ভিড় দেখা যায়নি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল, ময়মনসিংহ, উত্তরবঙ্গসহ বিভিন্ন এলাকার যাত্রায় মহাসড়কে যানজট না থাকায় টার্মিনাল থেকে প্রায় প্রতিটি বাস নির্দিষ্ট সময় ছেড়ে যাচ্ছে। যাত্রীদের মনেও ছিল প্রশান্তি।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মুহাম্মদ শরীফ বলেন, গত শুক্রবার দুপুরের পর থেকে সড়কে যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। যানবাহনের চাপ থাকলেও এখনো কোনো যানজট হয়নি। স্বাভাবিক গতিতেই যানবাহন চলাচল করছে। হাইওয়ে পুলিশ নিরলসভাবে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মহাসড়কে পর্যাপ্ত পরিমাণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষ স্বস্তিতে বাড়ি ফিরছে।

ভোগান্তি ছাড়াই দৌলতদিয়া ঘাট পার 
পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাট হয়ে বাড়ি ফিরছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে পর্যাপ্ত ফেরি, লঞ্চ ও মহাসড়কে যানজট না থাকায় সহজেই ঘাট পার হচ্ছেন যাত্রীরা। 

শনিবার সকাল থেকে ঘাটে যাত্রীদের ভিড় দেখা দেখা গেছে। তবে ভোগান্তি না থাকায় নির্বিঘ্নে ঘরমুখী মানুষ ও যানবাহন নদী পার হয়ে তাদের গন্তব্যে যাচ্ছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাট থেকে ছেড়ে আসা যে সব ফেরি ও লঞ্চ দৌলতদিয়া ঘাটে ভিড়ছে প্রতিটা লঞ্চ ও ফেরিতে চোখে পড়ার মতো যাত্রী ছিল। যাত্রীরা দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ও লঞ্চঘাটে নেমে যাত্রীবাহী পরিবহন, মাহেন্দ্র ও মোটরসাইকেলে চড়ে তাদের গন্তব্যে চলে যাচ্ছে। এদিকে ঘাটে যানজট না থাকায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা যানবাহনগুলো সরাসরি ফেরিতে ঢাকায় চলে যাচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন বলেন, সকাল থেকে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়লেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চাপ কিছুটা কমে এসেছে। তবে কোনো প্রকার যানজট বা ভোগান্তি নেই। এই নৌরুটে ছোট বড় মিলে ১৭টি ফেরির মধ্যে ১৬টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!