নারী দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো নারীর অধিকার, নিরাপত্তা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা। তবে যেখানে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি ও লিঙ্গবৈষম্য নিত্যদিনের বাস্তবতা, সেখানে এই দিবসের তাৎপর্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
নারী শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকেই এই দিবসের সূচনা হয়েছিল। কিন্তু আজও কর্মক্ষেত্রে নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, তারা পুরুষের তুলনায় কম মজুরি পাচ্ছেন, নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। শুধু কর্মক্ষেত্রেই নয়, ঘরেও নারীরা সহিংসতা, পারিবারিক নির্যাতন ও সামাজিক ট্যাবুর শিকার হচ্ছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন, হয়রানি উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে অপরাধীরা শাস্তি পাচ্ছে না, ফলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি আরও পোক্ত হচ্ছে। যদিও এসব ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও আন্দোলন হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের কার্যকর উদ্যোগ এখনো আশানুরূপ নয়।
৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়, কিন্তু আজকের দিনে এসে নারী শ্রমিকরা কি এই দিবসের প্রকৃত সুফল পাচ্ছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহসভাপতি জলি তালুকদার বলেন, “আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মূল ভিত্তি শ্রমজীবী নারীদের ভোটাধিকার, ন্যায্য মজুরি এবং ৮ ঘণ্টা কাজের অধিকার আদায়ের আন্দোলন। তবে বর্তমান বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তির নেতিবাচক প্রভাবে নারীদের অধিকার বারবার পদদলিত হচ্ছে। আমাদের দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হলো পোশাকশিল্পের নারী শ্রমিকরা, কিন্তু তাদের জীবনমানের উন্নতি খুবই সীমিত। এখনও তারা পুরুষদের তুলনায় কম মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।”
জলি তালুকদারের মতে, সমাজ, পরিবার ও ধর্মীয় অনুশাসনের ফলে নারীরা প্রতিনিয়ত নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের যে মূল চেতনা শ্রমজীবী নারী এবং সমগ্র নারী সমাজের জন্য কার্যকর হওয়ার কথা ছিল, বাস্তবে তার উল্টো চিত্রই দৃশ্যমান। নারীরা ঘরে-বাইরে সর্বত্র শোষণের শিকার হচ্ছেন, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের ঘটনা মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ছে। অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে, এবং সরকারও কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তবে, গণ-অভ্যুত্থানে নারীদের সাহসী অংশগ্রহণ পুঁজিবাদী পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বড় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে, যা পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
সম্প্রতি নারী নিপীড়ন, ধর্ষণ ও মোরাল পুলিশিংয়ের নামে হয়রানির ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করছেন, প্রতিবাদে মিছিল ও বিক্ষোভ হচ্ছে, এমনকি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিও উঠেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হয়েছে, কিন্তু এত প্রতিবাদ সত্ত্বেও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। গণ-অভ্যুত্থানে সক্রিয় থাকা অনেকে এতে হতাশ হয়ে পড়ছেন। অনেকের অভিযোগ, অন্তর্বর্তী সরকার প্রকাশ্যে নারী নিপীড়কদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, “নারীদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনা ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রাস সৃষ্টির জন্য ঘটানো হচ্ছে কিনা, তা আমাদের খতিয়ে দেখা দরকার। তবে সরকারের দায়িত্ব নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা এখনো তা সন্তোষজনকভাবে করতে পারছি না, তবে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।”
আপনার মতামত লিখুন :