গরমে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লে লোডশেডিং হবেই। এটি ঠেকানোর আপাতত কোনো উপায় নেই বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে ‘সেমিনার অন এনার্জি ক্রাইসিস : ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘অন্যান্য বছর গ্রামে লোডশেডিং বেশি হতো। এ বছর গ্রাম ও শহরের মধ্যে আর কোনো পার্থক্য থাকবে না। গরমকালে লোডশেডিং সহনীয় মাত্রায় রাখার চেষ্টা করব। তবে পুরোপুরি লোডশেডিং-মুক্ত থাকা সম্ভব হবে না। এ জন্য বাড়তি এলএনজি ও কয়লা আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জ্বালানি তেলের ব্যবহার সীমিত রাখা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১৬ হাজার মেগাওয়াট। ২৪ এপ্রিল ১৩৯ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়েছে, যা সহনীয় পর্যায়ে ছিল। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ১৮ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন। সে জন্য এলএনজি ও কয়লা আমদানি বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘অর্থনীতি এখন নিম্নমুখী নয়। আশা করছি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে লোডশেডিং পুরোপুরি বন্ধ হবে না। সহনীয় মাত্রায় রাখা হবে এবং গ্রাম-শহরের মধ্যে কোনো বৈষম্য থাকবে না।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যেকোনো সময় কোনো বড় পাওয়ার প্ল্যান্ট বসে যেতে পারে, বিশেষ করে গরমকালে। এসব মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে মনে রাখতে হবে, ‘ক্রাইসিস’ শব্দ ব্যবহারে সতর্কতা থাকা উচিত। কারণ ছোট সংকটকেই অনেক সময় বড় করে তোলা হয়, যা রাজনীতিতে সুবিধা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।’
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশের (এফইআরবি) সভাপতি মো. শামীম জাহাঙ্গীর।
বিশেষ অতিথি ছিলেন, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘দেশে নতুন করে গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। আমাদের ২০৩১ সালের মধ্যে নিজস্ব গ্যাস রিজার্ভ শেষ হয়ে যাবে। এখনই গ্যাস অনুসন্ধান ত্বরান্বিত করতে হবে। উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শেভরনসহ অন্যান্য কোম্পানিকে উৎপাদন বাড়ানোর অনুমতি দিতে হবে। বর্তমান সক্ষমতা ২০০০ এমএমসিএফডি-তে উন্নীত করতে হবে।’
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘জ্বালানি নীতির সংস্কার এখন সময়ের দাবি। ২০৪১ সালের লক্ষ্য নির্ধারণ করে জ্বালানি রূপান্তরের সুস্পষ্ট রূপরেখা তৈরি করতে হবে। এলএনজি আমদানির পাশাপাশি দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধানেও জোর দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে গ্যাস খাতে বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি। প্রয়োজনে তিন থেকে পাঁচ বছরের আর্থিক পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা নিতে হবে।’
তিনি ২০০০ এমএমসিএফডি রিগ্যাসিফিকেশন টার্মিনাল স্থাপন, এলপিজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের অবদান বর্তমান ২ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত করাকে স্বল্পমেয়াদি চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন।
আপনার মতামত লিখুন :