জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) আওতাধীন দক্ষিণাঞ্চলের ১৫টি জেলা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে শনিবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলের পর থেকে। রাত ৯টার দিকে মেরামত শেষে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও তীব্র গরমে নাজেহাল হয়ে পড়ে ওই অঞ্চলের মানুষ। শিল্পকারখানাগুলোতে উৎপাদন ব্যাহত হয়।
প্রাথমিকভাবে বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, আমিনবাজার-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি গ্রিড লাইনের কোথাও দুটি তার একত্রিত হওয়ায় এ বিপর্যয় ঘটে। তবে সঠিক কারণ অনুসন্ধানে ৮ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
রোববার (২৭ এপ্রিল) সচিবালয়ে এক বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হাসিব চৌধুরীকে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন:- বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. এহসান, খুলনা বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ শাহ, পিডিবির সদস্য মো. শহীদুল ইসলাম, ওজোপাডিকোর প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল মজিদ, পিডিবির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান, পিজিসিবির প্রধান প্রকৌশলী (ট্রান্সমিশন-১) মো. ফয়জুল কবির এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব (নবায়নযোগ্য জ্বালানি-১ শাখা) মো. মাজহারুল ইসলাম।
কমিটিকে গ্রিড বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধান, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দায় নির্ধারণ এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে সুপারিশ প্রণয়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে কমিটি অতিরিক্ত সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, বরিশাল বিভাগ পুরোপুরি এবং খুলনা বিভাগের বেশিরভাগ অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে, আমিনবাজার-গোপালগঞ্জ ডাবল সার্কিট লাইনে দুটি তার একত্রিত হওয়ায় লাইনটি ট্রিপ করে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিটগুলো বন্ধ হয়ে যায়।
ভবিষ্যতে এ ধরনের বিপর্যয় ঠেকাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ব্ল্যাকআউটের সময় যেভাবে তদন্ত করে সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল, এবারও সেই সুপারিশের সঙ্গে মিলিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
লোডশেডিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বড় কোনো বিদ্যুৎ সংকট নেই। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ প্রায় সমান। কোথাও যদি কারিগরি কারণে বা অন্য কোনো কারণে লোডশেডিং হয়, তবে সেটি খতিয়ে দেখা হবে। তবে গ্রাম ও শহরে এবার সমানভাবে লোডশেডিং হবে।
তিনি আরও বলেন, গ্রাহকদের সচেতন হতে হবে। বিদ্যুতের অপচয় রোধ করতে হবে। সরকার স্বল্পমেয়াদি, তাই আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি গ্রাহকদের সেবা দিতে। প্রয়োজনে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা হবে এবং এলএনজি আমদানি বাড়ানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে পিডিবির চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, শর্ট সার্কিটের কারণে লাইন ট্রিপ করে আলাদা হয়ে গিয়েছিল। আধা ঘণ্টার মধ্যে লাইন ঠিক করা গেলেও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু করতে সময় লেগেছে।
জানা গেছে, শনিবার বিকেল ৫টায় জাতীয় গ্রিডে মোট উৎপাদন ছিল ১৪ হাজার ৫২০ মেগাওয়াট এবং সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সি ছিল ৫০.৪ হার্জ। বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে আমিনবাজার-গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট লাইনে ত্রুটি দেখা দেয়। এতে খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের যশোর, বেনাপোল, নোয়াপাড়া উপকেন্দ্রসহ ১০টি জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তবে ঈশ্বরদী-ভেড়ামারা-ঝিনাইদহ ২৩০ কেভি লিঙ্ক সচল থাকায় কুষ্টিয়া, মাগুরা, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গার কিছু অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত ছিল। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের চেষ্টায় ধীরে ধীরে উপকেন্দ্রগুলো চালু করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :