পদোন্নতি-পদায়ন নিয়ে ফের অস্থিরতা-অসন্তোষ তৈরি হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে (ইইডি)। এবার অসন্তোষের মূল কারণ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুবিধাভোগী এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদের পদধারী নেতাদের পদোন্নতি ও পদায়ন।
সর্বশেষ গত ১০ ফেব্রুয়ারি ১৩ জন নির্বাহী প্রকৌশলীকে বদলি ও পদায়ন এবং ৮ জন ডিপ্লোমা প্রকৌশলীকে পদোন্নতি দিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে স্বাক্ষর করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব আম্বিয়া সুলতানা।
ইইডি সূত্র বলছে, পদোন্নতি পাওয়া ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। যদিও নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির জন্য ৭ বছর সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করার বিধান রয়েছে।
কিন্তু ৫ বছর চাকরিকাল থাকা অবস্থায় তাকে পদোন্নতি দিয়ে মানিকগঞ্জে পদায়ন করা হয়েছে। এর বাইরে পদোন্নতি পাওয়া বাকি ৭ ডিপ্লোমা প্রকৌশলীর মধ্যে অন্তত ৪ জন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বঙ্গবন্ধু পরিষদের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. জাফর আলী শিকদারও পট পরিবর্তের পরও দাপটের সঙ্গে প্রধান কার্যালয় ঢাকায় দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত কর্মরত।
সূত্র আরও বলছে, আর বাকি যে ১৩ জন নির্বাহী প্রকৌশলীকে বদলি করে কম গুরুত্বপূর্ণ জেলায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের অনেকেই বিএনপি-জামায়াত মতাদর্শে বিশ্বাসী।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সাবেক প্রধান প্রকৌশলী বলেন, প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে মো. আলতাফ হোসেনের দায়িত্ব গ্রহণের এক মাসের কম সময়েও এত পদোন্নতি-পদায়ন ইইডির ইতিহাসে নজিরবিহীন। আর যারা পদোন্নতি ও ভালো জেলায় পদায়ন পেয়েছেন তারা বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগেী হিসেবে পরিচিত। দেখেশুনে মনে হচ্ছে এর পেছনে আওয়ামী লীগেরই কেউ কলকাঠি নাড়ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক অন্তত ১০ জন নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন চাঁদপুরে বাড়ি ‘হ’ অদ্যাক্ষরের সদ্য সাবেক এক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর ঘণিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। আর এই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ক্যাশিরার হিসেবে পরিচিত ছিল। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনিই মূলত ইইডির হর্তাকর্তা ছিলেন।
তারা আরও জানান, সাধারণত ‘বিশেষ উদ্দেশ্য’ ছাড়া দায়িত্বে গ্রহণের মাত্র ১ মাসের মাথায় কোনো প্রধান প্রকৌশলী এত বড়সংখ্যক নির্বাহী প্রকৌশলী পদোন্নতি-পদায়ন করেন না। এর পেছনে অন্য কোনো ‘অনৈতিক সুবিধা’ অথবা রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির বিষয়ও জড়িত থাকতে পারে।
এর আগে গত ২০ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতৃত্বে থাকা ও নানা অনিয়মের অভিযোগে প্রধান প্রকৌশলী (রুটিন দায়িত্ব) মো. রায়হান বাদশা, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আফরোজা বেগম, সমীর কুমার রজক দাসকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করে অফিস আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আর প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব দেওয়া হয় চট্টগ্রাম সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জালাল উদ্দিন চৌধুরী। এরপর জালাল উদ্দিন অবসরে গেলে গত ১৯ জানুয়ারি দায়িত্ব পান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন।
এ বিষয়ে ইইডির প্রধান প্রকৌশলী (রুটিন দায়িত্ব) মো. আলতাফ হোসেন বলেন, চাকরি বিধি অনুযায়ী সব নিয়ম মেনেই পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। আর এই পদোন্নতি, বদলি ও পদায়ন করা হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে।
আপনার মতামত লিখুন :