প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, শরণার্থী হিসেবে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থানের ফলে রোহিঙ্গাদের মধ্যে গভীর হতাশা তৈরি হচ্ছে, যার ফলে তারা নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। দ্রুত টেকসই প্রত্যাবাসন না হলে পুরো অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।’
বুধবার (২৩ এপ্রিল) দোহায় কাতার ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ‘রোহিঙ্গা সংকট ও বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী’ বিষয়ক এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ মনে করে, রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র কার্যকর সমাধান হচ্ছে নিরাপদ, সম্মানজনক এবং টেকসই প্রত্যাবাসন। দীর্ঘদিন ধরে এই জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিক দায়িত্ব পালন করছে, কিন্তু এই সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে তা জাতীয় ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।’
প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার গণমাধ্যমকে জানান, বাংলাদেশ এরই মধ্যে প্রায় ১৩ লাখ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে। প্রতি বছর এদের মধ্যে প্রায় ৩২ হাজার নবজাতক যুক্ত হচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে ড. ইউনূস রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতির বিবরণ দেন। তিনি জানান, আরাকান আর্মি (এএ) বর্তমানে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ২৭১ কিলোমিটার এবং রাখাইনের ১৭টি টাউনশিপের মধ্যে ১৪টির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাখাইনে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৮৭৬ জন, যার মধ্যে ১ লাখ ৫২ হাজার ৭১ জন রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গা দীর্ঘমেয়াদে ২১টি ক্যাম্প ও তিনটি গ্রামে বসবাস করছেন।
তিনি আরও জানান, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে নতুন করে ১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে আরাকান আর্মির হামলার মুখে ৯০৯ জন মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। যাদের মধ্যে ৮৭৫ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। বাকি ৩৪ জনকে শিগগিরই পাঠানো হবে।
ড. ইউনূস উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, রোহিঙ্গা মানবিক সংকট মোকাবিলায় গৃহীত যৌথ সহায়তা পরিকল্পনার (জেআরপি) অর্থায়ন ধারাবাহিকভাবে কমে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের জেআরপিতে ৮৫২.৪ মিলিয়ন ডলার আহ্বান করা হলেও এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে মাত্র ৬৪.৪ শতাংশ অর্থাৎ ৫৪৮.৯ মিলিয়ন ডলার।
২০২৫-২৬ সালের জেআরপি কার্যক্রম ২০২৫ সালের ২৪ মার্চ থেকে শুরু হবে, যেখানে ১৪.৮ মিলিয়ন রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগণকে সহায়তা দিতে প্রয়োজন হবে ৯৩৪.৫ মিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে।
তিনি আরও জানান, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডাব্লুএফপি) এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে যে, ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে খাদ্য সহায়তা বন্ধ করা হতে পারে। যদিও তাৎক্ষণিক অর্থায়নের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত রাখা সম্ভব হয়েছে।তবে সেপ্টেম্বর ২০২৫ থেকে আবারও তহবিল সংকট দেখা দিতে পারে।
ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে অর্থায়ন নিশ্চিত করতে। আশা করি, কাতার এ সংকটে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
আপনার মতামত লিখুন :