আওয়ামী লীগ সরকারের পতন, শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং ভারতে চলে যাওয়ার পর দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে প্রথমবারের মতো পুলিশ সপ্তাহ শুরু হতে যাচ্ছে আগামী ২৯ এপ্রিল।
চলমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এবারের পুলিশ সপ্তাহ চলবে মাত্র তিন দিন। পূর্বের মতো কোনো আনুষ্ঠানিক দাবি-দাওয়ার পর্ব না থাকলেও, পুলিশ সদস্যরা সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট ৬টি দাবি তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে। ৪০ পুলিশ সদস্য সর্বোচ্চ স্বীকৃতি হিসেবে পাবেন ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক’ (বিপিএম) ও ‘প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক’ (পিপিএম) ।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের পক্ষ থেকে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করে জনসাধারণের জন্য কমপ্লেইন সেল ও পুলিশের জন্য অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটি এবং এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ ভাতা প্রদান, স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট গঠনসহ ৬টি দাবি তুলে ধরা হবে।
সদর দপ্তরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রথমে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ১২টি দাবি জানানো হয়েছিল। কয়েক দফা বৈঠক শেষে তার মধ্য থেকে ৬টি দাবি চূড়ান্ত করা হয়। জানা গেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা কী হবে; সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে পুলিশকে স্পষ্ট ও কঠোর বার্তা দেওয়া হবে এবারের পুলিশ সপ্তাহে। তবে এবার কোনো প্যারেড থাকছে না।
প্রধান অতিথি হিসেবে তিন দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনিই ৪০ পুলিশ সদস্যকে বিপিএম-পিপিএম পদক পরিয়ে দেবেন। আরও জানা গেছে, এবার শিল্ড প্যারেডসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতা থাকছে পুলিশ সপ্তাহে।
তবে এবার পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে না। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়েও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্মিলন বসছে না। থাকছে না প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কোনো সেশন।
যে ছয় দফা দাবি পেশ করবে পুলিশ
১. স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করে জনসাধারণের জন্য কমপ্লেইন সেল ও পুলিশের জন্য অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটি।
২. এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ ভাতা।
৩. স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট গঠন।
৪. পুলিশের বিভাগীয় হাসপাতালে জনবল বৃদ্ধি ও আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সরবরাহসহ মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা।
৫. একই পদে দীর্ঘদিন চাকরি করার পর অবসরকালে সুপারনিউমারারি পদোন্নতি দেওয়া (কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পর্যন্ত)।
৬. মৃতদেহ দাফন/সৎকারের সুবিধার্থে পুলিশের অনুকূলে আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া।
এ বিষয়ে ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে পুলিশ সপ্তাহের আয়োজন হতো। এবার পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে হচ্ছে। এবারই প্রথম বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে পুলিশের নীতিনির্ধারকদের নিয়ে ‘কেমন পুলিশ দেখতে চান’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন থাকছে।
ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, এবারের পুলিশ সপ্তাহ থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা ও কাজ কী হবে, তার নির্দেশনা পাওয়া যাবে। তা ছাড়া পুলিশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া, মাঠপর্যায়ের পুলিশের সমস্যাগুলো বিশদভাবে আলোচনার সুযোগ তৈরি হবে।
পদকের ব্যাপারে জানা গেছে, এখন থেকে সারা বছরই সাহসিকতা ও পেশাদারি কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশ সদস্যদের পদক দিয়ে পুরস্কৃত করা হবে এবং নগদ আর্থিক প্রণোদনাও প্রদান করা হবে। পুলিশ সপ্তাহে শুধু পদক পরিয়ে সম্মানিত করা হবে।
তিন দিনের অনুষ্ঠান সূচিতে যা থাকছে
প্রথম দিন : পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি পুলিশের সব ইউনিটের সঙ্গে ভার্চুয়াল শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির স্টল উদ্বোধন করবেন। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনার আলোকে প্রণীত কর্মপরিকল্পনার ওপর ওয়ার্কশপ হবে। এসবির (বিশেষ শাখা) কার্যক্রমের বিষয়ে প্রেজেন্টেশন হবে।
দ্বিতীয় দিন: পুলিশের সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ও সচিবদের সম্মেলন হবে। সিআইডি, র্যাব, ট্যুরিস্ট পুলিশ, পিবিআই, এটিইউসহ পুলিশের সব ইউনিটের কার্যক্রম সম্পর্কে পৃথক তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হবে। প্রতিটি ইউনিট তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও উপস্থাপন করবে।
শেষ দিন: পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) সঙ্গে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা মতবিনিময় করবেন। পুনাক সমাবেশ ও আনন্দ মেলা হবে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অংশগ্রহণে ‘কেমন পুলিশ দেখতে চান’ শীর্ষক মতবিনিময় সভা করবেন পুলিশ কর্মকর্তারা। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারের সঙ্গে পুনর্মিলনী ও পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন ও পুলিশ অফিসার্স মেসের বার্ষিক সাধারণ সভা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :